আমাদের আধুনিকতার ছোয়া কিংবা সভ্যজাতি হিসেবে পরিচিতি শুরু বেশি দিন পুরোনো নয়, এই তো২৫০০০ বছর আগের ঘটনা। যদিও আদিম মানুষ তার অনেক আগে থেকেই সমাজবদ্ধ ভাবে সামাজিক জীব হিসেবে বসবাস শুরু করেছিল। মানুষ কেন শুরু করেছিল সমাজবদ্ধ জীবন? এর কারণ খুজতে গেলে দেখা যায়, দলবদ্ধ ভাবে বসবাস তাদের অনেক সুবিধা দিয়েছিল । যেমন, হিংস্র পশুদের হত থেকে আত্মরক্ষায় দলবদ্ধ জীবন ছিল দারুণ এক কার্যকরী উপায়। তার আগে মানুষ বনে-জঙ্গলে বসবাস করত এবং জংলি হিংস্র পশুর ভয়ে তটস্থ থাকতো। এখন আমরা উন্নত সভ্য জীব। আমরা তো এত সহজেই সবকিছু ভুলে যাই না, এখন আমরা প্রতিশোধ নিচ্ছি পশুদের বিরুদ্ধে। প্রকৃতিকেও ছাড়িনি , আরে ছাড়বো কেন, বিরূপ আবহাওয়া কি কষ্টটাই না দিয়েছিলো আমাদের।
আজ আমরা সভ্য, কিন্তু মারন বোমা, বন্দুক,ক্ষেপণাস্ত্র,দাংগা, হরতাল-অবরোধের মতো ঘটনা আমাদের প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে । বন ধ্বংস, মানুষ হত্যা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিভেদ, আমার নিত্যদিনের সময় কাটানোর মাধ্যম।আর ধর্ষণনর কথা কি বলব, সেটা যেন এখন একটা আর্ট! সে তো এক অন্য মাত্রা পেয়েছে । শিশু, বৃদ্ধদের ধর্ষণ কিংবা গনধর্ষনের মতো ঘটনা যেন অতিপরিচিত ঘটনা।ধর্ষণের বিরুদ্ধে মাঠে লড়ে যারা আবার সেই তাদেরকেই দেখা যায় ধর্ষণের সাথে জড়িত।রেহাই পায়না পশুরাও। আবার যুবসমাজের দিকে তাকালে, মাদকের মতো জঘন্য কাজের সাথে লিপ্ত। কি মানতে পারছেন না তাইতো? হাস্যকর তাই না? কিন্তু এটাই বাস্তবতা।
যে পরিবারে নারীদের সম্মান করা হয় না বা নির্যাতন করা হয়, নবজাতক ছেলে মানে আর্শিবাদ আর মেয়ে মানে কলঙ্কের দাগ মনে করা হয়। তাইলে ওই পরিবারের শিশুরাও ঐ প্রবৃত্তি নিয়ে-ই গড়ে ওঠে কারন তারা ভাবে এটাই বুঝি নিয়ম। আবার কেউ কেউ আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজের ওইতিহ্যকে ভুলে যেতে বসেছি। আমরা যে কত উন্নত তারই প্রমাণ দিচ্ছি তাই না??
মানুষকে এখন আর বনের হিংস্র পশুর থেকে নয় বরং মানুষের থেকেই সুরক্ষিত রাখতে হয়। বর্তমানে বিশ্বে প্রতিটি দেশের বাজেটে সামরিক খাতে যে পরিমান অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে পৃথিবীর সকল মানুষ খুব সাবলীলভাবেই থাকতে পারে।
স্বাধীনতা মানব জীবনের অন্যতম শর্ত, তবে যেই পানির অপর নাম জীবন,তার অপর নাম কিন্তু মরন। পানি ছাড়া যেমন জীবন বাঁচে না, আবার প্রয়োজনের অধিক পানি তোমায় ডুবিয়ে দিয়ে মৃত্যু মূখী করবে। সন্তানকে ভালোবাসা মানে এই নয়, তার অনৈতিক আবদারও পূরণ করতে হবে। সন্তানের স্বাধীনতায় মাত্রা টেনে দেয়া প্রত্যেক সচেতন মা-বাবার কর্তব্য। সাম্প্রতিক “দিহান-অনুস্কার ” জঘন্য পরিণতির দায় কার? স্বাধীনতা ভাল তবে অতিরিক্ত স্বাধীনতাও জীবন নাশক। তাই এখনও সময় আছে সচেতন হোন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে ,আজ শিক্ষার্থীরাও সেখানেও নিরাপদ নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো বাদ-ই দিলাম, ধর্মীও প্রতিষ্ঠানেও মানুষ আজ নিরাপদ নয়, পত্রিকায় চোখ রাখলেই ভয়াবহতা বোঝা যায়। আমরা এক আজব মানুষ, আজব সভ্যতা।
আজকাল সন্তানকে সময় দেয়ার সময় অভিভাবকদের নেই। কারন, বাবা-মা থাকে তাদের কর্ম ব্যস্ততায় আর তাদের ছেলে-মেয়ে বেড়ে ওঠে তাদের কাজের লোকের সাথে। আপনিই বলুন যার বেড়ে ওঠা কাজের লোকের সাথে তার আচরণ কি বাবা-মায়ের মত হবে? আজ খেলাধুলা আর মাঠে হয় না। কেন হবে অনলাইন গেম আছে না! বন্ধু তৈরি হয় তাও ভার্চুয়াল বন্ধু।তাছারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন অনৈতিক কাজের মাধ্যম। নীল সিনেমা ধ্বংস করছে হাজারো তরুণ-তরুণীর জীবন। হতাশা ঘিরেছে জীবন।
এমন সভ্যতায় পৌছেছি আমরা যা জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না, পারেনা একটা সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে, কি দরকার এই সভ্যতার? তার থেকে সেই আদিম যুগের জংলি পশুর ভয় ও অনেক কম যন্ত্রনার। দেখুন,বুঝুন,ভাবুন , কেন আমরা মানুষ ? কেন আমরা সৃষ্টির সেরা জীব ? প্রমাণ করুন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, ঘুমিয়ে থাকা মানবসত্ত্বা জাগিয়ে তুলুন। আমাদের বিজয় খুবই সন্নিকটে।
মোঃমহিবুল্লাহ