অভিনেতা মোশাররফ করিমের জনপ্রিয়তা গত কয়েক বছর ধরেই আকাশচুম্বী। অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নাটক ও সিনেমায় নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। তার কমেডি ধাঁচের নাটক মানেই আলোচিত বিষয়।
কমেডি অভিনয়ে পারদর্শিতা দেখিয়ে নানা সময় পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তবে এবার তার সেই দ্যুতি ছড়াল রুপালি পর্দাতেও।
সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুললেন ছোট পর্দা কাঁপানো এ অভিনেতা।
এই প্রথমবার কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন মোশাররফ করিম।
সব জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে বৃহস্পতি হয়ে গেল বহুল কাঙ্ক্ষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ঘোষণা।
ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের চলচ্চিত্র ‘কমলা রকেট’ এ অভিনয় করে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন মোশাররফ করিম।
এমন খবরে মোশাররফ করিমের ভক্ত-অনুরাগীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়েছেন।
আবার মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে মোশাররফ করিমকে নির্বাচন করায় অনেকে বিষয়টিকে নেতিবাচক ভঙ্গিতে দেখছেন।
মোশাররফ করিম ছাড়াও ‘পবিত্র ভালোবাসা’ ছবির জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন আফজাল শরীফ।
এদিকে একই প্ল্যাটফরমে (সেরা কৌতুক অভিনেতা) পুরস্কার জিতেছেন নন্দিত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু।
বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘গহীন বালুচর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১৭ সালের সেরা কৌতুক অভিনেতা হয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে চিত্রনায়ক শাকিব খান ও আরেফিন শুভ। একই বছরের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। ২০১৮ সালের জন্য যৌথভাবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও সাইমন সাদিক।
একই বছরের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান। ২০১৭ সালের জন্য আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান ও অভিনেত্রী সুজাতা। পরের বছরের জন্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও চিত্রনায়ক আলমগীর। ২০১৭ সালের সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’।
ওই বছর শ্রেষ্ঠ নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর)। ২০১৮ সালে সেরা চলচ্চিত্র ‘পুত্র’। শ্রেষ্ঠ নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক (জান্নাত)। আগামী বছরের শুরুতে জমকালো অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।
২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিশ্ব আঙিনায় অমর একুশে)। পরের বছরের জন্য তা পেয়েছেন ফরিদুর রেজা সাগর (রাজাধিরাজ রাজ্জাক)।
২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী যুগ্মভাবে সুবর্ণা মুস্তফা ও রুনা খান। ২০১৮ সালের শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী সুচরিতা (মেঘকন্যা)। ২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন (গহীন বালুচর)। ২০১৮ সালের শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা আলীরাজ (জান্নাত)।
২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা জাহিদ হাসান (হালদা), ২০১৮ সালে সাদেক বাচ্চু (একটি সিনেমার গল্প)। ২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা এম ফজলুর রহমান (গহীন বালুচর), ২০১৮ সালের শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা যুগ্মভাবে মোশাররফ করিম ও আফজাল শরিফ (কমলা রকেট ও পবিত্র ভালোবাসা)।
২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক এম ফরিদ আহমেদ হাজরা (তুমি রবে নীরবে), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ইভান শাহরিয়ার সোহাগ (ধ্যাততেরিকি)। ২০১৮ সালের শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ইমন সাহা (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল (একটি সিনেমার গল্প)।
এবার মোট ২৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। সেগুলো হলো- আজীবন সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী কৌতুক চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী, শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ গায়িকা, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সুরকার, শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান।
প্রসঙ্গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র) সভাপতি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সদস্য-সচিব হিসেবে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র) ও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৩ সদস্যবিশিষ্ট ২০১৭ সালের জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুল, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক এমএ আলমগীর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রগ্রাহক পংকজ পালিত ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম।
২০১৮ সালের জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, চলচ্চিত্র অভিনেতা ড. এনামুল হক, সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক হাসান মতিউর রহমান, অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থার যুগ্ম মহাসচিব তপন আহমেদ