আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২০
দুর্নীতির মামলায় ২ বছর এক মাস ১৭ দিন কারাবন্দি থাকার পর বুধবার (২৫ মার্চ) দুপুরে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে হুইলচেয়ারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ছয়তলা কেবিন ব্লক থেকে নিয়ে আসা হয় তাকে।
এরপর হাসপাতালে অপেক্ষমাণ গাড়িতে (ঢাকা-মেট্রো-ভ ১১-০৬৯২) করে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র দিকে রওনা দেন খালেদা জিয়া।
এ দিকে দীর্ঘদিন পর নেত্রীর মুক্তির খবরে হাসপাতালে ভিড় জমান দলের হাজারও নেতাকর্মী। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে অপেক্ষা করেন খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে।
করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতনতার কথা বলে পুলিশ সদস্যরা বারবার সতর্ক করলেও কোনোভাবেই নেতাকর্মীদের সেই ভিড় কমানো যায়নি। অবশেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাইক হাতে নেতাকর্মীদের ভিড় কমানোর ঘোষণা দিলে এতেও কোনো কাজ হয়নি।
খালেদা জিয়া গাড়িতে ওঠার সময় গাড়ির চারপাশ ঘিরে নেতাকর্মীরা ‘খালেদা, খালেদা, জিয়া, জিয়া, আমার মা, আমার মা’ স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে গতকালই তার গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাসায় ফেরার পর আত্মীয়-স্বজনরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে তার মতামত জানবেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই চূড়ান্ত হবে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
গতকাল এক বৈঠকে পরিবারের সদস্যদের অনেকে তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করার পক্ষে মত দেন। আবার অনেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে সরাসরি হাসপাতালে নেয়ার পক্ষে মত দেন।
এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইডেটে ভর্তির কথা বলেন তারা। তবে এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার মতামতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। সেই আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। তবে তার জামিনের আবেদন গত বছর ৩১ জুলাই হাইকোর্ট এবং গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ খারিজ করেন। এ অবস্থায় নতুন করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সেদিনই তাকে কারাগারে নেয়া হয়। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। যদিও এ মামলায় হাইকোর্ট ওই বছরের ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ জামিন বহাল রাখেন।
তবে অন্য মামলায় জামিন না পাওয়ায় তিনি মুক্তি পাননি। এ মামলায় হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এক রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এই মামলায় খালেদা জিয়ার করা জামিনের আবেদনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন।