১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

অপরাধের কারণিক বিশ্লেষণ

আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

মোঃ লিয়াকত চৌধুরী
বর্তমান সময়ে অপরাধ একটি সর্বজন জ্ঞাত শব্দ। অপরাধ তথা ক্রাইম শব্দটি ল্যাটিন ভাষায় উদ্ভূত সার্নো শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হলো, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমাজে বহু উদ্বেগ সৃষ্টি করে অপরাধ নামক শব্দটি। মানব সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে অপরাধ সম্পর্কিত ধ্যান ধারণায়ও পরিবর্তন এসেছে।
প্রাচীন কালে অপরাধ বলতে শুধুমাত্র রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও ধর্মীয় অবমাননাকর কর্মকাণ্ডকে বুঝানো হতো এবং হত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। ধীরে ধীরে সভ্যতার বিবর্তনের মাধ্যমে অপরাধ বিবেচনার পরিধি বৃদ্ধি পায় ।

অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিস্থিতি দায়ী থাকে তবে অপরাধ মন সৃষ্টি না হলে অপরাধ সংঘটিত হওয়া সম্ভবপর নয়। প্রত্যেকটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জন্য সংঘটনকারীর অপরাধ মন সৃষ্টি হওয়া আবশ্যক । অপরাধ হলো সমাজের অন্তর্গত সামাজিক ব্যধি যা মানব মনে বসবাস করে। অপরাধ মন সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করেছেন, আর তা হলো : জৈবিক কারণ, মনস্তাত্ত্বিক কারণ, অর্থনৈতিক কারণ, সমাজতাত্ত্বিক কারণ এবং ভৌগোলিক কারণ।

অপরাধ মন সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে সব দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা হয়েছে সবগুলো দৃষ্টিভঙ্গির মূল হলো অপূর্ণতা । জৈবিক অপূর্ণতা, মনস্তাত্ত্বিক অপূর্ণতা, অর্থনৈতিক অপূর্ণতা, সামাজিক অপূর্ণতা, এবং ভৌগোলিক অপূর্ণতার কারণেই অপরাধ মন সৃষ্টি হয় এবং অপরাধ সংঘটন ।

বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানী মনে করেন অপরাধ মন সৃষ্টি হয় জৈবিক কোন ত্রুটির কারণে, অর্থাৎ মানব দেহের বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা কিংবা ত্রুটি যেমন: মুখমন্ডলের আকৃতি, মস্তক খুলির আকৃতি বা শারিরীক গঠনের অস্বাভাবিকতা বা ভেদাভেদ কিংবা হরমোনগত ত্রুটি ইত্যাদির কারণে অপরাধ মন সৃষ্টি হয় ।

মনস্তাত্ত্বিক কারণ হলো অপরাধ মন সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, মানুষ অপরাধ করার জন্য তাদের মন সবচেয়ে বেশি প্রলোব্দ করে, আর ঈর্ষাপরায়ণতা, হীনমন্যতা, হতাশা, স্বার্থ ও আদর্শগত দ্বন্দ, দুর্বল-চিত্ত এবং মানসিক রোগগ্রস্ত ব্যাক্তিত্ব মানুষের মনকে অপরাধ প্রবণ করে তুলে । অপরাধের অপর একটি করণ হলো অর্থনৈতিক। যখন মানুষ দারিদ্র্যের অবগাহন করে তখন তার মনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়, যার ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এর মতো অপরাধ করে। আবার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ব্যাক্তির দরিদ্র মানুষের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে ।

অপরাধ মন সৃষ্টির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়বদ্ধতা বহন করে সমাজ। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার অন্যতম করণ হলো বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থা, সমাজ বিজ্ঞানী Edwin H. Sutherland অপরাধের কারণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার Differential Association theory-তে বলেন অপরাধ হলো সামাজিক শিক্ষার ফল।
সমাজে বসবাসরত মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ, সামাজিক সভ্য আচরণ শিক্ষা ইত্যাদির অপূর্ণতার দরুন অপরাধ মন সৃষ্টি হয়। অপরাধ মন সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক কারণও দায়ী হয়, ভৌগোলিক কারণে সভ্যতা এবং সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন লক্ষ করা যায় আর যা অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে অপরাধ প্রবণ করে গড়ে তুলে ।

সমাজে নিন্দনীয় সকল কাজ অপরাধ নয়, প্রত্যেক ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য উক্ত ভৌগোলিক সীমার সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন অমান্যকারী সকল কর্মকাণ্ড অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অপরাধ সংঘটনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সমাজ, কারণ অপরাধ, নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ব বা উত্তম আদর্শ এসকল কিছু শিক্ষা লাভ হয় পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিবেশী কিংবা কনিষ্ঠ ব্যাক্তিবর্গের মাধ্যমে আর এসকল ব্যাক্তিত্ব নিয়েই সমাজের সৃষ্টি।

অপরাধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে উল্লেখিত সকল দৃষ্টিভঙ্গির দায়বদ্ধতা কিঞ্চিৎ হলেও বিদ্যমান । কারণ একজন অচল মানুষের পক্ষে অপরাধ প্রবণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, আবার যে ব্যাক্তি সচল তার জন্য অপরাধ করার মানসিকতা তৈরি হতে হবে যা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। তারপর আসে অর্থনীতির দিক, এই ব্যাপারে দুটি যুক্তি হতে পারে যেমন: যার অর্থ সম্পদ কম সে সমাজের অপরাধের ক্যাটাগরির নিচু শ্রেণীর অপরাধে জড়িয়ে পরে, অপর দিকে যার অর্থ সম্পদ বেশি সে অপরাধের ক্যাটাগরির উচু শ্রেণীর অপরাধ কর্মে লিপ্ত যাকে অনেক ক্ষেত্রে সাদা রঙের অপরাধ বা হোয়াইট কালার ক্রাইম বলা হয়। এরপর যদি সমাজকে একই সূত্রে নিয়ে আসা হয় তাহলে দেখা যায় সমাজের প্রচলিত প্রথা কিংবা নিয়মকানুন এর উপর ব্যাক্তিত্ব গড়ে উঠে। নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের বৈষম্য দেখে বড় হওয়া একটা মানুষ তার মনেও বৈষম্যের উদ্ভিদ জন্মায় যার জন্য সে সমাজের সকল নৈতিকতা বিরোধী কাজকে সানন্দে গ্রহণ করে নেয় ।। আর সমাজে বসবাসরত ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে যত সামাজিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার এবং নৈতিক শিক্ষা বিদ্যমান থাকবে সে সমাজে
বেড়ে উঠা মানুষ অপরাধের দিকে ধাবিত অনেক ক্ষেত্রে কম হবে তবে বিচ্যুতিও লক্ষ করা যায় ।। তাই বলা যায় অপরাধের আদি স্থল হলো সমাজ আর যে সমাজের মানুষের মধ্যে সামজিক ও নৈতিক শিক্ষার পরিপূর্ণতা যত বেশি সে সমাজে অপরাধের প্রবণতা তত কম।।

লেখক
মোঃ লিয়াকত চৌধুরী
শিক্ষার্থী
আইন বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ।।
মেইল: anondoraj28@gmail.com

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network