অভিনয়ের ভুল সংশোধনের নামে তাকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে। নাট্যব্যক্তিত্ব তথা সাবেক অধ্যাপক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছেন তারই এক ছাত্রী। সুদীপ্তর নাটকের দল ‘স্পেক্ট্যাক্টরস’-এ নিয়মিত অভিনয় করতেন ওই তরুণী।
বুধবার রাতে পুরো ঘটনা’র বিবরণ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ওই তরুণী। ইতোমধ্যেই হাজারেরও বেশি বার শেয়ার হয়েছে ওই পোস্ট। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মিডিয়া সায়েন্স’-এর ‘পারফরম্যান্স অ্যান্ড মিডিয়া’ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন সুদীপ্ত। তার বাড়িতেই হতো দলের যাবতীয় রিহার্সাল।
তরুণীর অভিযোগ, তাকে সুদীপ্ত ডেকেছিলেন মহড়ার নামেই। কিন্তু সে সময় দলের অন্য কোনো সদস্য সেখানে ছিলেন না। এমনকি, বাড়িতে ছিলেন না সুদীপ্তর স্ত্রী-ও। তরুণী বাড়িতে পৌঁছনোর পরে কোনো কাজে তিনি বেরিয়ে যান। বাড়িতে ছিলেন সুদীপ্ত এবং পরিচারক। সে রকম একটি পরিস্থিতিতেই সুদীপ্ত শুরু করেন ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’।
তরুণীর অভিযোগ, অভিনয় শেখানোর নামে প্রথমে তার শ্লীলতাহানি এবং পরে ধর্ষণ করেন সুদীপ্ত। এবং সেই অবস্থায় তাকে জোরে, আরও জোরে সংলাপ বলতে বলেন সুদীপ্ত। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন ওই তরুণী।
যদিও ওই পোস্ট সর্বৈব তথ্যবিকৃতি বলে দাবি সুদীপ্তর। এই নাট্যব্যক্তিত্বের বক্তব্য, স্টেজ শো হওয়ার পরে তার মনে হয়, নামভূমিকায় অভিনয়কারী ওই তরুণীর অভিনয়ে খামতি ছিল। তাই ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’ প্রয়োজন অভিনয় তথা থিয়েটারের স্বার্থেই। এবং তিনি নন, ওই তরুণীই তার কাছে অনুরোধ করেছিলেন ত্রুটি সংশোধনের, দাবি সুদীপ্তর।
আনন্দবাজার ডিজিটালকে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ওই ছাত্রীকে তিনি ধর্ষণ করেননি। বরং ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’ বা ডায়াফ্রাম ব্রিদিং এক্সারসাইজ-এর অনুশীলনীর অংশ হিসেবে যেটুকু আংশিক নগ্নতা বা পার্শিয়াল নুডিটি এসেছে, শরীরি স্পর্শ হয়েছে, তা সম্পূর্ণটাই ঘটেছে তরুণীর সম্মতিক্রমে। সেখানে সুদীপ্তর তরফে যৌনতা বা অশালীনতার কোনো চিহ্নই ছিল না। তিনি ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক করাবেন, এটা জেনেই তরুণী তার বাড়িতে সে দিন এসেছিলেন, দাবি সুদীপ্তর। এমনকি, ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’ কী, সে বিষয়েও তিনি তরুণীকে আগেই বিশদে জানিয়েও ছিলেন।
সুদীপ্তবাবুর অভিমত, অভিনয় প্রশিক্ষণের অন্যতম অঙ্গ ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’। তিনি নিজেও এ ভাবে অভিনয় শিখেছেন। তার সমসাময়িক আর কেউ এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন কি না, তিনি জানেন না। কিন্তু তিনি মনে করেন এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। কারণ, এর ফলে স্বরক্ষেপণ নিখুঁত হয়। বিদেশে থাকাকালীন তিনি এই পদ্ধতি বহু ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হতে দেখেছেন। সেখানে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বলে তার দাবি।
সুদীপ্তর কথায়, আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠায় আমি হতবাক। কারণ, অনেক দিন ধরে প্রয়োজনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলেও এই প্রথম আমার বিরুদ্ধে কেউ এ ধরনের বিকৃত ও মিথ্যা অভিযোগ আনলেন।’
তবে, অভিযোগকারিণীর অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তার দাবি, তিনি একা নন। আরও অনেকেই সুদীপ্তর উপর এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ। তারা সম্মিলিত ভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন। কিন্তু কবে তারা পুলিশের দ্বারস্থ হবেন, সে নিয়ে এই মুহূর্তে মুখ খুলতে নারাজ তিনি।