১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

ধর্ষক মজনুর জীবন কাহিনী

আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

শৈশবেই মারা যান মা। এর পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সত্মায়ের সংসারে সে থাকেনি বেশি দিন। নিজে বিয়ে করেছিল, তবে স্ত্রীও মারা যায়। এর পর পরিবারের সঙ্গে থাকা নয়, বেপরোয়া জীবন বেছে নেয় সে। ন্যূনতম অক্ষরজ্ঞানের শিক্ষাও অর্জন করেনি।

গ্রামের সবাইকে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করার কথা জানালেও সে করত চুরি, আর ছিনতাই। এতে পাওয়া টাকা দিয়ে ড্যান্ডি, গাঁজা আর ইয়াবা সেবন করত। নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকত রেলের কামরায়, স্টেশনে। জৈবিক চাহিদা মেটাতে সে অমানবিক এক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল।

রেলস্টেশন ও ফুটপাতে পড়ে থাকা অসহায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারীদের জোর করে নিজের কাছে নিয়ে রাখত। এর পর দিনের পর দিন ধর্ষণ করত। এই অত্যাচারের কথা বলতে পারেনি কোনো প্রতিবন্ধী। এমনই বিকৃত মানসিকতার ভয়ংকর এক জীবন কাটাচ্ছিল কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণকারী মজনু।

র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবঘুরে মজনু তার মতোই থাকা মানসিক প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুকদের টার্গেট করত। কুর্মিটোলার ঘটনাস্থলে সে একই অপকর্ম আগে করেছে। কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গে সে অপরাধ না করায় আগে তা ধরা পড়েনি।

বিকৃত মানসিকতার এই যুবক অনিরাপদ জীবনের কারণে সংক্রমণ রোগসহ বিভিন্ন অসুস্থতায়ও ভুগছে। এ কারণে ধর্ষিত তরুণীর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন র‌্যাবের একাধিক সূত্র।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন বিচ্ছিন্ন থাকা এবং ছোটবেলা থেকে অপরাধ করে বেড়ানোর কারণে বিকৃত মানসিকতা লালন করছিল মজনু। রেললাইনের বস্তিতে এমন অনেক মজনু আছে। এদের মাধ্যমেও ধর্ষণের মতো অপরাধ সংঘটিত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।

র‌্যাবের গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, “মজনু তার ভাষায় ‘পাগলিদের’ আটকে রেখে ধর্ষণ করত। এ কারণেই এত দিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এটা অপরাধী মানসিকতার প্রকাশ। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে মাদকাসক্তি ও ছিনতাইয়ের মতো কাজ করায় সে নির্দয় মানসিকতার বলে মনে হচ্ছে।”

একটি সূত্র জানায়, ‘ফুটপাতে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনে অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক গ্রহণের কারণে  সংক্রমণ ব্যাধিসহ তার শরীরে রোগের আলামত পাওয়া গেছে। ঘটনার দিনও সে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিজের চিকিৎসায় যায়। তার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় ছাত্রীর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।’

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, নোয়াখালীর হাতিয়ার জাহাজমারা গ্রামের মৃত মাহফুজুর রহমানের ছেলে মজনু। শৈশবে তার মা মারা গেলে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এর পর থেকেই সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিয়ের কিছুদিন পরই তার স্ত্রী মারা যায়।

প্রায় ১০ বছর আগে ঢাকায় ভবঘুরে জীবন বেছে নেয়। তবে গ্রামের পরিচিতদের বলত, ঢাকায় সে শ্রমিকের কাজ করে। কুর্মিটোলা, বিমানবন্দর ও কমলাপুর রেলস্টেশনের বগিতে ঘুমাত। এসব স্থানেই ইয়াবা, গাঁজা আর ড্যান্ডি সেবন করত। কয়েক বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে তার সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায়।

র‌্যাব সূত্র জানায়, স্টেশনে ও রেললাইনে ঘোরাফেরা করা মানসিক প্রতিবন্ধী বা অপুষ্ট রোগা শরীরের ভিক্ষুক নারীদের টার্গেট করত মজনু। এরপর জোর করে নিজের কাছে নিয়ে রাখত। কুর্মিটোলার ঝোঁপের মধ্যে, কুর্মিটোলার ট্রেনের বগি, কমলাপুর স্টেশনের পেছনে, বিমানবন্দরের ট্রেন লাইনের পাশেসহ কয়েকটি স্থানে এই অসহায় নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল সে।

একজন পালিয়ে গেলে আবার আরেকজনকে নিজের কব্জায় নিত মজনু। এদের কাছে টাকা থাকলে তাও কেড়ে নিত সে। রেললাইনে, ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে যাত্রী-পথচারীদের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন টেনে নিয়ে যেত মজনু। শেওড়া এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা আছে। চুরির পণ্য সে অরুণা বিশ্বাসসহ কয়েকজনের কাছে বিক্রি করত।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উমর ফারুক বলেন, ‘মজনুর যে গল্প শুনলাম এতে তার জীবনই ছিল অপরাধের মধ্যে। এরা সমাজে বসবাস করলেও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।

অপরাধবিজ্ঞানের ভাষায় সাইকোডায়নামিক অ্যাপ্রোচ দিয়ে এদের অপরাধ মানসিকতা দেখা হয়। সিরিয়াল কিলারদের মতোই সিরিয়াল রেপিস্টরা নারীর প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে। আবার অসঙ্গতির মাধ্যমে বেড়ে ওঠায় এরা সমাজব্যবস্থাকেই শত্রু মনে করে। এদের দ্বারা ছাত্রী ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধও হতে পারে। কঠোর শাস্তি ও নজরদারির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধী হয়ে ওঠা প্রতিহত করা সম্ভব।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ফুটপাতে, রেলস্টেশনে বেড়ে ওঠা অনেকেই মানসিকভাবে বিছিন্ন মনোভাব থেকে অপরাধ করে। এদের মধ্যে নিজের ক্ষমতা দেখানো বা হিরোইজম কাজ করে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার জৈবিক চাহিদার কারণে সে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজও করে। বিবেক ও হিতাহিত জ্ঞান কম থাকে বলে তারা নিষ্ঠুর অপরাধ করে।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network