সাঈদ পান্থ \ বরিশাল নগরীর অক্সফোর্ড মিশন হাই স্কুলের এ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের পর এবার অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারী স্কুলেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস এসপিবি এর বিরুদ্ধে। এই স্কুলেরও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডেপুটি মডারেটর বিশপ সৌরভ ফলিয়া। নানা চাপের মুখে সম্প্রতি সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর পরপরই স্কুলের ফান্ড থেকে ২২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস। তবে এই বিষয়ে কেউ মুখখুলতে চাচ্ছে না। স্কুলের প্রধান শিÿক মেরি রায় বলেন, স্কুলের ফান্ড থেকে ২২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে এই টাকা স্কুলের জন্য ব্যায় করা হয়নি।
গত সোমবার লিখিত অভিযোগে অক্সফোর্ড মিশন হাই স্কুলের শিÿক-কর্মচারীরা ফাদার ফ্রান্সিস এসপিবি বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৭৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৬ টাকা উত্তোলন করেছে বলে অভিযোগ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, ফান্সিসের ম্যানেজিং কমিটির কোন পদে নেই। তবে নিজেকে ম্যানেজিং কমিটির উপদেষ্টা হিসিবে জাহির করেন। ফাদার ফ্রান্সিস অর্থ উত্তোলন, বিদ্যালয় পরিচালনায় ও সকল ÿেত্রে একক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এমনকি এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতিকেও অবহিত করেন না। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালনার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বাদ দিয়ে প্রধান শিÿক, ফাদার ফ্রান্সিস ও ফাদার জন এসপিবিকে ফাদার ফ্রান্সিস মনোনীত করেছেন। যা ম্যানেজিং কমিটির আইনানুযায়ী সম্পুর্নরূপে বেআইনী। সর্বশেষ বিদ্যালয়ের ফান্ট থেকে গত ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ১০ লাখ টাকা ও ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রæয়ারী ১৫ লাখ টাকা সেন্টার অফিস ট্যান্সফার নামে উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া শিÿকদের গ্রাচ্যুইটি বন্ধ করে দিয়েছেন ফাদার ফ্রান্সিস। যদিও এই ফান্টে ৬ লাখ টাকার বেশী রয়েছে বলে শিÿকরা জানান।
এদিকে খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারী স্কুলের সভাপতি ডেপুটি মডারেটর বিশপ সৌরভ ফলিয়াকে স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন করে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হলে তিনি সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর ÿমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই স্কুলের সভাপতি হন ফাদার ফ্রান্সিস এসপিবি। সে এসেই স্কুলের ফান্ড থেকে ২২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। তবে এই টাকা স্কুলের কোন কাজে ব্যবহার করা হয়নি বলে স্বীকার করেছেন স্কুলের শিÿকরা। স্কুলের শিÿকরা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ফাদার প্রভাব খাটিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। তবে তার চাপের মুখে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। হাইস্কুলের শিÿকরা ফাদারের বিরুদ্ধে বিশপের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর অনেকে মুখ খুলতে শুরু করলেও নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করছেন।
অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস এসপিবি এর ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফাদার জন এসপিবি বলেন, ‘হাইস্কুল থেকে যে ভাবে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সেই ভাবেই প্রাইমারীর টাকাও জেনারেল ফান্ড করার জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। আর টাকা উত্তোলনের আগে ম্যানেজিং কমিটি দিয়ে পাশ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত ২০১৭ সালে মালয়শিয়ায় একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২ বছর পর ইংল্যান্ড থেকে টাকা দেয়া হবে না। তাই একটি জেনারেল ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। এই ফান্ডেই টাকা রাখা হচ্ছে বলে তিনি জানান। হাইস্কুলের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পাশ করে গেছেন।
অক্সফোর্ড মিশন হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারী স্কুলের সাবেক সভাপতি ডেপুটি মডারেটর বিশপ সৌরভ ফলিয়া বলেন, ‘আমি ব্য¯Íতার কারণে প্রাইমারী স্কুলের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। পরে ২২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে কি না এ বিষয়ে আমি জানিনা। কারণ আমি ওই কমিটিতে নেই।’ তিনি হাই স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে শিÿকদের অভিযোগ সর্ম্পকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব।’
এব্যাপারে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের বরিশালের সাধারণ সম্পাদক এলবার্ট রিপন বলøভ বলেন, ‘আমি অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারী ও হাইস্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র। এটি একটি ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠান। সেখানে অস্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক দুর্নীতি আমি মেনে নিতে পারি না। স্কুলের দীর্ঘ দিনের তিল তিল করে জমানো অর্থ স্কুল উন্নয়নের কাজে ব্যায় হবে না এটা হতে পারে না। প্রতিটি টাকার হিসেব ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অনথ্যায় এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’ ##