দেশে ৫ থেকে ১৬ বছরের শিশুদের ৩৪ শতাংশই কৃমি সংক্রমণ জনিত অসুখে ভোগে। ২০২১ সালের মধ্যে এ সংখ্যাটি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চায় সরকার। ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ শাখা ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের আওতায় এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ২৩তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। এই সাতদিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী প্রায় চারকোটি শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূল করার লক্ষ্যে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
দেশব্যাপী ক্ষুদে ডাক্তার টিমের মাধ্যমে কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালন করা হবে। চার কোটি শিশুকে একডোজ কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি কৃমির পুঃনসংক্রম রোধকল্পে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কেও সচেতন করে তোলা হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে কৃমির সংক্রমণ বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের মধ্যেই বেশি। তার মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী শিশু সাত শতাংশ, পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু ৩২ শতাংশ, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষ সাত শতাংশ, ৪৫ থেকে ৫৪ বছরের মানুষ পাঁচ শতাংশ ৫৫ থেকে তার বেশি বয়সী মানুষের চার শতাংশ কৃমি সংক্রমণে আক্রান্ত হয়।
কৃমি সংক্রমণ রোধে ২০০৭ সালে সরকার তিন জেলা দিয়ে একটি কার্যক্রমের শুরু করে। পর্যায়ক্রমে ওই বছরের জুন পর্যন্ত ১৬ জেলায় এ কার্যক্রম বিস্তৃত করা হয়। ওই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের মে পর্যন্ত ২৪ জেলায় আর একই বছরের নভেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলাকেই এই কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়। শুরুতে এ কার্যক্রম প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে সীমিত ছিল। পরে তা পাঁচ থেকে ১৬ বছরের সব শিশুকে কার্যক্রমের মধ্যে নিয়ে আসা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের এক লাখ ২০ হাজার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৩৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এই কর্মসূচীর আওতাভুক্ত।
এই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে শুরু হচ্ছে ২৩তম রাউন্ড কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। এবার ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৩২ হাজার ৮০৪ জন শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো হবে। শিশুদের মধ্যে ওষুধ সেবনের হার ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ শাখা ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যনেজার ডা. মোহাম্মদ জহিরুল করিম জানান, ২৩তম কৃমি সপ্তাহে চার কোটি শিশুকে কৃমিনাশক খাওয়ানো হবে। দেশের মোট শিশুর ৮৯ শতাংশ শিশু কৃমি সংক্রমনে আক্রান্ত ছিল। এই কার্যক্রমের কারণে এখন তা কমে ৮ শতাংশে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কৃমিমুক্ত করা।
জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় কৃমির বিষয়টি মানুষের কাছে সহজে পরিলক্ষিত হলেও অনেকটা উপেক্ষিত থেকে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এ বিষয়টি মোটেও হেলাফেলার নয়। কৃমি মানুষের পেটে পরজীবি হিসেবে বাস করে এবং খাবারের পুষ্টি খেয়ে ফেলে। যার কারণে শিশুরাই বেশিভাগ পুষ্টিহীনতায় ভুগে। কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে রক্ত শোষন করে ফলে শিশুরা রক্তশূণ্যতায় ভোগে। বদহজম ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। এমনকি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটায়। কৃমি অতিশয় সংক্রমণ মৃত্যুর কারণও হতে পারে।