বানারীপাড়া প্রতিনিধি
বানারীপাড়ায় ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে গাছ পড়ে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ১০ জন আহত ও একটি গাভীর মৃত্যু হয়েছে। একই ভাবে গাছ পরে শতাধিক মুর্গির ফার্ম ভেঙ্গে শহ¯্রাধীক মর্গির মৃত্যু হওয়া সহ সন্ধ্যা নদীর পানি ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে পুকুর ও ঘের ডুবে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার মাছ। একই সাথে গাছ পরে বিদ্যুতের তার ছিরে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি সকল প্রকার নেটোয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চলাকালিন সময় মোবাইল ফোনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ উপজেলার বন্যা দূর্গত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসির সাথে কোন রকম যোগাযোগ রক্ষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে মোবাইল গ্রাহকরা এ নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন।
অপরদিকে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল দূর্বল হওয়ার প্রায় ১ ঘন্টা পর রোববার বিকেলে বরিশাল-২ আসনের এমপি মো.শাহে আলম’র নেতৃত্বে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগীতা করা হয়। এসময় তার সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো.খলিলুর রহমান সহ আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। একই দিন বিকেলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন কালে সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় কবলিত এলাকা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকেই এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানতে পারে এমন আতংকে তাদের দিন কেটে যায়।
অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে সর্বত্র মাইকিং করে সর্তক করার পাশাপাশি ঝুকীপূর্ণ কাঁচা ঘর-বাড়ির বসতীদের নিরাপদ আশ্রয় স্থলে যাওয়ার জন্য করা নির্দেশ দেয়া হয়। এদিন সকাল থেকে হালকা বৃষ্টি ও বাতাস শুরু হলেও তার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো.খলিলুর রহমান’র নেতৃত্বে বানারীপাড়া পৌরসভা সহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ঝুকিপূর্ন এলাকার বসতীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ৩২টি সাইক্লোন সেল্টার ও দু’শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে কাধ্য করা হয়। ফলে ঝুকীপূর্ণ এ এলাকার শহ¯্রাধীক বাসিন্দা উক্ত সাইক্লোন সেল্টার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন। ঘুর্ণিঝড় আতংকের ওই দিন রাত ১১টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতের লুকোচুরী দেখে এলাকার বিশিষ্ট জনরা হতাস হওয়ার পাশাপাশি ১০-১৫ মিনিট পর পর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর তাদের মনে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, এই বুঝি ঘর্ণিঝড় বুলবুল এলো। এ কারণে এলাকাবসি র্নিঘুম রাত কাটান। এদিন রাত ২টার পর থেকে বৃষ্টি ও বাতাসের গতীবেগ বাড়তে থাকে এবং পর দিন রোববার সকাল ১০টার পর ঘুর্ণিঝড় বুলবুল এ অঞ্চলে প্রলয় আঘাত হানতে শুরু করে এবং সেটি বেলা ১টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এসময় হালকা-মাঝারী বৃষ্টি ও ভারী বাতাস ছাড়াও সন্ধ্যা নদীর পানি ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে অসংখ্য পুকুর ও ঘের ডুবে কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। একই সময় ঘুর্ণিঝড়ে পৌর শহরের ডাকবাংলোর দেয়াল ধসে পড়ার পাশাপাশি সরকারী ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুল জামে মসজিদের দোতলা ভবনের টিনের চালা উপে যায়।এ সময় পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডে সেলিম মেকার এবং সেকেন্দার বেপারীর দোকান ঘরের ওপর গাছ পড়ে দুমরে-মুচরে যাওয়ার পাশাপাশি তারা দু’জন সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়। এছাড়াও গাছ পড়ে লবনসাড়া গ্রামের সৈয়দ হাবিবুর রহমানের এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভীর মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি শতাধিক বায়লার ও লেয়ার মর্গির ফার্ম ভেঙ্গে শহ¯্রাধীক মূর্গির মৃত্যু হয়। একই ভাবে গাছ পড়ে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ও বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যায় দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এ অঞ্চলের রোপা আমন, কলা, পেপে ও লাউ সহ বিভিন্ন প্রকার সজ¦ীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপনের জন্য রোববার বিকেল থেকেই সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে চুরান্ত তালিকা তৈরী করতে তাদের আরও দু’এক দিন সময় লাগতে পারে বলেও সংশ্লীষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান, আমরা এলাকা ভিত্তিক ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপনের জন্য এলাকা ভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। দু’এক দিনের মধ্যে সেটি চুরান্ত করা হবে বলেও তিনি জানান। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে জরুরী ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ১০ মেট্রিক টন ত্রাণের চাল পেয়েছেন বলেও ইউএনও জানান। ##