• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ জন্মদিন বাকের ভাই

report71
প্রকাশিত অক্টোবর ৩১, ২০১৯, ১৪:০৮ অপরাহ্ণ
শুভ জন্মদিন বাকের ভাই

দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শ্রদ্ধেয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। নাটকে অভিনয় করে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তার। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তবে বিগত এক দশক তিনি অভিনয়ে নিয়মিত নন। রাজনীতিতে সরব হয়ে অভিনয়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

তবে আবারও একটু একটু করে ফিরছেন তিনি। শুধু অভিনয়ে নয়। মঞ্চ, আবৃত্তি- সবখানেই সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে ‘বাকের ভাই’ খ্যাত এই অভিনেতার। এক থিয়েটারকর্মী থেকে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক অভিনেতা। তিনি এখনও কালজয়ী হয়ে আছেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে। আজ তার জন্মদিন। এ বছর তিনি ৭৩ বছর বয়সে পা রাখলেন তিনি।

তার এবারের জন্মদিনটা কাটছে যুক্তরাজ্যে। সাত দিনব্যাপী নাটকের এক উৎসবে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে গেছেন আসাদুজ্জামান ‍নূর। আগামী ৪ নভেম্বর উৎসব শেষ করে তার ঢাকায় ফেরার কথা। দেশে ফিরেই ব্যস্ত হবেন অভিনয়ে।

আগামী ২৯ নভেম্বর নতুন একটি নাটক নিয়ে মঞ্চে হাজির হবেন এই অভিনেতা। পান্থ শাহরিয়ারের পাণ্ডুলিপি ও নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চে আনছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। নাটকের সম্ভাব্য নাম ‘কালো জলের কাব্য’। এই নাটকে আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে অভিনয় করবেন অপি করিম।

১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আসাদুজ্জামান নূর। তার বাবার আবু নাজিম মো. আলী এবং মাতা আমিনা বেগম। নীলফামারী বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ছোট্ট মফস্বল শহর। এই শহরে শৈশব-কৈশোর আর তারুণ্যের প্রথম ভাগ কেটেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক দিন।

তার বাবা-মা ছিলেন দুজনই স্কুলশিক্ষক। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। ১৯৮২ সালে ডা. শাহীন আকতারকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সুদীপ্ত লন্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে দেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। মেয়ে সুপ্রভা সেও লেখাপড়া শেষ করেছে।

প্রথম জীবনে ছাত্রাবস্থায় তিনি বাম রাজনীতির সাথে জড়ান। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি।

জীবনের দ্বিতীয় ভাগে মন দিয়েছিলেন অভিনয়ে। তিনি কখনও ‘এই সব দিনরাত্রির শফিক’ কখনও ‘অয়োময়’ এর ছোট মীর্জা চরিত্রে অভিনয় করে লাখ লাখ দর্শক-শ্রোতার প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। তবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে। নক্ষত্রের রাত নাটকে তার হাসান চরিত্রটিও মনে রেখেছে মানুষ। এসব নাটক ছিল প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের রচিত।

একই লেখকের রচনা ও পরিচালনায় ‘আগুনের পরশমনি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেও নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে কেবল অভিনয়ের ভুবনে নিজেকে সমৃদ্ধ করেই চলেছেন। সর্বশেষ গেল আগস্টে হাসান রেজাউল পরিচালিত জলছবি নামে একটি টেলিফিল্মে দেখা গিয়েছিল আসাদুজ্জামান নূরকে।

আসাদুজ্জামান নূর ২০০১, ২০০৮, ২০১‎৩, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে নিলফামারী জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আসাদুজ্জামান নূর মূলত থিয়েটারের মানুষ। মঞ্চ থেকেই তার মতো অভিনেতার উত্থান। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তিনি বহুকাল ধরে কাজ করে আসছেন। এই দলের জন্য বিদেশি একটি নাটকের অনুবাদ করেছিলেন নূর। জনপ্রিয় সেই প্রযোজনাটির নাম ‘দেওয়ান গাজির কিসসা’।

আসাদুজ্জামান নূর জনপ্রিয় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এশিয়াটিক সোসাইটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নাগরিকসহ অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। অভিনেতা, আবৃত্তিকার, অ্যাড নির্মাতা, ব্যবসায়ী, সফল রাজনীতিবিদ এবং সর্বশেষ একজন আদর্শ পিতা ও একজন আদর্শ স্বামী তিনি। তবে আসাদুজ্জামান নূর নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন।

নন্দিত এবং বরেণ্য এই মিডিয়া ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মদিনে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তিনি আরও অনেকদিন বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে সংস্কৃতির প্রিয় মানুষ হয়ে।