• ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাকেরগঞ্জে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালন

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০১৯, ১১:২২ পূর্বাহ্ণ
বাকেরগঞ্জে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালন

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাকেরগঞ্জে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্নাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান শাহিন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জনাব, সর্দার সাইফুল, গোপাল চন্দ্র শীল, প্রকল্প সমন্বয়কারী, সেইন্ট বাংলাদেশ, চয়ন কুমার তালুকদার, আবু তাহের ও ডা. সিফাত সেজুতি, ডেপুটি ম্যানেজার, সেভ দ্য চিল্ড্রেন শহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। আলোচনা সভায় দিবসটির তাৎপর্য বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাদ্দাম হোসেন ডেভিড। সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন নিউমোনিয়া এমন একটি ব্যাধি যা সহজেই নিরাময় করা সম্ভব কিন্তু শুধু মাত্র অভিবাবকদের অসচেতনতা এবং সময়মত চিকিৎসার অভাবে এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা প্রান হারায়।
নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণে ফুসফুসের প্যারেনকাইমায় প্রদাহের ফলই নিউমোনিয়া। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া সহজেই নিরাময়যোগ্য একটি ব্যাধি। তারপরও বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের নিচে শিশুর মৃত্যুর যতগুলো কারণ রয়েছে, নিউমোনিয়া তার মধ্যে প্রথম। বর্তমান সময়ে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এই নিউমোনিয়া। বিশ্বজুড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে একজন করে নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারায়। বাংলাদেশেও এর বেতিক্রম নয়। প্রতিঘন্টায় বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী ২ টি শিশু নিউমনিয়া জনিত রোগে মারা যায়। গত দুই দশকে শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়ে আনলেও নিউমোনিয়া রোগ উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে মোট সন্তান প্রসবের প্রায় অর্ধেক এখনো অপরিকল্পিত এবং অদক্ষ ধাত্রির দ্বারা পরিচালিত হয় উপরন্তু নানা প্রকার কূসংস্কার এবং সমাজের প্রচলিত রিতি-নিতীর কারনে নবজাতক শিশু জন্মের সাথে সাথেই শরিরে নানা ধরনের রোগের সংক্রমন ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বাধিয়ে রাখে। নিউমনিয়াও এর মধ্যে অন্যতম। নিউমনিয়ার লক্ষন গুলো নিয়ে আমাদের সমাজে সাধারন মানুষের মধ্যে নানা প্রকার অপব্যাখা প্রচলিত থাকায় অনেক সময়ই তারা শিশুদের এই মারাত্বক রোগের জন্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির আশ্রয় নেয়।
আমরা বলতে চাই অসচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসাকেন্দ্রে না আসা ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার যখন নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না তখন বিষয়টি যথাযত ভাবে আমলে নেয়া এবং নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহন করা এখন সময়ের দাবি। মনে রাখতে হবে শিশুর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে একটি সমৃদ্ধ জাতী গঠন হুমকির মুখে পরবে। তাই সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যারা শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের আরো বেশি সচেষ্ট হতে হবে। শিশুর নিউমোনিয়া প্রতিরোধে অভিভাবকদের সচেতন করে তোলার কোন বিকল্প নেই। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইপিআইকেন্দ্র, সহ সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম বিফল হবে যদি সাধারন মানুষের মধ্যে সঠিক সময়ে সেবা গ্রহনের মানষিকতা তৈরি না হয়।
তবে আশার কথা হল এই যে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যু কমেছে। কমেছে নবজাতকের মৃত্যুর হারও। তবে এখনো অনেক পথ বাকি। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ জনে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। সর্বপরি সরকারের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করতে হলে শিশু মৃত্যুরহার এমন কি নবজাতক মৃত্যুর হার কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
সরকারের নির্ধারিত এই লক্ষমাত্রা অর্জনের লক্ষে কিছু সু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ রোধ করতে পারে নবজাতকের প্রানঃ

শিশুর টিকাদান কর্মসূচীর আওতা বৃদ্ধিকরন।
অ্যান্টিবায়োটিকের সুলভ মূল্য নির্ধারণ।
জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করা
শিশুদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা।
কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসবের ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া।
ঘরে নয় সেবা কেন্দ্রে প্রসবের হার বাড়ানো।
গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় সেবা, সুযোগ ও পুষ্টির ব্যবস্থা করা।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে প্রসব করালে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ধাত্রির সহযোগিতা নেয়া।