• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাকিবকে কী বলেছিল জুয়াড়িরা

report71
প্রকাশিত অক্টোবর ৩০, ২০১৯, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
সাকিবকে কী বলেছিল জুয়াড়িরা

আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জুয়াড়ি আগারওয়ালের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের লম্বা সময়ের যোগাযোগের চিত্র। হোয়াটসঅ্যাপে সাকিব আর আগারওয়ালের যোগাযোগ চলেছে প্রায় ছয় মাস। আইসিসির তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা তুলে ধরা হলো কালের কণ্ঠ’র পাঠকের জন্য।

নেপথ্যের ঘটনার সারাংশ

২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি এবং ২৭ আগস্ট, বাংলাদেশে সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ এসিইউ। এই জিজ্ঞাসাবাদে তাঁকে সন্দেহভাজন দীপক আগারওয়ালের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাকিবের দেওয়া উত্তর কিংবা দেওয়া তথ্য তাঁর বিপক্ষেও যেতে পারে, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলেও সাকিবকে সতর্ক করা হয়। সাকিব আল হাসান স্বীকার করেন সন্দেহভাজন দীপক আগারওয়ালের কাছ থেকে পাওয়া একাধিক প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে তিনি সময়মতো অবহিত করেননি।

জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান, তিনি আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবগত ছিলেন এবং নিয়মভঙ্গের শাস্তির ব্যাপারে জানতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত করেন—

২০১৭ সালের নভেম্বরের ৪ থেকে ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলার সময় সাকিব আল হাসানের ফোন নম্বরটি দীপক আগারওয়ালের কাছে দিয়েছিলেন এমন একজন, যাঁকে সাকিব আল হাসানও চেনেন। সেই ব্যক্তির কাছে আগারওয়াল বিপিএলে খেলা আরো অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় খুঁজেছিলেন।

২. নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়, আগারওয়ালের চাপাচাপিতে সাকিবের সঙ্গে আগারওয়ালের হোয়াটসঅ্যাপে অনেক বার্তা আদান-প্রদান হয়। যেটাতে আগারওয়াল সাকিবের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান।

৩. জানুয়ারি ২০১৮-তে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজের সময় তাঁদের মধ্যে আরো অনেকগুলো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা আদান-প্রদান হয়।

৪. ১৯ জানুয়ারিতে, সাকিব আগারওয়ালের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা পান, সেদিনের ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়ার জন্য। বার্তালাপের একপর্যায়ে আগারওয়াল বলেন, “আমরা কি এইবারেই ‘কাজ’টা করব নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?”

৫. এখানে ‘কাজ’ বলতে সাকিব দলের অভ্যন্তরীণ খবর আগারওয়ালকে পাঠাবেন বলে বোঝানো হয়েছে।

৬. সাকিব এই ঘটনা আইসিসির বা অন্য কোনো সংস্থার দুর্নীতি দমন বিভাগকে অবহিত করেননি।

৭. ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ সালে আবার আগারওয়াল সাকিবকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠান, যাতে লেখা ছিল ‘ভাই, এই সিরিজে কি কিছু হবে?’

৮. সাকিব নিশ্চিত করেছেন, এই বার্তার মানে হচ্ছে সে সময় চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে দলের অভ্যন্তরীণ খবর আগারওয়ালকে দেওয়ার জন্য আগারওয়ালের পক্ষ থেকে অনুরোধ।

৯. আগারওয়ালের দলের অভ্যন্তরীণ খবর জানার এই প্রচেষ্টার কথাও সাকিব আইসিসি বা অন্য কোনো সংস্থার দুর্নীতি দমন বিভাগকে জানাননি।

১০. ২৬ এপ্রিল ২০১৮ সালে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে একটি ম্যাচে খেলেন সাকিব।

১১. সেই তারিখেই আগারওয়াল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাকিবের কাছ থেকে একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় সেই ম্যাচে খেলছেন কি না, সেটা জানতে চান। যা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়ার একটি উদাহরণ।

১২. আগারওয়াল সাকিবের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তালাপ চালিয়ে যান। তাঁদের বার্তালাপে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিট কয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট এসব নিয়ে কথা বলেন এবং একপর্যায়ে সাকিবের কাছে তাঁর ডলার অ্যাকাউন্ট আছে কি না, সেটা জানতে চান আগারওয়াল। সাকিব জানান, তিনি ‘আগে’ দেখা করতে চান।

১৩. ২৬ এপ্রিলের বার্তালাপে আরো অনেক কিছু ছিল, যেসব মেসেজ সাকিব মুছে ফেলেন। সাকিব পরে নিশ্চিত করেছেন, সেই সব মেসেজে আগারওয়ালের কাছ থেকে দলের অভ্যন্তরীণ তথ্যের জন্য অনুরোধ ছিল।

১৪. সাকিব নিশ্চিত করেন, আগারওয়ালকে নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ কাজ করছিল। তাঁকে ঠিক সুবিধার মানুষ মনে হচ্ছিল না। এই সব বার্তালাপের পর সাকিবের মনে হয়েছিল, আগারওয়াল একজন ক্রিকেট জুয়াড়ি।

১৫. ২৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ক্রিকেট জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার এবং যোগাযোগের বিষয়টি এসিইউ বা অন্য কোনো দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার কাছে জানাননি।

১৬. সাকিব জানিয়েছেন, তিনি আগারওয়ালের কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বা তাঁর কথামতো কোনো কাজ করেননি। বিশেষ করে, সাকিব আগারওয়ালের চাহিদামতো কোনো তথ্যই তাঁকে প্রদান করেননি। আগারওয়ালের কাছ থেকে কোনো রকম অর্থ বা পুরস্কারও সাকিব গ্রহণ করেননি। একই সময়ে, তিনি আগারওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগের কথা কোনো দুর্নীতি দমন সংস্থাকেও অবহিত করেননি।

শাস্তির প্রকৃতি

১. সাকিব আল হাসান ঘটনা স্বীকার করার পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি অনুচ্ছেদ ১১ মোতাবেক সাকিবের বিরুদ্ধে জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েও আইসিসিকে না জানানোর তিনটি আলাদা ঘটনার অভিযোগ আনে। তিনটি ঘটনার তারিখ হচ্ছে, ১৯ জানুয়ারি, ২৩ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল ২০১৮।

২. ২৯ অক্টোবর, দুই পক্ষের লেটার অব অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন যে তিনি তিনবার ধারা ২.৪.৪ ভঙ্গ করেছেন। সাকিব অপরাধ স্বীকার করায় শুনানির প্রয়োজন হয়নি।

৩. সাকিব শাস্তি মেনে নিয়েছেন। ধারা ৭.২ অনুসারে এই রায়ের বিরুদ্ধে সাকিব বা আইসিসির আপিলের সুযোগ নেই।

যে কারণে সর্বোচ্চ শাস্তি নয়

১. তদন্ত চলাকালীন সাকিবের সহযোগিতা ও স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি।

২. অভিযোগনামা পাওয়ামাত্রই অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া।

৩. সাকিবের অনুতপ্ত হওয়া ও হতাশা।

৪. অতীতের ভালো শৃঙ্খলা।

৫. সাকিবের কৃতকর্ম ম্যাচের ফল বা জনস্বার্থ কিংবা বাণিজ্যিক মূল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রভাবিত করেনি।