২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে জনমনে সন্দেহ

আপডেট: মে ৩০, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত ও নির্ভুল টেস্ট নিয়ে আশঙ্কা কাটছেই না। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সমন্বিত কোনো উদ্যোগের কথা কেউ জানে না। একেক প্রতিষ্ঠান একেকভাবে নমুনা সংগ্রহ করছে। ফলে ভুক্তভোগীদের নির্ভুল রিপোর্ট নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।

৩৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি জানান, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি করোনা পরীক্ষা করেন। তার দুই নাক থেকে নমুনা নেয়া হয়। একই সঙ্গে নেয়া হয় রক্ত। দু’দিন পর তার মুঠোফোনে এসএমএস দিয়ে জানানো হয়, তিনি ‘পজিটিভ’। তিনি চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেয়ে এখন সুস্থ হওয়ার পথে।

ওই যুবকের উপসর্গ ছিল জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট আর শারীরিক দুর্বলতা। প্রায় একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে একই হাসপাতালে আরেকজন স্যাম্পল দেন। তবে তার রক্ত সংগ্রহ করা হয়নি। শুধু নাক থেকে স্যাম্পল নেয়া হয়। তিনি রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন।

সরকারের পাশাপাশি বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট সেবা দিচ্ছে। তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীদের সেবায় কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানে স্যাম্পল প্রদানকারী দু’জন রোগীর দু’রকম বর্ণনা দিচ্ছেন। একজনের এক নাক থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়। আরেকজনের দুই নাক থেকে।

দু’জনের প্রায় এক রকম সমস্যা। হালকা গলা ব্যথা। মাঝে মাঝে দু-এক ঘণ্টার জন্য জ্বর আসে আবার চলে যায়। তারা অধিক সতর্কতার জন্য পরীক্ষা করান। তাদের রক্তের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়নি।

অন্যদিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি টিম বাড়ি গিয়ে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার স্যাম্পল সংগ্রহ করে। ওই টিম বৃদ্ধার মুখ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে। তবে নাক থেকে কোনো স্যাম্পল নেয়া হয়নি বা রক্তও সংগ্রহ করা হয়নি।

এমন অসংখ্য নজির আছে স্যাম্পল সংগ্রহের ক্ষেত্রে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমত, নমুনা সংগ্রহে যদি গাফিলতি থাকে বা রোগীর আদ্যোপান্ত না জেনে কিছু একটা নমুনা নেয়া হল বলে বুঝ দেয়া হয় তবে তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। এর সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু যদি সঠিকভাবে নিয়ম অনুযায়ী স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয় তাহলে একবার নেগেটিভ আরেকবার পজিটিভ- এমন রিপোর্টের শঙ্কা কমে আসবে।

কেন এমনটি হচ্ছে- জানতে চাইলে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমি কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি- ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে নমুনা সংগ্রহে বড় ধরনের গোলমাল হচ্ছে। ঢাকায় আমার যে অভিজ্ঞতা তা খুব একটা সুখকর বলা যাবে না। যারা স্যাম্পল সংগ্রহ করছে তাদের একদিকে ট্রেনিংয়ের ঘাতটি আছে। অপরদিকে তারা এক ধরনের অভিভাবকহীন। সমন্বিত কোনো নির্দেশনাও তাদের কাছে নেই। ফলে কেউ স্যাম্পল নিচ্ছে এক নাক থেকে, কেউ দুই নাক থেকে, কেউ গলা থেকে, কেউ মুখ থেকে লালা নিচ্ছে, কেউ জিহ্বা থেকে। আবার কেউ রক্ত নিচ্ছে। কেউ নিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির সেবার চেয়ে হয়রানি বেশি হবে। পজিটিভ না নেগেটিভ তা নিশ্চিত হতে তাকে বারবার পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।

এর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীলদের অনীহার কারণেই এটি হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তাদের কোনো মনিটরিং নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনই সংশ্লিষ্টদের বসতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সমন্বিত। থাকতে হবে মনিটরিং।

এদিকে ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও একইরকম ঘটনা ঘটছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। একজন আক্রান্ত রোগী উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানান, এখানে ব্লাড স্যাম্পল কালেকশন করা হচ্ছে না। এর কারণ কী জানতে হলিমাইন্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম আল ফয়সাল বলেন, ব্লাড থেকে এন্টিজেন ডিটেকশনে পর্যাপ্ত মেটারিয়ালস এবং ল্যাব ও টেকনিশিয়ানের অভাবে এটি হতে পারে।

