আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২১
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে কয়েক লাখ মানুষকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তবে, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধায় রয়েছেন।
একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করতে প্রয়োজন হয় দীর্ঘ সময়ের। তবে, তুলনামূলকভাবে খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা উঠতে পারেনি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন পর্যন্ত অনুমোদিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলো নিরাপদ। তা না হলে এগুলো মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন, ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি পেত না।
গত ৪ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কাজেই, এই ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণই নেই। সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে অবশ্যই আমি এই ভ্যাকসিন নেব।’
সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বাকি সব ভ্যাকসিনের মতো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (ইউএস-সিডিসি)। যা শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির লক্ষণ।
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে দিনের স্বাভাবিক কাজ করতে কারো কারো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরের যে অংশে পুশ করা হয় সেখানে এবং এর পরবর্তীতে সারা শরীরেই এর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
যেখানে ভ্যাকসিন পুশ করা হবে সেখানে ব্যথা বা ফুলে যেতে পারে।
ইউএস-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে জ্বর, সর্দি, অবসাদ ও মাথাব্যথা হতে পারে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা, বায়োএনটেক-ফাইজার, মডার্না, সিনোভ্যাক এবং রাশিয়ান স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এ জাতীয় সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘কোনো ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মারাত্মক অ্যালার্জি শক। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এমন কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
একটি অলাভজনক স্বাস্থ্য নিউজ সাইট মেডিশ্যাডোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়া একজন রোগীর মেরুদণ্ডে বিপজ্জনক প্রদাহ শুরু হয়, যা ট্রান্সভার্স মেলাইটিস নামে পরিচিত। এরপর গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ভ্যাকসিন ট্রায়াল বন্ধ রেখেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
গবেষকরা যখন নিশ্চিত হয় যে এর সঙ্গে ভ্যাকসিনের কোনো সম্পর্ক নেই, তখন পুনরায় ট্রায়াল শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ ছিল ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত।
গত ২১ অক্টোবর বিজ্ঞানীরা জানান, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এক রোগী মারা গেছেন। এতে আবার বন্ধ থাকে ট্রায়াল।
পরবর্তীতে জানা যায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে ভিন্ন কারণে। এরপর আবার ট্রায়াল শুরু হয়।
পূর্ববর্তী পরীক্ষায় অনেক রোগীর যেখানে ভ্যাকসিন পুশ করা হয়েছে সেখানে ব্যথা, ফুসকুড়ি ওঠা, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যা সব ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই হয়।
প্রাথমিক ফলাফলের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘যারা ভ্যাকসিন নেবেন, তাদের বেশিরভাগেরই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। মাত্র পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে হালকা থেকে মাঝারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছিল।’
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলা
কেবলমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভ্যাকসিন গ্রহণকারীকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরবর্তী সময়েও যদি কারো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে প্রতিটি কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। ভ্যাকসিন গ্রহণকারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেলিমেডিসিন সার্ভিস “১৬২৬৩” নম্বরে কল করেও সমস্যার কথা জানাতে পারবেন।’
অন্তঃসত্ত্বা, ৯০ বছরের বেশি বা ১৮ বছরের কম বয়সী এবং গুরুতর অ্যালার্জির সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন না নিতে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘যাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, তাদের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশেরই ভ্যাকসিন নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায়) প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত সেরা অস্ত্র ভ্যাকসিনই। তাই আমাদের ভ্যাকসিন নিতে হবে।’