• ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জার্মানীতে করোনায় আক্রান্ত বরিশালের যুবকের করুণ আর্তনাদ

report71
প্রকাশিত মার্চ ৩১, ২০২০, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
জার্মানীতে করোনায় আক্রান্ত বরিশালের যুবকের করুণ আর্তনাদ

বরিশাল ব্যুরো

জার্মানীতে বসবাসকারী বাংলাদেশী প্রবাসী জুনায়েদ আহমেদ সজীব তার ফেইজবুক পেইজে কেরানায় আক্রান্তের পর নিজের অবস্থা এমনভাবে প্রকাশ করেছেন যা শুনলে সবারই হৃদয় কেপে উঠবে।

সজীব বরিশাল সিটি করর্পোরেশন এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা।

দীর্ঘিদন যাবৎ জার্মানীতে অবস্থান করেছন।

সজীবের সেই অনুভূতি পাঠক আপনাদের মাঝে হুবহু তুলে ধরা হলো..

আক্রান্ত হবার ৫ম দিন রাতে যেদিন আমি ১২১কল করে ডাক্তার ডাকি সেদিন আমি নিশ্চিত হই আামি এই ভাইরাস প্রবাহ চলছে শরীরে। আর ডাক্তার এসে যখন আমাকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে চলে গেল। সেদিন সারা রাত আমি ঘুমোতে পারি নি।

আমি শুধু কেদেছি, শুধু কেদেছি। আমার শরীরে তখন এমন একটা রোগ যেটায় ৩% মানুষ মারা যায়। হোক ৩%, হোক ০.৩%, মারা যায় তো। আমি যে ৩% এ পরবো না তার নিশ্চয়তা কি? ওই রোগটার এই দুনিয়াতে কোন চিকিৎসা নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত শহর এবৎসধহু এর ডাক্তার আমাকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে চলে গেল। আমার আর যাবার যায়গা কোথায় ছিল?

আমি শরীরে তখন এমন এক রোগ নিয়ে বাস করছি যেই রোগের ভয়ে আমার কাছে কেউ আসবে না। সারা রাত আমি কেদেছি শুধু এই জন্য নয় যে আমার এই মরনব্যাধী হয়েছে, আমি তো মরে যেতে পারি। আমি সারা রাত কেদেছি এই ভেবে যে আমি যদি এখানে মারা যাই কেউ আমার লাশ আমার দেশে পাঠাবে না, করোনায় মারা যাওয়া লাশ পাঠানো অসম্ভব। তাহলেতো আমার মা কোন দিন আমার কবরের পাশে এসে দাড়াতে পারবে না।

কেউ কোন দিন আমার লাশের পাশে দাড়িয়ে সূরা ফাতিহা পরবে না। একটা ফুল দেয়াতো দূরে থাক কেউ হয়ত জানবেই না আমার কবরটা কোথায়। আমার মা সারাটা জীবন এই বলে কাদবে আমার ছেলের লাশটা তোমরা আইনা দাও। আমার বোনের ছেলে মেয় হয়তো পাগল হয়ে যাবে।

এখানে মারা গেলে আমাকে কোথায় কবর দিবে আমি জানি না। জানাযা হবে না, গোসল হবে না। এমন মৃত্যু আমি চাই নি, এমন সময়ে মৃত্যু আমি চাই নি। আমি আমার মায়ের, পরিবারের আমৃত্যু কান্নার কারণ হতে চাই নি।

আমি সারা রাত আলøাহর কাছে কেঁদেছি আর বলেছি আলøাহ তুমি আমাকে এখনি নিও না, আর একটু সময় দাও অন্তত মা যতদিন বেচে আছে। আর যদি নিতেই হয় আমারে তুমি এখান থেকে নিও না। যদি এখান থেকে নেয়ই তবে কোন উছিলায় আমার দেহ টা আমার বাড়ীতে পৌছার সুযোগ দিও আলøাহ \

কি ভয়ংকর, কি শুণ্য, কি নির্মম, কি আতংকে সে দীর্ঘ রাত আমি একা পার করেছি আমি জানি। এরপর সুস্থ হবার আগ পর্যন্ত কোন রাত আমি ঘুমোই নি। যদি ঘুমের মধ্যে মরে যাই?

আমার জ্বর ছিল বলে আমি বাসায় কথা বলতাম না, যদি তারা বুঝে যায় আমি করোনা ভাইরাসে নিয়ে বসবাস করছি কল দিলে কল কেটে দিতাম, ম্যাসেজ লিখতাম আমি ব্যা¯Í, পরে কল দিবো। নিজের সাথে নিজে কথা বলতাম, আমি নিজেকে বোঝাতাম আমাকে বেচে থাকতেই হবে।, আমাকে বেচে থাকতে হবে।

যে কোন বয়সেই একটা মানুষ মারা যেতে পারে কিন্ত আমার মতো ২৭ বছরের একটা ছেলে বিশ্বাস করে সে আরো অনেক দিন বাচবে। সেই বিশ্বাস নিয়ে আমিও বেচে ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ এই করোনা আমার সেই বিশ্বাসে এমন ভাবে আঘাত করে যে আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। প্রতিদিন সকালে উঠে দেখতাম আজ কতজন মারা গেল। আমার বয়সের কজন মারা গেল।

লাশের মিছিলের সংখ্যা বুকে কাপন ধরাতো। তবু বেচে থাকতে হবেই এই জেদ আমার নিথর দেহকে বিছানা থেকে তুলে ওযু করাতো, নামায পড়াতো, খাওয়ার শক্তি দিত। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সারা শরীরে তীব্র ব্যাথা হয়, গলায় অসহনীয় অবর্ণনীয় ব্যাথা হয়, দাড়ানো তো দূরের কথা বিছানা থেকে ওঠার শক্তি পর্যন্ত পাওয়া যায় না, সেই শরীর নিয়ে আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে খাবার তৈরি করেছি, চা বানিয়েছি, ওষুধ খেয়েছি, গোসল করেছি, ভিটামিন সি থেকে শুরু করে আরো যা যা খেতে হয় রেডি করেছি।

পেরেছিলাম কারন আমার মনে জেদ ছিল আমাকে বাচতে হবে, বাচতে হলে আমাকে আমার সুস্থ করতেই হবে। আমার এ্যান্টি বোডিকে আমি হারতে দিবো না। আলøাহ না করুক আপনারা কেউ যদি আক্রান্ত হন এই জিততে হবে জেদটা রাখবেন, নইলে মানসিক ভাবে ভেঙে পরলে আর বিছানা থেকেই উঠতে পারবেন না।

যেদিন সকালে শরীর আর গলাটা একটু ভালো হলো, বুঝলাম আমি হয়তো সুস্থ হচ্ছি, এযাত্রায় হয়তো আলøাহ আমাকে রক্ষা করবেন। আমরা তরুণরা কারণে অকারনে বাইরে যাচ্ছি কারন আমরা ভাবছি আমরাতো মরবো না।

আপনি তরুণ বলে আপনি হয়তো মরবেন না কিন্তু ভাইরাসের বাহক তো হচ্ছেন। আপনার থেকে আপনার বাসার সবার কাছে বিশেষ করে বয়স্ক সবার কাছে এটা পৌছে যাচ্ছে। তবে নতুন তথ্য হচ্ছে তরুনরাও মারা যাচ্ছে, কম। নিজের জন্য না হোক। বাবা-মায়ের অন্তত তাদের জন্য ঘরে থাকেন। প্লিজ। ##