আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
জয়পুহাটের আক্কেলপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম স্বাধীন মাষ্টারের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল তারা।
এ সময় বাড়ির সামনে ককটেলও ফুটায় তারা।
পরে ওই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিবেশী সাংবাদিক মিনার হোসেনের বাড়ির সামনে ককটেল ফুটিয়ে পালিয়ে যায়।
এটি ছিল গত ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ঘটনা।
পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ির ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল একাধিক পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দানকারী নিরেন দাস (২৯) ও আবু রায়হান (২৮) নামে কথিত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
আব্দুর রহিম স্বাধীন পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য এবং মিনার হোসেন দৈনিক করতোয়ার আক্কেলপুর প্রতিনিধি।
তাদের বাড়ি পৌর সদরের পুরাতন বাজার এলাকায়।
ওই ঘটনায় আব্দুর রহিম বাদি হয়ে আক্কেলপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২৯ ডিসেম্বর মধ্য রাতে মুখোশ ও হেলমেট পড়া দুই দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে করে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিমের বাড়ির সামনে এসে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
পরে বাড়িটি লক্ষ করে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে তারা।
শেষে প্রতিবেশী সাংবাদিক মিনারের বাড়ির সামনে ককটেল ফুটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পরে এ ঘটনায় এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগ নেতার বাসার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও আক্কেলপুর থানা পুলিশ।
এ ঘটনার দুই দিন পর জয়পুরহাট সদর ও আক্কেলপুর থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, ককটেল এবং বিপুল পরিমাণ ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করে।
একইসঙ্গে জামালপুর গ্রামের রঞ্জু সরকার (৩৩) এবং ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের আক্কাস আলী। পরে জয়পুরহাট থানায় একটি মামলা হয়।
পরে গ্রেপ্তারকৃত রঞ্জু সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে দুই দিনের রিমান্ড চায় আক্কেলপুর থানা।
আদালত রিমান্ড মুঞ্জুর করলে রিমান্ডে রঞ্জু সরকার স্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার পিস্তল ও ককটেল রঞ্জুই নিরেন দাস ও আবু রায়হানকে সরবরাহ করে এবং ঘটনার সময় সিসিটিভির ফুটেজসহ অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় আক্কেলপুর থানা পুলিশ।
এর পর অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, কথিত দুই ভূয়া সাংবাদিক গ্রেপ্তারে এলাকায় শান্তি ফিরে এসেছে।
তারা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও চাঁদাবাজি করে আসছিল।
প্রসঙ্গত, কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নিরেন দাস গত ২৯ মে সরকারিভাবে ধান কেনার তথ্য সংগ্রহের সময় সাংবাদিক নিয়াজ মোরশেদকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
ওই সময় সে তৎকালীন খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কানিজ শারমীনের তার হাতে চাঁদার টাকা তুলে দেন।
এ সময় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক নিয়াজ মোরশেদ টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হন নিরেন।
এক পর্যায়ে সে এই প্রতিবেদককে মারধর ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (ওসি ) আবু ওবায়েদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আবু রায়হানকে জয়পুরহাট সদর এলাকা এবং নিরেন দাসকে আক্কেলপুর পৌরসদরের পুরাতন বাজার এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আজ সকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।