আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এখনই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পাচ্ছে না না ১৮ বছরের কম বয়সিরা। গর্ভবতী মায়েরাও এই টিকা পাবেন না। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত টিকা গবেষণার সময় এই দুই জনগোষ্ঠীর ওপর প্রয়োগ করেনি। এমনকি উদ্ভাবিত এসব টিকা এই দুই জনগোষ্ঠীকে দেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে পরিচালিত গবেষণাও শেষ হয়নি। তাই আপাতত এরা টিকাদানের বাইরে থাকছেন। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠী যখন টিকা পাবেন তখন তাদের আরও সতর্কভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ ড. মোশতাক হোসেন বলেন, শিশু ও গর্ভবতীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই তাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য উন্নত দেশে এই দুই জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচি থেকে বিরত রাখা হয়েছে, তাই আমাদের দেশেও তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে না। তবে টিকা উৎপাদনকারী দু-একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেছে। এসব গবেষণা শেষ হলেই এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টিকাদানকারী পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা আগে ভ্যাকসিন পাবেন। এক্ষেত্রে ঢাকায় করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো প্রাধান্য পাবে। একই সময়ে টিকা দেওয়া হবে মাঠপর্যায়ের একদল স্বাস্থ্যকর্মীকে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সেবাকর্মীদের টিকা দেওয়া শেষ হলে পাবেন অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে প্রাধিকার ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাদের মোট পাঁচ ধাপে টিকা দেওয়ার খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ নয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে। সাড়ে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে ৫ নভেম্ব^র সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার।
চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। প্রথম চালানেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসবে ৫০ লাখ ডোজ। তারপর প্রতিমাসেই সমপরিমাণ চালানের মাধ্যমে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে।
এছাড়া আগামী জুন নাগাদ কোভ্যাক্স সুবিধার মাধ্যমে যে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা সেটি আসতে শুরু করবে।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা হলে দেশে প্রকৃত হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। তখন এমনতিই ভাইরাসের সংক্রমণ হার হ্রাস পাবে। এছাড়া আমাদের দেশের শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও আক্রান্তের হার খুবই কম। এমনকি আক্রান্ত শিশুদের থেকে ছড়িয়ে পড়ার তথ্য তেমন নেই। তাছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সব সময় বিশেষ যত্নে রাখা হয়। তাই সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তাছাড়া উন্নত দেশগুলো এ সংক্রান্ত গবেষণা চলছে। সেখানে যদি এই দুই জনগোষ্ঠীর ওপর টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা না দেখা যায় তাহলে গবেষণা শেষে তারাও টিকা পাবেন।
তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড ভ্যাকসিনের একটি প্রাধিকার রূপরেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে সেক্ষেত্রে একটি জটিলতা দেখা দিয়েছে। যারা জীবিকার প্রয়োজনে মাঠে আছেন তারা কবে এই ভ্যাকসিন পাবেন তা জানা যাচ্ছে না।