বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে হলে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলের তিনটি কক্ষ সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ও বহিরাগতদের হল ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার বিকেলে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ৩০১২ নম্বর কক্ষটি সিলগালা করে দেয়া হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল কক্ষটিতে থাকতেন।
এর আগে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জামি-উস সানির কক্ষ ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেলের অফিস কক্ষ সিলগালা করে দেয়া হয়।
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আহসান উল্লাহ হলের দুটি এবং শেরেবাংলা হলে একটি কক্ষ সিলগালা করেছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অবৈধ ও বহিরাগতরা হল ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুত নিচ্ছে। যারা এখনও যায়নি সন্ধ্যার পর আবারও তাদের হল ছেড়ে চলে যেতে বলা হবে। আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের হল ছেড়ে চলে যেতে হবে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে বুয়েটের হলে হলে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বুয়েট প্রশাসন থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারির পর এ অভিযান শুরু হয় বলে জানা গেছে।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটের আবাসিক হলে অবৈধভাবে থাকা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগ এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত নোটিশও জারি করা হয়। বুয়েট কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষরিত পৃথক পাঁচটি আদেশ শনিবার দুপুরে প্রকাশ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো- আবরার হত্যাকারীদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে- এ মর্মে নোটিশ দেয়া, সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য অবৈধ ছাত্রদের সিট বাতিল করা, সাংগঠনিক অফিস সিলগালা করা, ফাহাদের মামলার খরচ দেয়ার নোটিশ দেয়া ও ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত এবং এ ধরনের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সব হলের সিসিটিভির ফুটেজে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা।
এদিকে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। চলমান আন্দোলনের জন্য যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছিল ভর্তি পরীক্ষার কারণে সেই আন্দোলন শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তারা এ ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল থাকবে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন। গতকাল শুক্রবার বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি সে সময় ঘোষণা দেন, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি থাকবে না। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন তিনি।
এছাড়া আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন, বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়াসহ বুয়েটে র্যাগিং বন্ধের ঘোষণা দেন উপাচার্য।