আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২০
করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই বরিশালে।
সোমবার থেকে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৯ রোগী করোনা আক্রান্ত কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভুলক্রমে তাকে করোনা ইউনিটে পাঠানো হয় বলে দাবি তার।
এছাড়া মারা যাওয়া অপর ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা নিশ্চিত হওয়াও জরুরি।
ঢাকায় নমুনা পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
বরিশালের নাগরিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ‘করোনা আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষার ব্যবস্থা যদি নাই থাকে তাহলে এর বিস্তার ঠেকাবে কি করে কর্তৃপক্ষ?
বরিশালে শেবাচিম হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একটি নতুন ভবনে স্থাপন করা হয়েছে করোনা ইউনিট।
কর্তৃপক্ষ ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ইউনিট স্থাপনের দাবি করলেও প্রকৃত পক্ষে শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে মাত্র ২০টি।
তাও আবার এ ইউনিটে নেই বিল্টইন লাইন অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন এবং আইসিইউ।
সোমবার এ ইউনিটে প্রথম ভর্তি করা হয় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ১ জনকে। গত ৭ দিনে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮ জন।
২ জন ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
শনিবার রাত এবং রোববার সকালে মারা গেছেন দু’জন। রাতে মারা যাওয়া রোগীর নাম নিরু বেগম (৪৫)।
বরিশাল নগরীর কাউনিয়া পুরান পাড়া এলাকার দুলালের স্ত্রী নিরু বেগমকে রাত পৌনে ১২টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা।
করোনার উপসর্গ পাওয়ার পর তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তির জন্য পাঠান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।
সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘নিরু বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ দিন আগ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তার সব হিস্ট্রি এবং অন্যান্য উপসর্গ মিলিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে তার করোনা ছিল না।
যে কারণে লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।’
নিরু বেগম মারা যাওয়ার ৮ ঘণ্টা পর রোববার সকাল ৮টায় করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাকির হোসেন (৪৬) নামে আরও একজন।
পটুয়াখালীর সদর উপজেলার গোহানগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শনিবার বিকালে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশালে পাঠানো হয়।
এখানে আসার পর করোনার উপসর্গ থাকায় ভর্তি করা হয় শেবাচিমের করোনা ইউনিটে।
চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় রোববার সকালে মারা যান তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, ‘এ রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে ঢাকায় আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে।
তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জাকিরকে সমাহিত করা হবে।’
মারা যাওয়া জাকিরের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে কিনা জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি।
দেখি কি করা যায়।’
তবে হাসপাতালের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বরিশাল থেকে শনিবার পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ভর্তি থাকা কোনো রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়নি।
অবশ্য এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কোনো গাফিলতি নেই।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, ‘এটি একটি কঠিন এবং চরম বিপজ্জনক প্রক্রিয়া।
নমুনা সংগ্রহের সময়ও ছড়াতে পারে করোনা।
সংক্রমিত হতে পারে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা।
আমি যতদূর জানি শুক্রবারই প্রথম নমুনা সংগ্রহ এবং তা কিভাবে ঢাকায় পাঠাতে হবে তার প্রশিক্ষণ পেয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটাই চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
নমুনা ঢাকায় পাঠানোর জন্য ব্যবহার করতে হয় বিশেষ ধরনের কিট।
এটি শেবাচিম হাসপাতালে আছে কিনা তা আমার জানা নেই।’
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘নমুনা পাঠানোর জন্য ঢাকা থেকে কোনো কিট আমরা পাইনি।
এছাড়া প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও আমাদের ছিল না।
বর্তমানে আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানোর।
এতে সফল হলে আশা করি আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’
এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা কেন এসব ব্যবস্থা নেননি জানতে চাইলে পরিচালক বাকির বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নেইনি এটা ঠিক নয়। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় প্রতি পদক্ষেপে নতুন নতুন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
তাৎক্ষণিকভাবে সেই সমস্যার সমাধানও করা হচ্ছে।
আশা করি এরপর আর ঝামেলা হবে না।’
বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শুনে অবাক লাগছে যে বরিশাল থেকে ঢাকায় নমুনা পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।
তাহলে এ ৪-৫ মাস তারা কি করল?
করোনা সন্দেহে কোনো রোগী ভর্তি হওয়ার পর সবার আগে প্রয়োজন তার নমুনা পরীক্ষা।
পরীক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
কিন্তু পরীক্ষারই যদি ব্যবস্থা না থাকে তাহলে করোনার বিস্তার ঠেকাবেন কি করে?