বেলায়েত হাসান বাবলু \ স্মার্ট সিটি গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার প্রথম বর্ষপূর্তিতে নগর সেবক, নির্লোভ প্রিয় মানুষ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার কর্ম পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একই বছরের ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহন করেন। সংখ্যার হিসেব অনুযায়ী আজ মেয়র হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ৩৬৫ দিন অর্থাৎ এক বছর পূর্ন করলেন। নগর পিতা নয়, সেবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রথমেই তিনি দৃষ্টি দিলেন নগর ভবনের দিকে। তিনি বিশ্বাস করেন নগর ভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে যদি দায়িত্ববোধ, কর্তব্য ও জবাবদিহীতার জায়গা তৈরী কো যায় তাহলে নগরবাসী তাদের প্রাপ্য সেবাটুকু থেকে বঞ্চিত হবেন না। তাইতো শুরুতেই তিনি তাঁর প্রিয় নগর ভবনকে ঢেলে সাজাতে শুরু করলেন। অবকাঠামোগত পরিবর্তন নয়। মেয়র মনে করলেন তাঁর সহযোদ্ধা অর্থাৎ কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যদি মানষিকতার পরিবর্তন করা যায় আর দাবি করার আগেই যদি তাদের আশা গুলো পূরন করা যায় তাহলে এদের নিয়েই নগরবাসীর সেবা করা সম্ভব। যেই ভাবা সেই কাজ। মেয়র শুরু করলেন শুদ্ধি অভিযান। এ অভিযানে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির স্টাফরা পড়ে গেলেন বিপদে। পূর্বে প্রভাব খাটিয়ে আর দলীয় আনুগত্য নিয়ে যারা নামকাওয়াস্তের পদোন্নতি নিয়েছিলেন তাদের ফিরতে হলো তাদের মূল পদে। দীর্ঘদিন ধরে অঘোষিতভাবে চলা আলিস্যা ভাতা বন্ধ হয়ে গেলো। মেয়র সকল স্টাফদের বেতন তাদের নিজ নিজ একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধের উদ্যোগ নিলেন। যারা রাতের ঘুম ও আরামকে হারাম করে এই নগরকে পরিস্কার করেন সেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা দাবি করার আগেই মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ হঠাৎ করে তাদের বেতন একলাফে তিন হাজার বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা থেকে করে দিলেন ৯ হাজার টাকা। খুশীতে মাতোয়ারা এসকল পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এখন মনের আনন্দে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন আর মেয়র বন্দনা করছেন। আগে নিয়মিত বেতন না পাওয়ার কারনে এই নগরীর অনেক বাড়ীওয়ালা সিটি স্টাফদের ঘড় ভাড়া দিতেন না। মুদি দোকানী বাকি দিতে চাইতেন না। কিন্তু কর্মকর্তা কর্মচারী বান্ধব মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহন করে এখন পর্যন্ত স্টাফদের বেতন নিয়মিতভাবে পরিশোধ করে যাচ্ছেন। আন্দোলন করে যাদের বেতন নিতো এখন তারা মাস শেষ হওয়ার পরপরই হাসিমুখে ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন করছেন। দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পাওয়াটাকেই ভাগ্য বলে মনে করতেন। বোনাস পাওয়ার বিষয়টি স্বপ্নেও দেখতেন না। কিন্তু সেই শ্রমিকরা এখন যেমন বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন তেমনি বেতনের অর্ধেক হিসেবে বোনাসও পাচ্ছেন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে নগর ভবনে কর্মরত দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিসিসির কোন স্টাফ অবসর নেয়ার পর তার জীবদ্দশায় সকল বকেয়া নিতে পেরেছেন বলে কোন নজির আগে খুজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মৃত্যুর পরেও তার ন্যায্য পাওনা পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। কিন্তু মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এব্যাপারে রের্কড গড়েছেন। একদিনে ৪২ জন স্টাফের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করে তিনি যে নজির গড়েছেন তা ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিসিসির সকল স্টাফ মেয়রের আমন্ত্রনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে একত্রে বসে কোনদিন ইফতার করার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে আমার জানা নাই। গত রমজানে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ আমাদেরকে সেই সুযোগটাও করে দিয়েছেন। এই মেয়রের মাত্র এক বছরের দায়িত্ব পালন কালিন সময়ে বিসিসির কতোজন স্টাফ যে চিকিৎসা ও মৃত্যুর পর বড় অংকের আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন তার হিসাব মেলানো দুস্কর। পোষ্য কোঠায় কতোজন যে চাকুরী পেয়েছেন তাও গুনে শেষ করা যাবেনা। