• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে যা বললেন মোদি

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ৯, ২০১৯, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ণ
বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে যা বললেন মোদি

বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের আগে দেশবাসীর কাছে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, এই মামলার রায় কারো জয় বা পরাজয় নয়।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই মামলার রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। তার আগে শুক্রবার রাতে একাধিক টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী।

হিন্দিতে লেখা ওই টুইটগুলোর একটিতে তিনি লিখেছেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) অযোধ্যা মামলার রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। গত কয়েক মাস ধরে এই মামলার লাগাতার শুনানি চলছিল। গোটা দেশের নজর ছিল এই মামলার ওপর। সমাজের সবে স্তরের মানুষের কাছে আহ্বান, শান্তির পরিবেশ বজায় রাখুন।’

আরকেটি টুইটে মোদি বলেন, অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যা রায় দেবে, তাতে কারো জয় বা পরাজয় হবে না। দেশবাসীর কাছে আবেদন, এই মামলায় যে রায়ই আসুক, দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী শান্তি বজায় রাখাটাই আমাদের মূল কর্তব্য হবে।’

তার মতে, দীর্ঘ দিন ধরে এই মামলার শুনানি চলাকালীন দেশের সর্ব স্তরের মানুষজন যেভাবে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখেছেন, তা সত্যিই প্রশংসণীয়।

প্রসঙ্গত ১৯৯২ সালে কট্টরপন্থী মৌলবাদী হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় কমবেশি ২০০০ লোক নিহত হয়েছিল।

এ কারণে রায় ঘোষণার মাসখানেক আগে থেকেই অযোধ্যা শহরে ১৪৪ জারি রয়েছে। এমনিতেই বিতর্কিত জমিটির কাছাকাছি যাওয়া যায় না সহজে। চারদিকে লোহার বেড়া আছে।

২৪ ঘণ্টা সেটিকে ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকশো সদস্য। আর এখন হাজার হাজার বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে অযোধ্যায়।

বাবরি মসজিদ মামলার রায়কে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা শহর সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে।

রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমেও যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে। লাখনৌ আর জেলা সদরগুলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দফতর বলছে, দুটি হেলিকপ্টার তৈরি রাখা হচ্ছে, যার মধ্যে একটি থাকবে অযোধ্যায়। পুলিশের বন্দুক – গুলি – কাঁদানে গ্যাস সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সাজ সরঞ্জামও পরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

যে শহরকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে সেই অযোধ্যা- বিশেষ করে যে বিতর্কিত জমিতে বাবরি মসজিদ ছিল, সেখানকার নিরাপত্তাও কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন, তা জানতে প্রধান বিচারপতি শুক্রবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আর পুলিশ মহানির্দেশককে।

এর আগে বৃহস্পতিবারই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিতর্কিত জমিটি নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার ঠিক ৭০ বছর পরে অবশেষে রায় দিচ্ছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। আগামী সপ্তাহেই অবসর নেবেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তার আগেই যে তিনি এই ঐতিহাসিক এবং সাম্প্রতিক সময়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিতে চান, সে ঘোষণা আগেই করেছিলেন বিচারপতি গগৈ।

বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে।

ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্ত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল।

কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।

জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। এরপর ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।

ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে – দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রীম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রীম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল।

কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবি করেন বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল এবং একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।

এদিকে, হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা ঘোষণা করেছেন যে সুপ্রীম কোর্টের রায় তারা মেনে নেবেন। কিন্তু তার পরও আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা শহর সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পদস্থ পুলিশ আর প্রশাসনের কর্তারা কথা বলেছেন জেলাগুলির সঙ্গে।

মুখ্যমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, ৩৮টি জেলা এমনিতেই সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল, সেখানে বাড়তি বাহিনী নামানো হয়েছে। টহল চলছে দিন রাত।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে তল্লাল্লি চালানো হচ্ছে। যারা উত্তেজনা ছড়াতে পারে, এমন লোকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে।

কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে। একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয় বেঞ্চ।