প্রধানমন্ত্রীর ‘তল্লাশি’ ঘোষণার পরপরই বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোয় তৎপরতা শুরু হয়েছে। হলের কক্ষ দখল করে মাদকসেবন, সাধারণ ছাত্রদের ওপর মানসিক নির্যাতনকারীরা এরই মধ্যে সটকে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, বরিশাল বিএম কলেজের বিভিন্ন কক্ষ দখল করে মাদকসেবন করে আসছে এক শ্রেণির বখাটে। একইভাবে বরিশাল পলিটকেনিক ইনস্টিটিউট, হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় বখাটের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। তাদের হাতে জিম্মি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে গেল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোয় কারা মাস্তানি করে বেড়ায় এবং কোথায় কোন ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কার্যকলাপ হয়Ñ তা খুঁজে বের করতে তল্লাশি চালানো হবে।’ অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নয়, কলেজের হোস্টেলেও তল্লাশি চলবে। সরকারের এমন কঠোর অবস্থানে বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। উচ্ছৃঙ্খলরা এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে।
বরিশালে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ বিএম কলেজের বিভিন্ন ছাত্রাবাস নিয়ে। জানা গেছে, কলেজের অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস (ডিগ্রি হল) ও সার্জেন্ট (অব.) ফজলুল হক ছাত্রাবাস (মুসলিম হল) নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের তিন নেতার হাতে। তারা হচ্ছেন মান্না, মুনিম ও অনিক। তাদের অনুসারীরা হলের কক্ষ দখল, মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ ছাত্রদের অভিযোগ, হলে মাদকসেবন অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। কিন্তু কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। হলে থাকতে হলে ‘ম’ এবং ‘অ’ ভাই’য়ের সুপারিশ দরকার হয়। কোনো কোনো কক্ষে তাসের মাধ্যমে জুয়াও চালায় বখাটেরা।
এসব প্রসঙ্গে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, তিনি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের রিপোর্ট দিতে বলেছেন। শিক্ষকদের নিয়েও বসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার কারণে হলে শৃঙ্খলা ফেরানো এখনই মোক্ষম সময়। তিনি বলেন, যিনি চাকরি করেন তিনি যদি হলে থাকেন, তাহলে শৃঙ্খলা থাকে না। হলগুলোয় মাদক, জুয়া, তাস, বহিরাগতের তৎপরতা দ্রুত বন্ধ করা হবে। এমনকি বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে অনেকেই পয়সা দেয় না, ফ্রি খায়।
বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের আলমগীর ছাত্রাবাসের ক্যাম্পাসে রাত নামলেই মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দখলে। এদের মধ্যে প্রায়ই সংঘাত ঘটে। এ সংঘাতের জেরে কয়েক বছর আগে ছাত্রলীগের এক নেতাকে প্রাণও দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পলিটেকনিকের প্রধান ছাত্রাবাসের একাধিক ছাত্র বলেন, হল চলে হাসিবুল হাসান শান্ত’র আধিপত্যে। যদিও ছাত্রলীগের এখানে কোনো কমিটি নেই, অনিয়মিত ছাত্র হয়েও ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে শান্ত হলের কক্ষ দখল করে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার অনুসারীরা রাতে মাদক সেবন করে। সাধারণ ছাত্ররা নানা কারণে জিম্মি। কর্মসূচি হলে বাধ্য করে যেতে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ছাত্রাবাসের সুপার ইউসুব আলী বলেন, ‘আমরা নোটিশ দিয়ে অনিয়মিত, বহিরাগতদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছি। শান্ত অনিয়মিত ছাত্র। শুনেছি সে একটি কক্ষে থাকে। কিন্তু তার থাকার অধিকার নেই।’ তারা ছাত্রাবাসে শুদ্ধি অভিযানের চিন্তা করছেন বলে জানান সুপার ইউসুব আলী। বরিশাল মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী বিশৃঙ্খলা করছে ক্যাম্পাসে। তাদের হাতে বিভিন্ন সময় মার খেতে হয় ছাত্রাবাসের সাধারণ ছাত্রদের। সম্প্রতি এক ছাত্রলীগ নামধারীর বিরুদ্ধে বাস কাউন্টারে হামলারও অভিযোগ ওঠে। এসব প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যঅলয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, বিশৃঙ্খলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ নয়। তবে হলের শৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রভোস্টের বিষয়। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাই করবে।