দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনে হামলা করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পাঁচ নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩৫ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর হামলার একটি ভিডিও যুগান্তরের কাছে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে হামলার শিকার এক ছাত্রী মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। এসময় অন্যরা তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করছে।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী মারিয়াম রশিদ ছন্দা। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মী মারিয়ামের পেটে লাথি মারেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরে আন্দোলকারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যা থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বাসভবন অবরোধ করে রেখেছে আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার সকালে তাদের কর্মসূচিতে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার সময় পুলিশ ও ভিসিপন্থী শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
হামলায় নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০-৩৫ জন আহত হয়েছেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ রিপোর্ট লেখার সময় দুপুর ১ টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন। তবে হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষার্থীরা সরে গেছেন।
এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে চলমান অবরোধে টানা ১০ দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে ভিসির বসভবন অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় জাবি ভিসি বাসাতেই ছিলেন।
উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার বাসভবন অবরুদ্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক রায়হান রাইন।
গত ২৪ অক্টোবর থেকে সোমবার পর্যন্ত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা টানা ১০ দিনের মতো নতুন ও পুরনো দুইটি প্রশাসনিক ভবনই অবরোধ করে রেখেছে।
ফলে এই ১০ দিন ভিসি, দুই প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীই প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। তবে একাডেমিক কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।
অন্যদিকে নতুন করে অবরোধের আওতায় এসেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস। এতে পরীক্ষা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জটিলতা ও স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে।