আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০১৯
সাঈদ পান্থ ॥ ১৪ বছর বয়সে মৃত্যু হলো ‘সুখ সাগর’ দিঘীর। নিরাপদ জলাধার আর ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যসহ অন্যন্যদের মিলিয়ে প্রায় হাজার খানিক মানুষের পানির সমস্যা দুর করতে যে ‘সুখ সাগর’ জন্ম, সেটি এখন ভরাট করে মেরে ফেলছে পুলিশ প্রশাসন। তাদের ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে এই দিঘিটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দিঘীটির দুই তৃতীয়াংশ ভরাট করে ফেলেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার কারণে সেখানে বসবাসকারী পুলিশ সদস্যরাই পানি সংকটে পরেছে। যদিও তারা এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। দিঘীটি বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া সড়কের রেঞ্জ রির্জাভ ফোর্স (আরআরএফ) এর মধ্যে অবস্থিত।
জানা গেছে, বরিশাল রেঞ্জ রির্জাভ ফোর্স এর জন্য ২০০৫ সালে ১০ একর জমিতে ব্যারাক হাউস নির্মাণ করা হয়। সেখানকার পুলিশ সদস্যদের পানির সমস্যা দুর করতে ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল খনন কাজ শুরু করা হয় সুখ সাগরের। দৈর্ঘ্যে ৫২৬ ফুট ও প্রস্থে ২৫০ ফুট এই দিঘীর গড় গভীরতা করা হয় ১৪ ফুট। পরে দিঘীর দুই পাশে দুইটি ঘাটলাও নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকে সেখাকার ৮০০ পুলিশ সদস্য গোশল, ওজুসহ দৈনন্দিন কাজ করে চলেছে এই দিঘীতে। তবে বরিশাল পুলিশ রেঞ্জের প্রয়োজনে সেই দিঘীর স্থলে নির্মাণ করা হবে প্রশাসনীক ভবন, মসজিদ, পুলিশ সুপার কোয়াটার ও ফোর্স কোয়াটার। ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ৩ থেকে ৪ মাস ধরে বালু ফেলে ব্যারাকের দিঘীটি ভরাট করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩ ভাগের ১ ভাগ ভরাট করে ফেলেছে। বরিশালের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনার কারণে নদী থেকে বালু কেটে ফেলতে পারছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বালু ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ সদস্যরা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘দিঘীটি ভরাট হয়ে গেলে আমরা পানি সংকটে পরবো। মাঝে মাঝে ২/৩ দিনেও বিদ্যুৎ থাকে না এখানে। তখন এই দিঘীই আমাদের শেষ ভরশা। আবার কখনো মটর পুরে বা নস্ট হয়ে গেলে চরম দুর্ভোগে পরতে হয়। তখন গণপূর্তকে চিঠি লিখতে হয়। তারা সমাধান করতে করতে ৩/৪ দিনও সময় লাগিয়ে দেয়। তখন এই দিঘীই হয় শেষ উপায়। কিন্তু সেই দিঘী ভরাটের পায়তারা চলছে। এখন সেখানে ওজুও করা যাচ্ছে না।
নদী খাল বাচাঁও আন্দোলন কমিটি বরিশালের সদস্য সচিব ও উন্নয়ন সংগঠক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, ‘নানা কৌশলে বরিশালে জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পুলিশ প্রশাসন ১ একর জমির উপর খনন করা দিঘী ভরাটের পায়তারা চালাচ্ছেন। এটা হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে আমরা আন্দোলন করে এই দিঘী রক্ষা করবো।
বরিশাল রেঞ্জ রির্জাভ ফোর্স পুলিশ অফিসাররা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘বিষয়টি সর্ম্পকে আমরা কিছু বলতে পারবো না। পুলিশ হেড কোয়াটার ও গণপূর্ত বিভাগ এই কাজটি করছে। পুকুরটি আমরাই খনন করেছিলাম। পুকুরটি ভরাট হলে আর ভাললাগবে না।’ তবে ‘জলাশয় সংরক্ষণ আইনের আওতায় এই দিঘী পড়ে না। এটি জলাশয় নয়, যে ভরাট করা যাবে না।’
এ ব্যাপারে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিঘী ভরাট কর্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা একবার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ হেডকোয়াটারের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রকল্পটি সারা বাংলাদেশে হচ্ছে। তাই বন্ধ রাখা যায়নি।