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাদিক আবদুল্লাহ নগর ভবনে যে পরিবর্তনের হাওয়া লাগিয়েছেন তাতে সকল স্টাফরা যে একটু একটু করে তাদের পূর্বকার বদাভ্যাস পাল্টাতে শুরু করেছেন। এখন ঘড়ির কাটা ৯টায় পৌছলেই কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছোটেন নগর ভবনে। সাদিক আবদুল্লাহর বসানো মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সকলে লেগে পড়েন নিজ নিজ কাজে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবার কখনো তারপরেও কাজ করে পুনরায় আধুনিক হাজিরা মেশিনে হাতের ছাপ রেখে গন্তব্যস্থলে যান সকলে। টুপাইস দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর দিন এখন অনেকাংশে শেষ হয়ে গেছে। সকল স্টাফরা এটা ভালো করে বুঝে গেছেন তাদের মেয়র দূর্নীতি করেন না এবং দূর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেন না। তাই অপকর্ম করে কোন পার পাওয়া যাবেনা। এই উপলদ্ধি থেকেই বিসিসির বেশীরভাগ স্টাফ এখন অনেকটাই সৎ জীবনযাপন করছেন। তাদের ভাষ্যমতে নিয়মিত বেতন, বোনাস পাচ্ছি। বেতনের সাথে সাথে প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকাও ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। শ্রান্তি বিনোদনসহ অন্যান্য সুবিধাদিও পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার আগেই। তাই আমরা এখন পূূবের অপকর্ম থেকে সরে এসেছি। নিন্দুকরাও অকপটে স্বীকার করছেন এখন আর কারো রক্ত চাহনি সহ্য করে কাজ করতে হয়না। ফিল্ডে কাজ করতে গিয়ে কোন স্টাফকে আর বাঁধার সম্মুখিন বা মারধরের শিকার হতে হয়না। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বলিষ্ট নেতৃত্বে নগরবাসী এখন আগের চেয়ে বেশী আগ্রহী হয়ে কর পরিশোধ করেছেন। গত মাসে বিসিসির ইতিহাসের সর্বোচ্চ কর আদায় হয়েছে। এখন ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকরা কর সহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করছেন। আগে যেখানে মালামাল ক্রোকের ভয় দেখিয়েও যা সম্ভব হতোনা। এখন আর সেবা নিতে গিয়ে গ্রাহক দিনের পর দিন হয়রানীর স্বীকার হতে হয়না। এখন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ আর সিনিয়র সিটিজেনরা নগর ভবনের ১০২ নম্বর রুমে গিয়ে যাবতীয় সেবা গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের আর এক রুম থেকে অন্য রুমে ছোটাছুটি করতে হয়না। গ্রাহকদের সুবিধার্থে কমিয়ে দেয়া হয়েছে গভীর নলকূপ বসানোর কাজের জন্য পূর্বেকার অর্থের পরিমান। যে সকল পরিবারে অসুস্থ রোগী আছেন, যাদের ঘড়ে প্রতিবন্ধী আছেন এবং যাদের বাড়ীর ছাদে বাগান আছে সেই সকল গ্রাহকরা হোল্ডিং করের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন। আর এ কাজের অংশীদার হতে পেরে কর্পোরেশনের স্টাফরা নিজেদের ধন্য মনে করছেন। আজ দুষ্ট প্রকৃতির কতিপয় অসাধু স্টাফ তাদের কৃতকর্মের জন্য
সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকলেও বাকীরা সবাই মহানন্দে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। আজ মেয়র যেমন অসাধু স্টাফদের বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য রাখছেন আবার ভালকাজের প্রশংসা করছেন। আজ আমাদের উচিত হবে সম্মিলিতভাবে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পাশে থেকে তাঁর সকল ভাল কাজের অংশীদার হওয়া। মেয়র এক সভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ব্যাপক প্রশংসা করে বলেছিলেন, তারা সকলে এক একজন সাদিক আবদুল্লাহ হয়ে কাজ করছেন। আজ মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর বর্তমান কর্ম পরিষদের দায়িত্ব গ্রহনের ১ম বর্ষ পূর্তিতে আমাদের সকলের শপথ হোক একটি সুন্দর আগামীর বরিশাল গড়তে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবো। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর স্বপ্নের স্মার্ট সিটি বাস্তবে রুপ লাভ করবে।