• ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আবারও ভাঙছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ণ
দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আবারও ভাঙছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, সুবিধাবাদ ও ক্ষমতা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আবারও ভাঙছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। জানা গেছে, দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। সোচ্চার হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। তাদের কাছে ভাঙনের বার্তা দিচ্ছেন দলটির পলিটব্যুরোর প্রভাবশালী নেতা বিমল বিশ্বাস। আসছে ২ নভেম্বর চার দিনব্যাপী দশম কংগ্রেস ঘিরে এ ভাঙন দৃশ্যমান হয়েছে দুই পক্ষের পৃথক রাজনৈতিক দলিলে।

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস বলেন, ‘সত্য কথা বলতে গেলে পার্টিতে আদর্শগত বিভাজন হঠাৎ করে হয়নি। আমি সদস্যপদ মৌখিকভাবে প্রত্যাহার করেছি। আজ লিখিত দেব। কারণ, মেননরা যা বলেন, আমরা তা সঠিক মনে করি না। আদর্শবাদী পার্টিতে এভাবে কংগ্রেস হয় না। নেতা-কর্মীদের চাপে বিপদে আছি। তাদের সংগঠিত হতে বলেছি।’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে ক্ষমতার স্বাদ নেওয়া ওয়ার্কার্স পার্টিতে অস্থিরতা এখন চরমে। দলের ভিতরে বাড়ছে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি। মতানৈক্য, কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে, যা ছড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলায়। হতাশ ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। কেউ যাচ্ছেন অন্য বাম দলে।

জানা গেছে, পার্টিতে গণহারে সদস্যপদ প্রদান নিয়ে সারা দেশে নেতা-কর্মীর মাঝে ক্ষোভ আছে। কংগ্রেস ঘিরে সদস্যপদ প্রদানের ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগ জোরেশোরে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, পিরোজপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, মাদারীপুরে গণহারে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন সরকারের সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী ‘ক্যাসিনো’ অভিযানে। আজীবন আদর্শের রাজনীতিতে বলিয়ান বামপন্থি মেননের ডানপন্থি কারবারগুলো প্রথম আলোচনায় আসে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে। আর নিজ দলে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন নারী সদস্যদের বঞ্চিত ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে পার্টি সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রী লুৎফুন নেছা খান বিউটিকে সংরক্ষিত কোটায় এমপি বানিয়ে। দলটির একাধিক সূত্র জানায়, একটি ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে কংগ্রেস হতে যাচ্ছে। প্রতি চার বছর পর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হিসেবে কংগ্রেস (সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। এ কংগ্রেসে সভাপতি হতে চান দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এ নিয়েও শীতল যুদ্ধ চলছে মেনন ও বাদশার মধ্যে।

বাদশাপন্থিরা বলছেন, বাদশা সভাপতি হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে পার্টি। এ প্রসঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কংগ্রেসে চমক আছে। কংগ্রেস আমাকে সভাপতি কিংবা সাধারণ সদস্য যা-ই করুক, সবকিছু হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।’ ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘পার্টি এগিয়ে নিতে আমরা ভিন্নমতের দলিল দিয়েছি। পার্টিতে সুবিধাবাদসংক্রান্ত সমস্যা আছে। ক্ষমতা ও ১৪ দলে থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক আছে। এসব ইস্যুতে পার্টিতে তুমুল আলোচনা চলছে। আমরা যেহেতু গণতান্ত্রিক-কেন্দ্রিকতায় আস্থা রাখি, তাই কংগ্রেসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’