আমতলী প্রতিনিধি।
আমন ক্ষেতের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন আমতলী উপজেলার কৃষকরা। দিন দিন এ পদ্ধতির জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ক্ষেতের পোকা দমনে ৭০ ভাগ কৃষকরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। জমিতে সার দেয়ার পর থেকেই আমন ক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো , চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকরা প্রাকৃতিক,সহজ, কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব ডেড ও জীবন্ত পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কমেছে কীটনাশকের ব্যবহার।
আমতলী কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ বছর আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। ধান উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ। ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে রোপা আমনের ক্ষেত রক্ষায় পার্চিং পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি প্রয়োগে ধান ক্ষেতে বালাইনাশক দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। একর প্রতি ক্ষেতে ৮/১০ টি বাঁশের কাঞ্চি ও বিভিন্ন গাছের ডাল পুতে দিতে হয়। এ পার্চিংয়ের (খুটি) উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলে। এতে জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়। ফলে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হয়।
বৃহস্পতিবার উপজেলার ঘটখালী, বৈঠাকাটা, মানিকঝুড়ি, কাউনিয়া ও আঠারোগাছিয়া এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কাঞ্চি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পার্চিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে। ধানক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে পাখিরা।
আমতলী উপজেলার চন্দ্রা গ্রামের দুলাল মোল্লা বলেন, দুই একর আমনের ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে আমার কোন খরচ নেই। বাড়ীর গাছ থেকে ২০ টি ডাল কেটে ক্ষেতে পুতে দিয়েছি। ওই ডালে বসে পাখিরা ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে। তিনি আরো বলেন, এতে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের সুরক্ষা পাচ্ছি।
চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে আমনের ক্ষেত রক্ষায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছি।
উপজেলার আঠারোগাছিয়া গ্রামের আলম হাওলাদার, ঘোপখালী গ্রামের সাইদুর রহমান ও দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, বিনা খরচে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় এটি একটি ভালো পদ্ধতি। আমরা ক্ষেতে বিভিন্ন গাছের ডাল পুতে দিয়েছি। ওই ডালে পাখি বসে পোকা খাচ্ছে।
আমতলী উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ আবু ছালেহ বলেন, পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে আমনের ক্ষেতে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না। উপজেলার সকল কৃষকের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আমতলী কৃষি অফিসার সিম রেজাউল করিম বলেন, উপজেলার সকল কৃষকদের পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। এ পদ্ধতিটি কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব। কৃষকরা কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতিতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমতলী উপজেলায় ৭০ ভাগ কৃষক এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে।