আপডেট: এপ্রিল ১২, ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে পরিবারগুলোতে।
ত্রাণ বিতরণের লাইনেও দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে খাদ্য সামগ্রীর জন্য এত বেশি মানুষ ভিড় জমিয়েছিল যে অপেক্ষমাণ গাড়ির লাইন প্রায় ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ নতুন করে সরকারি খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করছেন।
আপাতত তাদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণের জন্য বেশকিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।
সেখানে উপচে পড়ছে মানুষ।
দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
লস অ্যাঞ্জেলেস রিজিওনাল ফুড ব্যাংক বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের কাজ করছে।
সেখানকার প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্লুড জানান, তাদের এ ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি সংকটে থাকা মানুষদের সহায়তা করার একটি ভালো উপায়।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বিভিন্ন জায়গায় তারা এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
প্রতিদিন এক-দুইবার এ কর্মসূচি চালানো হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, তাদের সংগ্রহে যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী আছে তা দিয়ে আড়াই হাজারের বেশি পরিবারকে সহযোগিতা করা যাবে।
প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ১৬ কেজি চাল, ডাল, ফ্রোজেন মুরগী, কমলা ও অন্য খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
নর্থ হলিউডের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী জুয়ানা গোমেজ খাবার সংগ্রহ করতে লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছয় সন্তান।
সবার খাবারের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আমার স্বামী নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো, তবে এখন আর আমরা বাড়ি ভাড়া দিতে পারি না’।
গলফ টুর্নামেন্টগুলোতে স্বাধীন কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন ৪০ বছর বয়সী ডেনিয়েল জিমিনেজ।
শনিবার সন্তানদের নিয়ে তিনিও এসেছিলেন খাবার সংগ্রহের জন্য।
তিনি জানান, এ খাবারগুলো পাওয়ায় আমার টাকা বেঁচে যাচ্ছে।
কারণ, আমার এ অল্প আয়ের টাকা বাড়ি ভাড়া দিতেই চলে যাবে।
তিনি আরও জানান, ‘তিন সপ্তাহ ধরে আমি কাজে যাচ্ছি না।
অল্প কিছু টাকা যা জমানো ছিল তাও বাড়ি ভাড়া, গ্যাস বিল ও সেলফোন বিল দিতেই চলে যাচ্ছে।
জানি না আমরা আবার কবে কাজে ফিরতে পারব।
ড্যানিয়েল যখন কথা বলছিলেন তখন স্বেচ্ছাসেবীদেরকে দেখা গেছে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে।
লস অ্যাঞ্জেলেস রিজিওনাল ফুড ব্যাংক এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্লুড বলেন, ‘আরও অনেক মানুষ নতুন করে খাদ্যাভাবের মধ্যে পড়ছে।
তারা জানে না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে’।
তিনি জানান, আরও অনেক মানুষ এখন হঠাৎ করে বেকার ভাতা ও সরকারি খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করছে।
মাইকেল ফ্লুড বলেন, ‘তাদের ওইসব সুবিধা পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি যেন আমরা পরিবারগুলোর হাতে খাবার তুলে দিতে পারি, যেন তারা খেতে পারে’।
শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় মহামারি করোনাভাইরোসে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এখন ৫ লাখ ১ হাজার ৬১৫।
আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেনে এই সংখ্যাটা ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ হাজার ৭৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশটির সব অঙ্গরাজ্য এবং অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য।
নিউইয়র্ক মহানগরীতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে এতবেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানে এমন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে যে, নিরুপায় হয়ে লাশগুলোকে গণকবর দেয়া হচ্ছে।