দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষক ও চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি হাসপাতালে আসা রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এ হাসপাতালটি অবকাঠামোগত দিক দিয়ে ৫শ’ শয্যার হলেও কাগজে-কলমে এখন ১ হাজার শয্যার। ৫শ’ বেডের এ হাসপাতালের জন্য ২২৪ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ৯৯ জন। অর্থাৎ ১২৫ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য। তবে ১ হাজার বেডের হাসপাতাল হিসেবে এখানে ৩৪৯ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য। তাই শুধু রোগী নন, হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও।
প্রতিদিন গড়ে এ হাসপাতালে প্রায় ২ হাজার রোগী ভর্তি হন। যাদের জন্য চিকিৎসক সংখ্যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো ফল আসেনি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, হাসপাতালে সংকট রয়েছে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরও। নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫শ’ শয্যার জন্য ৮০৬ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৭৬৯ জন। ১ হাজার শয্যার হিসাব করতে গেলে নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৮৪৩টি পদ শূন্য। অপরদিকে হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির পদ ৫শ’ শয্যার জন্য ১২৪ জনের কথা থাকলেও রয়েছেন ৮২ জন। কাগজে-কলমে ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ১৬৬টি। পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের হিসাবে ৫শ’ শয্যায় ৪২৬টি পদ থাকলেও রয়েছে ৩০৯ জন, বাকি ১১৭টি পদ শূন্য।
১ হাজার শয্যার হাসপাতালের হিসাবে পদ খালি রয়েছে ৫৪৩টি। সব মিলিয়ে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে ৫শ’ শয্যার এ হাসপাতালে পদ শূন্য রয়েছে ৩২১টি এবং কাগজ-কলমে ১ হাজার শয্যার হিসাবে এ হাসপাতালে পদ খালি রয়েছে ১ হাজার ৯০১টি। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, চিকিৎসক সংকট দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো হলেও হাসপাতালে জনবল কাঠামো ৫শ’ শয্যারই রয়ে গেছে। আবার পুরোটাও পাওয়া যাচ্ছে না। একসঙ্গে শয্যা ও জনবল বাড়ানো হলে এ সমস্যা লাঘব হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজটি সেবা খাতে চিকিৎসক তৈরির কাজে ৫ দশক পার করেছে। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে কলেজটি স্থাপন করা হলেও এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। ওই সময় কলেজের ৫টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক পাঠদানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রাধান্য দিয়ে অর্গানোগ্রাম তৈরি হয়। কিন্তু মেডিকেল কলেজ শুরু থেকেই শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের রুটিন মাফিক ক্লাস নেয়া সম্ভব হয়নি। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১০টি বিভাগে ৭টি ক্যাটাগরিতে মোট ২০২ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। যে পদের অনুকূলে বর্তমানে হাসপাতালে ১০৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। ফলে মঞ্জুরিকৃত পদের অনুকূলে ৯৮টি পদ শূন্য। যার মধ্যে অধ্যাপকের ৩০টি পদের অনুকূলে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৭ জন, সহযোগী অধ্যাপকের ৪৬ পদের অনুকূলে রয়েছেন ১৬ জন, সহকারী অধ্যাপকের ৬৯ পদের অনুকূলে রয়েছেন ৩৯ জন, প্রভাষক ৪৭ পদের অনুকূলে রয়েছেন ৩৪ জন, মেডিকেল অফিসার ৬ পদের অনুকূলে রয়েছেন ৪ জন। এমনকি ডেন্টাল অনুষদের ১০টি পদের মধ্যে মাত্র ৩টি পদের অনুকূলে শিক্ষক রয়েছে। তবে কিউরেটরের ২টি ও প্যাথলজিস্টের ২টি পদে সমানসংখ্যক জনবল রয়েছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা শিক্ষক সংকট নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করে কোনো সাড়া পাননি। প্রফেসর পদমর্যাদার শিক্ষক দিয়ে মেডিকেল কলেজে পাঠদানের নিয়ম থাকলেও সেখানে লেকচারার দিয়ে পাঠদানে বাধ্য হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে করে মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মাকসেমুল হক জানান, কলেজে বর্তমানে ফরেনসিক, কমিউনিটি মেডিসিন, ফিজিওলজি, এনাটমি, নিউরোলজিতে শিক্ষক সংকট প্রকট। আর নেফ্রোলজিতে তো কোনো শিক্ষকই নেই। আমরা শিক্ষকের চাহিদার কথা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। এখন শুধু যোগাযোগ করতে পারি। তবে মন্ত্রণালয়ই পারে আমাদের কলেজের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে। তিনি বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নানা সমস্যা দেখা দিলেও পাঠদানে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমরা অন্য শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।