ইউনিভার্সেল পালমো ফিটের চেয়ারম্যান, চেস্ট ফিজিশিয়ান প্রফেসর ডাক্তার রাশিদুল হাসান বলেন, নির্ভুল পরীক্ষা যেমন দরকার, তেমনি পরীক্ষাটা যাতে দ্রুত করা যায় সেটাও নিশ্চিত করা দরকার। কারণ রোগীর অবস্থা যখন খুব গভীরে পৌঁছে যায়, তখন পরীক্ষা করে খুব ভালো কিছু আসে না। সামনে অন্ধকার পথ। উপসর্গ দেখা দিলে আগেভাগে যদি ‘রিয়েল টাইম পিসিয়ার’ করা যায় তাহলে খুব ভালো। আর এর জন্য র‌্যাপিড কিট চালু করতে হবে। নির্ভুল রিপোর্ট যদি করা না যায় তাহলে ভুল রিপোর্ট আসবে। আর এই ফাঁকে আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনি, হার্ট সব ক্ষতি হয়ে যাবে। ভাইরাসটি রক্তনালির ভেতর ঢুকে রক্ত জমাট করে দেবে।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা সঠিক হলেই জানা যাবে রোগীর আক্রমণটা ফুসফসে হয়েছে কিনা। যদি সেটি নিশ্চিত করা যায় তাহলে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। আর তা না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটবে।

তিনি বলেন, হাঁচি-কাশি, শরীর ব্যথা ও জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হলে নমুনা সংগ্রহের সময় বা পরে আরও তিনটি টেস্ট নিতে হবে। একটি হল বুকের এক্স-রে। বাকি দুটির একটি সিবিটি আরেকটি সিআরপি টেস্ট।

এদিকে নমুনা সংগ্রহ বা টেস্ট ঠিকমতো হল কিনা সে বিষয়ে নোয়াখালী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ডা. আকরাম হোসেন নাঈম বলেন, কেউ করোনার সিম্পটম অনুভব করলে, টেস্ট করিয়ে ফেলবেন। আপনার টেস্ট ঠিকমতো হল কিনা অথবা আপনার স্যাম্পল ঠিকমতো কালেকশন হল কিনা সেটা বুঝতে কয়েকটা জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার কাছ থেকে তিনটি স্যাম্পল কালেকশন করবে। এক. ন্যাজাল সোয়াব, দুই. থ্রোট সোয়াব, তিন. ব্লাড স্যাম্পল।

তিনি বলেন, সোয়াব স্টিক দিয়ে নাসারন্ধ্র মধ্যে ন্যাসো ফ্যারিংস থেকে ন্যাজাল সোয়াব কালেকশন করে টেস্ট টিউবে স্যাম্পল নেয়া হবে। এ সময় আপনার সামান্য একটু ব্যথা অনুভব হতে পারে। সোয়াব স্টিকে মুখের মধ্য দিয়ে ওরোফ্যারিংস থেকে থ্রোট সোয়াব কালেকশন করে টেস্ট টিউবে স্যাম্পল নেয়া হবে। এছাড়া সিরিঞ্জ দিয়ে ব্লাড স্যাম্পল কালেকশন করা হবে। যেটা দিয়ে এন্টিজেন ডিটেক্ট করে করোনা পজিটিভ-নেগেটিভ বোঝা যাবে। প্রথমবার তিনটি স্যাম্পল নেয়ার কারণ হল- অনেক সময় করোনা টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ে না। তাই এক্ষেত্রে প্রথমবার তিনটি স্যাম্পলের যে কোনো একটি পজিটিভ এলে তাকে করোনা পজিটিভ ধরা হয়। তিনটি স্যাম্পল কালেকশন করে, আরটিপিসিআর ল্যাব টেস্ট করা হয়। ৩-৪ ঘণ্টা সময়ের পর রেজাল্ট আসে। সেই রেজাল্টের ভিত্তিতে আপনাকে পজিটিভ-নেগেটিভ জানানো হবে।

হলিমাইন্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম আল ফয়সাল বলেন, পজিটিভ আসামাত্র আপনার আশপাশের কনটাক্টে যারা ছিলেন তাদেরও টেস্ট করাতে হবে। আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে যেতে হবে। যদি তেমন কোনো সিম্পটম না থাকে আর বাসায় হোম কোয়ারেন্টিন মেইনটেইন সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে বাসায় সিম্পটমেটিক চিকিৎসা নেয়া সম্ভব।

করোনা থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য রেপিড কিট দিয়ে করোনা শনাক্তকরণের বিকল্প নেই উল্লেখ করে ডা. ফারিয়া নুঝহাত বলেন, সরকারকে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। রেপিড কিট দিয়ে দ্রুত রেজাল্ট দিয়ে পজিটিভ রোগীদের যথাসম্ভব আইসোলেটেড করে ফেলতে হবে। তাহলে বিস্তার কমে যাবে এবং করোনার সংক্রমণ একদম কমিয়ে আনা সম্ভব। যে হারে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, দেশের মানুষ তথা দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে রেপিড কিট দিয়ে টেস্টের বিকল্প নেই।

নারায়ণগঞ্জ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. রেজাউল করিম জানান, ৫-৭ শতাংশ রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়তে দেখছি। তাদের অবশ্যই ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হবে। তবে আমরা একজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে চাই না। আমরা চাই পরীক্ষার শুরুতেই যেন তার সঠিক সমস্যা চিহ্নিত হয় এবং তিনি যথোপযুক্ত চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network