বরিশালে ম্যাজিষ্ট্রেটের বিকল গাড়ি মেরামতে মিস্ত্রি না পাঠানোয় গ্যারেজের বিদ্যুতের লাইন কেটে তারসহ মিটার নিয়ে গেছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবিরাম ধর্মঘট শুরু করার ঘোষনা দিয়েছে বরিশাল নগরীর গাড়ী মেরামতের সকল গ্যারেজ ওয়ার্কসপসমূহ।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবী, ওই গ্যারেজে মিটার বাইপাস করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটছিল। যে কারনে তারসহ মিটার খুলে আনা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, যে গ্যারেজে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভাগের সবগুলো গাড়ির মেরামতের কাজ চলে সেখানে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি কেবল গতকালই কেন ধরা পড়লো ? তাছাড়া ম্যাজিষ্ট্রেট’র গাড়ি বিকল হওয়া আর মিস্ত্রি না পাঠানোর মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যেই বা কেন এভাবে প্রশ্ন বিদ্ধ অভিযান চালালো বিদ্যুৎ বিভাগ ? যদিও এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ।
বরিশাল ওয়ার্কসপ মালিক সমিতির সভাপতি নির্মল চন্দ্র দাস জানান, বুধবার দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান’র গাড়ি চালক সোহেল আমায় ফোন দিয়ে জানান যে পটুয়াখালী শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ম্যাজিষ্ট্রেট’র গাড়ি বিকল হয়েছে। সে বরিশাল থেকে একজন মিস্ত্রি পাঠাতে বলে। পূজা’র ছুটি শেষে সকল মিস্ত্রি না আসায় এবং বরিশাল থেকে ঘটনাস্থল প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় মিস্ত্রি পাঠানো যাবেনা বলে জানাই আমি। এর ২৫/৩০ মিনিট পরেই বিদ্যুৎ অফিস থেকে একজন সহকারী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে কয়েকজন এসে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার গ্যারেজের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে তারসহ দুটি মিটার কেটে নিয়ে যায়। আমি জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের সাথে দেখা করতে।’
নির্মল চন্দ্র দাস আরো বলেন, ‘আমার গ্যারেজে বহু বছর ধরে বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ি মেরামতে কাজ চলে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখানে প্রতিনিয়ত-ই আসেন। এতোবছরেও তারা কেউ দেখলেন না বিদ্যুৎ চুরি আর আজই সেটা ধরা পড়লো ? প্রতি মাসে মিটার রিডার এসে মিটারের রিডিং নিয়ে যায়। তার চোখেও কিছু ধরা পড়লো না ? মিস্ত্রি পাঠাইনি বলে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব তার ক্ষমতা দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছেন। যারা লাইন কাটতে আসলো তারা পর্যন্ত বলতে পারেনি যে কি কারনে লাইন কাটা হচ্ছে।’
বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জুয়েল রানা বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে সেখানে গিয়ে লাইন কেটে তার এবং মিটার নিয়ে এসেছি।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসাইন’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবী করেন যে ওই গ্যারেজে মিটার বাইপাস করে বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছিল। যে কারনে তারসহ মিটার খুলে আনা হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেট’র সাথে কি হয়েছে বা না হয়েছে তা আমার জানা নেই। আজ সকালে মিটার বাইপাস করার বিষয়টি ধরা পড়ার পর লাইন কেটে তার ও মিটার আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে বিদ্যুতের ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান’র মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনরকম সাড়া মেলেনি তার কাছ থেকে।’
বরিশাল গ্যারেজ এবং ওয়ার্কসপ মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যাবহারের এমন নমুনা এর আগে আর কখনো দেখিনি আমরা। পটুয়াখালী শহরে অনেক গ্যারেজ আছে। কিন্তু তারপরও ৫০ কিলোমিটার দুরের বরিশাল থেকে গাড়ি মেরামতে মিস্ত্রি না পাঠানোয় এভাবে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া সম্পুর্ন বে আইনী।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল নগরীর সকল গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ এবং সবধরনের ওয়ার্কসপ বন্ধ থাকবে। তাছাড়া বৃহস্পতিবার আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদে অশ্বিনী কুমার হল’র সামনে মানববন্ধন করবো। সেই সাথে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে স্মারকলিপি দেব। এই অন্যায়ের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।’