আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২১
খান আব্বাস ॥ অযত্নে ও অবহেলায় বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবামেক) একমাত্র মিউজিয়াম (জাদুঘর) জীর্ন দশায় পরিনত হয়েছে। শেবামেকের প্রতিষ্ঠান জন্ম থেকেই মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার এক যুগ পাড় হবার সাথে সাথেই অযত্নে ও অবহেলায় মিউজিয়মটির অবস্থা এখন জীর্ন দশায় পরিনত হয়েছে। চারদিক থেকে দেখা যায়, এমন সোকেজ, গ্লাস, ঝার, সার্কুলার গ্লাস, বিভিন্ন ধরনের মডেল, ব্রেন, হার্ট, লাঞ্চ, লিভার, স্টোমাক, কিডনি, লার্জিং স্টাইন, ওভারি, পেনিসসহ মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদর্শন করার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে এসব কিছুই নেই বললেই চলে। যতটুকু আছে সেগুলোকেও প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা হলেও তাও দিন দিন ধ্বংস হবার পথে। মিউজিয়ামটিতে ২০টির মত সোকেজ রয়েছে। এসব সোকেজের প্রতিটিতেই মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকলেও এখন তা শূন্যের কোঠায় রয়েছে। খালি পড়ে রয়েছে প্রতিটি সোকেজের তাক।
দেখভাল করার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করা হলেও তা ঠিকঠাক মত দেখভাল করা হচ্ছে না। প্রত্যেকটি জিনিসপত্রে মাকড়সা ও ধুলা ময়লার আস্তরন পড়ে রয়েছে।
এছাড়া মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংরক্ষনের কোন সরঞ্জাম কিংবা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
নাম প্রকাশ না শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, মিউজিয়ামকে আধুনিকায়নের নামে কতিপয় ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেয়ার পর শুধুমাত্র দেয়ালে রং করা কিংবা ছোটখাটো কাজ করেই টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়।
সূত্রে জানা গেছে, শেবামেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু মিউজিয়মকে আধুনিকায়ন কিংবা সংস্কারে কর্তৃপক্ষকে কোন ধরনের উদ্যোগে নিতে দেখা যায়নি। যে কারনেই মিউজিয়ামটি দিন দিন এমন দশায় পরিনত হয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে মিউজিয়ামটির মধ্যে কোন ধরনের প্রাকটিক্যাল ক্লাস না হওয়ায় বেহাল অবস্থার আরো সৃস্টি হয়েছে।
সাবেক কিউরেটর ডা. রইচ আহম্মেদ বলেন, শেবামেকের মিউজিয়ামকে অতি দ্রুত আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। মিউজিয়ামটি একটি আকর্ষনীয় স্থান ছিল। ১৯৭৯ সালে সুন্দরতম ছিল। ২০০৭ সালে আমি দায়িত্ব গ্রহনের পর সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যপারে কোন ধরনের উদ্যোগে গ্রহন করেননি। যার কারনে বর্তমানে মিউজিয়াম তার জৌলস হারিয়ে ফেলেছে।
ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. চন্দনা সরকার বলেন, শেবামেকের মিউজিয়ামটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার। একটি মিউজিয়াম যেভাবে থাকা উচিত সেভাবে এটি নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধীরে ধীরে এমন জীর্ন দশায় পরিনত হয়েছে। আমরা চাই মিউজিয়ামটিকে আধুনিকায়নে রূপান্তরিত করা হোক।
এ ব্যাপারে শেবামেকের অধ্যক্ষ ডা. এসএম সরোয়ার বলেন, শেবামেক প্রতিষ্ঠার পর মিউজিয়াম এর জন্য ইংল্যান্ড থেকে মানবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রদর্শনের জন্য কিছু উপহার আসে। সেগুলো দিয়েই মিউজিয়াম প্রদর্শন করা হয়। বাহিরের জিনিসের কোন মেরামত হয় না। যে কারণে অকেজো হয় পর্যাক্রমে সকেজ খালি হয়।
তাছাড়া সংস্কার আধুনিকায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ উদ্যোগ নিবে। তারা যেভাবে চাহিদা দেবে আমরা সেভাবে মন্ত্রণালয়ের পাঠাবো। আমিও চাই মিউজিয়ামটির সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা।
এদিকে মিউজিয়ামের সাথে সংশ্লিস্টদের দাবী কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মিউজিয়ামটি পুনরায় তার পূর্নতা ফিরে পেতে পারে।