• ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার দিনাজপুরের ডিসির অনৈতিক সম্পর্কের কথা ফাঁস

report71
প্রকাশিত অক্টোবর ৩১, ২০১৯, ১৪:২১ অপরাহ্ণ
এবার দিনাজপুরের ডিসির অনৈতিক সম্পর্কের কথা ফাঁস

এবার দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন এক নারী। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় ডিসির সঙ্গে নিজের অনৈতিক সম্পর্কের তথ্য ফাঁস করেন ওই নারী নিজেই। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ভিডিওটি।

ভিডিও বার্তায় ওই নারী বলেন, নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন ডিসি মাহমুদুল আলম। তার সেই ফাঁদে পা দিয়ে ভেঙেছে আমার সংসার।

ওই নারী আরও দাবি করেন, জামালপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন দিনাজপুরের ডিসি মাহমুদুল আলম। ঘটনা জানাজানি হলে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

ভিডিওতে তিনি আরও বলেছেন, ডিসি মাহমুদুল আলম বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিতে আমার সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরই মধ্যে জামালপুরের ডিসির সঙ্গে এক নারীর ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে দিনাজপুরের ডিসি মাহমুদুল আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে তার সঙ্গে আমার ভিডিও কল রেকর্ড, মোবাইল কল রেকর্ডসহ যাবতীয় তথ্যাদি মুছে দিতে বলেন ডিসি মাহমুদুল। সেই সঙ্গে বিষয়গুলো কাউকে না জানাতে বলেন তিনি। এরপর আমাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ওই নারী আরও বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। চাকরি থেকে বহিষ্কারের পর এসব বিষয় কাউকে জানালে আমাকে রাজাকারের সন্তান বানিয়ে দেয়ার হুমকি দেন ডিসি মাহমুদুল। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারে তাই এই ভিডিও করে রেখেছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্যাতিত ওই নারী স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলার পর দিনাজপুরে তোলপাড় শুরু হয়।

অভিযোগকারী ওই নারী বর্তমানে দিনাজপুরে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে পরিবার। কথা বলতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি পরিবারের কেউ। লোকলজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছে ওই নারীর পরিবার।

এদিকে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারীর সঙ্গে ডিসির এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে ডিসি মাহমুদুল আলমের অপসারণ চেয়েছেন তারা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আগে থেকেই ডিসি মাহমুদুল আলমের আচরণ ভালো নয়। এখন জানলাম তার চরিত্রও ভালো নয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারীর সঙ্গে ডিসির এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা লজ্জিত এবং মর্মাহত। এর আগে ডিসি মাহমুদুল আলমের আচরণে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন দিনাজপুরের সদর উপজেলার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগবাড়ী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন। এখন আরেক মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের সঙ্গে এমন কাজ করলেন ডিসি। এরপর কোনোভাবেই আমরা আর এই ডিসিকে চাই না। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোজাহার বলেন, ডিসি মাহমুদুল আলম একজন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছেন। যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এজন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি। আমরা যুদ্ধ করে এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি যে আজ আমাদের সন্তানদের এমন অবস্থা দেখতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সঙ্গে ডিসি এমন কাজ করে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করেছে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ দিনাজপুর শাখার সভাপতি সহদেব চন্দ্র রায় বলেন, ডিসি মাহমুদুল আলম মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্যক্তি নন। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধ থাকলে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের দিকে কুনজর দিতেন না ডিসি মাহমুদুল। এমন ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করেছেন ডিসি। তাই ডিসি মাহমুদুল আলমকে দ্রুত দিনাজপুর থেকে অপসারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে।

তবে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলম বলেছেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতনরা তদন্ত করতে গেছেন, তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিসের এক সূত্রে জানা যায়, ডিসির সঙ্গে ওই নারীর অনৈতিক সম্পর্কের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছে কমিটি।

এর আগে ডিসি মাহমুদুল আলমের আচরণে দুঃখ পেয়ে ২৩ অক্টোবর বেলা ১১টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনকে দাফন করা হয়।

মৃত্যুর আগের দিন ২২ অক্টোবর নিজের লেখা চিঠিটিতে স্বাক্ষর করে ডাকযোগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের কাছে পাঠান মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল।

মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন, ‘ঠুনকো অজুহাতে আমার ছেলেটিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করো। আমার বয়স প্রায় ৮০ বছরের কাছাকাছি। ছেলেটি হঠাৎ চাকরিচ্যুত হওয়ায় একে তো আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ তারপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না।’

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ডিসিকে প্রত্যাহার করা না হলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নেবেন নাসহ ১১ দফা দাবি দিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

গত আগস্ট মাসে জামালপুরের ডিসির একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে ডিসি আহমেদ কবীরের সঙ্গে তার অফিসের এক নারী কর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। ওই ঘটনায় জামালপুরসহ সারাদেশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে গত ২৫ আগস্ট আহমেদ কবীরকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।