২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

২৮ বছরে বাউবি : আধুনিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব চাই

আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
  • জিসান তাসফিক

গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ২১ শে অক্টোবর। উন্মুক্তভাবে শিক্ষা বিস্তারের জন্য পৃথিবীর প্রত্যেকটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আজ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা হয়েছে যা সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। শিক্ষা তার মধ্যে একটি । যেকোনো মানুষই শৈশব থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ । আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালু হয় সেই হাজার বছর আগে থেকে। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশে তৃতীয় ও বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে বাউবি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পরিচিত । খুব পরিচিতি পেলেও বাউবিকে অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না। কেননা বাউবির মূল উদ্দেশ্য তথ্য ও প্রযুক্তিসহ সব মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা। বাউবি আইন ১৯৯২ এর ৯ ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে বাংলাদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার স্থাপনা বাউবিতে হয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা বলার কারণ – আধুনিকতা বলতে আমরা বুঝি উন্নত প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, বিভিন্ন ডিভাইস, ডিজিটাল ক্লাসরুম ইত্যাদির ব্যবস্থা। এ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে তথা বাউবিতে পড়াশোনা করা যায়। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখি। এর মধ্যে বড়ো উদাহরণ হল করোনা মহামারিতে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান যে শিক্ষাপদ্ধতি চালু রেখেছে সেটাও এক ধরনের দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি। আবার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাউবির শিক্ষাবিস্তার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ শাইখ সিরাজ স্যারের বিখ্যাত প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাউবি আলাদা কারণ বাউবিতে যেকোনো বয়সের মানুষ অধ্যয়ন করতে পারে, নিকটস্থ স্টাডি সেন্টার রয়েছে এবং আছে দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোকে বাউবি নিজেদের স্টাডি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ।

বর্তমানে গাজীপুরে বাউবির মূল ক্যাম্পাস, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ টি আঞ্চলিক ক্যাম্পাস ও ৮০ টি উপআঞ্চলিক ক্যাম্পাস বা কেন্দ্র রয়েছে। মূল ক্যাম্পাসে বর্তমানে এমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি চালু আছে। এছাড়া ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রের ক্যাম্পাসে বাউবির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ৮ টি অনার্স/মাস্টার্স এর বিভাগ/কোর্সসহ মোট ১০ টি কোর্স চালু আছে। এছাড়াও ১৫০০ এর অধিক স্টাডি সেন্টারে এসএসসি হতে এমবিএ পর্যন্ত অনেকগুলো কোর্স চালু আছে। বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবী শিক্ষার্থী, নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অনিয়মিতরা অধ্যয়ন করছে। বাউবির শিক্ষার্থীদের পরিসংখানে দেখা যায় যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই কর্মজীবী কিংবা চাকুরীজীবী। কিন্তু সে অনুযায়ী বাউবিতে কারিগরি শিক্ষামূলক কোর্স চালু নেই। সাধারণ ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাউবিতে প্রায় ৬ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। যার বিশালসংখ্যকই কর্মজীবী শিক্ষার্থী যারা বাউবিতে আছেন। আমাদের দেশের এই বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীকে তত্ত্বীয় নয় বরং কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী সাধারণত কাজ শেষে তত্ত্বীয় শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী কম হয় কারণ এটি তার কর্মে প্রয়োজন নেই। কিন্তু কর্মমুখী শিক্ষা হলে সেখানে শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছায় শিক্ষাগ্রহণ করবে কারণ এটি তার পেশাগত কাজে লাগবে অন্যথায় শুধুমাত্র সনদের জন্য আসবে এবং অসাধু উপায় অবলম্বন করার চেষ্টাও করবে প্রয়োজনে।

এছাড়া কাঠামোগত ও সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী বাউবি উন্নত হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় যে তারা একাডেমির বাইরেও অন্যান্য শিক্ষাগ্রহণে যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে থাকে। বাউবির শিক্ষার্থীদের জন্য এই সকল সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রতিটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে বাউবির নিজস্ব অর্থায়নে কিংবা সরকারি বাজেটে উচ্চ শিক্ষার ক্যাম্পাস করা যেতে পারে। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সেমিনারে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও স্বল্পমেয়াদি প্রফেশনাল কোর্স চালু হতে পারে। প্রয়োজন আরও লাইব্রেরির ব্যবস্থা করা, ই-বুক আধুনিক ও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। ই-বুকে শুধু বাউবি নয় দেশের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও এর সুবিধা নিতে পারবে। প্রতিটি উপআঞ্চলিক কেন্দ্রে লাইব্রেরি স্থাপন করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন। তাহলে বাউবির গরিব শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে কাজের ফাঁকে অধ্যয়ন করতে পারবে। উপআঞ্চলিকপর্যায়ে স্বল্পমেয়াদি কারিগরি কোর্স চালু করা যেতে পারে যাতে বাউবিসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন যেটাকে অ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন বলে, সেটা থাকে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থীদের সাফল্য জানা যায়। দীর্ঘ ২৮ বছরে এটির অনুপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের জন্য অকল্যাণকর যার ফলে বর্তমানে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। বাউবির কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক পর্যায়ে এটা করা যেতে পারে।

পরিশেষে এটাই বলা যায় যে দীর্ঘ ২৮ বছরের পদযাত্রায় বাউবি ও এর শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য সম্পদে পরিণত হয়েছে, হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি আরও সম্মানিত স্থানে যেতে পারবে।

লেখক
জিসান তাসফিক,
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, পঞ্চম ব্যাচ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network