• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেটে ডিম কেন, মা ইলিশ কিনব না

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ১, ২০১৯, ১৩:৪২ অপরাহ্ণ
পেটে ডিম কেন, মা ইলিশ কিনব না

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগর ও নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলো এখন ইলিশে সয়লাব। কিন্তু বাজারে আসা বেশির ভাগ ইলিশের পেট ডিমে ভরা।

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর বুধবার রাত ১২টার পর থেকে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশ ধরা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বাজারে আসতে থাকে ইলিশ।

শুক্রবার সকালে চাঁদপুরের ইলিশের আড়ত ও বাজারগুলো ডিমওয়ালা মা ইলিশে সয়লাব হয়ে যায়। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

কোনো কোনো ক্রেতা বলছেন, ইলিশের পেটে ডিম কেন? মা ইলিশ কিনব না। তবে কম দাম পেয়ে অনেকেই মা কিনেছেন। কারণ বাজারে আসা বেশির ভাগ ইলিশের পেটে ডিম।

বিক্রেতারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বাড়ানো দরকার ছিল। অধিকাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। যার জন্য বাজার ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব। এই ইলিশ যদি এখন ধরা না পড়তো তাহলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বেশির ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়তো।

চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাছঘাট ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব। মাছঘাটের প্রবেশপথও বন্ধ হয়ে যায় ইলিশে ইলিশে। মাছঘাটের ভেতরে প্রথম অংশের শেডে শত শত বাক্স ইলিশ দিয়ে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। আর ভেতরে আড়তদারেরা শত শত মণ ইলিশ কেনাবেচায় ব্যস্ত। এসব ইলিশের ৯৫ শতাংশই আকারে বড় ও ডিমওয়ালা।

ইলিশ বিশেষজ্ঞ ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর প্রায় ৪৮ শতাংশ ইলিশ নিষেধাজ্ঞার সময় ডিম ছাড়তে পেরেছে। এবার ৪৫ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডিম ছাড়বে ইলিশ। তারপরে আবার স্বল্প প্রজনন মৌসুম চলবে। তখনো ডিম ছাড়বে তারা।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, ৪৮ থেকে ৫০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়লে এবং তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো যেতে পারে।

এদিকে, প্রশ্ন উঠেছে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ না হতে একদিনে এত ইলিশ কোথায় থেকে এলো। বিষয়টি নিয়ে সবাই অবাক। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলো বুধবার মধ্যরাতে। অথচ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাজার ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব। গোটা বাজার ঘুরে ডিম ছাড়া একটি ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে না। যে হারে বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ উঠছে, তাতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান কতটুকু সফল, তা প্রশ্নবিদ্ধ।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুল রহমান বলেন, ইলিশ সারা বছর ডিম ছাড়ে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাস ইলিশ ডিম দেয়। যাচাই-বাছাই করে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা এখন মাঠে আছি তা যাচাই-বাছাই করার জন্য।

তিনি বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে দেখা যায়, ২০টি ইলিশের মধ্যে ১৮টি এবং ১২টির মধ্যে ছয়টি ডিম ছেড়েছে। বাকিগুলো ডিম ছাড়েনি। যদিও গত বছর প্রজনন মৌসুমে ৪৭ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। এবার বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৪৮ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। এখনো ছাড়ছে। ৫০ থেকে ৬০ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়লেই ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে দেশ।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, এবার প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ সাগর থেকে নদীতে এসেছে। বিভিন্ন স্থানে জেলেরা চুরি করে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরেছে। ৭-৮ দিন আগে চুরি করে ধরা ডিমওয়ালা ইলিশ এখন বাজারে বিক্রি করছে জেলেরা। এবার ৮০ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। ২০ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়েনি। তারাও ছেড়ে দেবে।

তবে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে অধিকাংশের পেটে ডিম। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও সাতদিন বাড়ালে ভালো ফল পাওয়া যেতো।

এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ইলিশের প্রজনন সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতি বছরই এই কার্যক্রম হাতে নেয়ার আগে জেলেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মাঠপর্যায়ে আরও বাস্তব ধারণা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।