২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

গোয়েন্দা প্রতিবেদন : চসিক নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষের আশঙ্কা

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নির্বাচনে প্রায় সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা অনেকটাই বেপরোয়া আচরণ করছেন। তাই আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ছয়টি সহিংস ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুইজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের তুলনায় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল এবং বিএনপির ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের ফলে এগিয়ে আছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীও। তাছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য ও সুপারিশ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে।

২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের ২৯ মার্চ এ নির্বাচনের তারিখ ধার্য ছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ওই সময় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এ সিটি কর্পোরেশনে ৪১টি সাধারণ এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, এনপিপি আবুল মঞ্জুর, ইসলামী ফ্রন্টের এমএম মতিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এছাড়া ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৭১ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন প্রতিদ্বন্দ্ব^ী রয়েছেন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণা, দলীয় কোন্দল, প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ, সাংগঠনিক তৎপরতা ইত্যাদি বিবেচনায় আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর তুলনায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী এগিয়ে আছেন। নির্বাচনে ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ৭৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের ৭৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ১২ জন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে চারজন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর। পক্ষান্তরে ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপির পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে জামায়তের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত হাওয়ার কারণে তারা (জামায়াত) বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। এছাড়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে আলেম সমাজের একটি অংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন করবে না। তাই তাদের ভোট বিএনপির প্রার্থীর অনুকূলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ-আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত হওয়ায় তাকে পরিচিত করানো এবং তার পক্ষে দলীয় নেতাদের ভোট চাওয়ার আগ্রহ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। রেজাউল করিম চৌধুরী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর তার প্রভাব কম। তাই মহানগর আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন না। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সিনিয়র নেতাদের কম উপস্থিতি ও সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এ কারণে তারা প্রচারণায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন না। এছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটের দিন যার যার পক্ষে ভোট সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠবেন। ফলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোটের জন্য তাদের চেষ্টা থাকবে না। এতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বেশির ভাগ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। তাদের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত করার জন্য আ জ ম নাছির উদ্দীন সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগে মেয়র প্রার্থীর জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী (কাউন্সিলর পদে) প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয়। তাদের অনড় অবস্থান এবং দলীয় কোন্দল প্রচারণার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনীতি মূলত দুইটি ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৫ সালে মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেন। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। নওফেল সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে পুরোনো কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ অন্তঃকোন্দল আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ নির্বাচনে নাছিরের মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে নওফেলের হাত রয়েছে বলে তার (নাছির) সমর্থিত নেতাকর্মীরা মনে করেন। এ কারণে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের আগ্রহ কম।

বিএনপির মেয়র সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডা. শাহাদাৎ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন। তিনি বিএনপিপন্থি ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাবের নেতা। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করায় এবং মহানগরীর শীর্ষ পর্যায়ে রাজনীতি করায় পুরো নির্বাচনি এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিএনপির শীর্ষ নেতা ও দলীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি বিশেষ কৌশলে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে তাদের একক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় তিনি আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সব বিভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে একযোগে কাজ করলে নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব হবে। নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব বণ্টন করে সেই অনুযায়ী কাজ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। মহানগর আওয়ামী লীগ ও পেশাজীবী সংগঠনের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে টিম গঠন করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং আশপাশের জেলা থেকে আসা চট্টগ্রামে বসবাসকারী ভোটারদের নিজ নিজ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে মনোনীত প্রার্থীদের ভোটদানে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতে হবে। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর ক্লিন ইমেজকে নির্বাচনি প্রচারণায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মোশতাক আহমেদ বলেন, সার্বিকভাবে নির্বাচনি পরিবেশ ভালো আছে। রাজনীতিবিদরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছেন। নির্বাচনের আরও ১০ দিন বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেসব এলাকায় সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে, সেসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহল টিম কাজ করছে। নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network