আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
ভারতের প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে স্বরণে ‘চিরদিনের মান্না দে’ সংঙ্গীত সন্ধ্যা বরিশালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মান্না দে সঙ্গীত সন্ধ্যা উদযাপন পর্ষদ এর আয়োজনে এই সঙ্গীত সন্ধ্যা সোমবার রাতে নগরীর খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
মান্না দে সঙ্গীত সন্ধ্যা উদযাপন পর্ষদ এর আহ্বায়ক বিজয় কৃষ্ণ দে এর সভাপতিত্বে প্রদীপ প্রজ্জলন করেন বরিশালের ২৭টি সংগঠনের জোট সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সভাপতি কাজল ঘোষ, মানবাধিকার জোট সভাপতি ডা: সৈয়দ হাবিবুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুকুল দাস ও আইনজীবী লস্কর নুরুল হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্ষদের সদস্য সচিব গোপন কৃষ্ণ গুহ রিপন।
সঙ্গীত সন্ধ্যায় মান্না দে এর গান পরিবেশন করেন চঞ্চল নট্টা, মৈত্রি ঘড়াই, সেুখেন্দু শেখর, শহিদুজ্জামান মামুন ও জহির উদ্দিন সরদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল চক্রবর্তী, প্রফেসর লুৎফে-ই আলম, টুনু রানী কর্মকার, খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ চক্রবর্তী, শিশু সংগঠক জীবন কৃষ্ণ দে, নারী নেত্রী পুস্প চক্রবর্তী, বাসুদেব ঘোষ, গণশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাঈদ পান্থ প্রমুখ।
মান্না দে’র পরিচিতি
মান্না দে ২০১৩ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
৯৪ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর।
বুকে সংক্রমন ও কিডনির সমস্যার জন্য জুন মাসে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দুই মেয়ে সুরমা আর সুমিতাকে রেখে গেলেন মান্না দে। স্ত্রী সুলোচনা কুমারণ ২০১২ সালে মারা যান।
প্রায় সাত দশকের সঙ্গীতজীবনে মান্না দে বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান গেয়েছেন।
এর মধ্যে যেমন রয়েছে অসংখ্য সিনেমার গান, তেমনই রয়েছে ধ্রুপদী সঙ্গীত, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত আর নজরুলগীতি।
বাবা পূর্ণচন্দ্র দে আর মা মহামায়া দের সন্তান মান্না দের জন্ম ১৯১৯ সালের পয়লা মে।
তাঁর আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে।
পড়াশোনা কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ আর বিদ্যাসাগর কলেজে।
মান্না দে’র গান শেখা শুরু তার কাকা – ১৯২০ ও ৩০-এর দশকের বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে’র কাছে।
কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন অন্ধ এবং ভ্রাতুষ্পুত্র মান্না দে ছিলেন একাধারে তার শিষ্য ও সহকারী।
উস্তাদ দবির খানের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে, যখন সিনেমায় প্লেব্যাক গাইছেন, তখনও উস্তাদ আমান আলি খান ও উস্তাদ রহমান খানের কাছে গান শিখেছেন।
কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সঙ্গে গান গাওয়ার জন্য মান্না দে মুম্বইতে পাড়ি দেন ১৯৪২ সালে।
কিছুকাল পরই সিনেসায় প্লেব্যাকের সুযোগ পান।
‘তামান্না’ ছবিতে সুরাইয়ার সাথে দ্বৈতকণ্ঠে ‘জাগো এয় ঊষা’ গানটি প্লেব্যাকে তার প্রথম গান।
তবে হিন্দি সিনেমায় তার প্রথম একক হিট গান ১৯৪৩ সালে ‘উপর গগন বিশাল’।
শচীন দেব বর্মণ এবং অন্যন্য সঙ্গীত পরিচালকদের সুরে ১৯৪০, ৫০ ও ৬০-এর দশকে প্রচুর কালজয়ী সিনেমার গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
১৯৫৩ সালে ‘কতদূরে আর নিয়ে যাবে বলো’ গানটি তার রেকর্ড করা প্রথম বাংলা গান।
১৯৬০-এর দশক থেকে বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাকেও তিনি ছিলেন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠশিল্পী।
বাংলা আর হিন্দী ছাড়াও অসমীয়া, মারাঠি, মালয়ালম, কন্নড় প্রভৃতি ভাষাতেও প্রচুর গান গেয়েছেন মান্না দে।
আর সব ভাষাভাষী মানুষের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
পেয়েছেন দেশ বিদেশের অজস্র পুরস্কার।
ভারত সরকার তাঁকে সম্মানিত করেছে চলচ্চিত্র ক্ষেত্রের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে।
তার আগে পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ সম্মাননাও পেয়েছেন মান্না দে।
হিন্দি সিনেমায় মান্না দে’র কণ্ঠে শ্রী ৪২০ ছবির ‘পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া’, ওয়াক্ত ছায়াছবির ‘এয় মেরি জোহরা জবি’, পড়োসান ছবির ‘এক চতুরনার’-এর মতো কালজয়ী গান এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
একই সঙ্গে মান্না দের গাওয়া বাংলা গানের তালিকাও সুদীর্ঘ।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কয়েকটি বাংলা গানের মধ্যে রয়েছে ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’, ‘এই কুলে আমি, ‘সেই তো আবার কাছে এলে, ‘ললিতা, ওকে আজ চলে যেতে বল না’, ‘আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে’, ‘যখন কেউ আমাকে পাগল বলে’, ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’, ‘কাহারবা নয় দাদরা বাজাও’, ‘শাওন রাতে যদি’, ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না’, ‘আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে’, ‘আমি যে জলসাঘরে’।
সঙ্গীত সমালোচকরা বলে থাকেন মান্না দের বিভিন্ন ধরণের – নানা আঙ্গিকের গান গাওয়ার সহজাত প্রতিভার কারণেই জনপ্রিয়তম সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
যে কারণে মহম্মদ রফি, মুকেশ বা কিশোর কুমারদের সঙ্গে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয় মান্না দের নাম।