২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

৮ ঘণ্টার নৌ ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগ

আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

প্রায় আট ঘণ্টা পর হঠাৎ ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। সোমবার রাতে ঢাকা নদীবন্দরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দীর্ঘ বৈঠক শেষে লঞ্চ চালানোর ঘোষণা দেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। ফলে রাত ৯টার পর ঢাকা থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়।

এর আগে দুর্ঘটনার মামলায় নৌ আদালতে দুই শ্রমিকের জামিন বাতিলের জেরে দুপুর ১২টা থেকে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। ফলে শুরু হয় নৌ ধর্মঘট। এদিন ঢাকা নদীবন্দরসহ (সদরঘাট) দেশের বিভিন্ন জেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা পন্টুন থেকে লঞ্চ সরিয়ে নদীর মাঝ বরাবর নিয়ে যান। আগাম ঘোষণা ছাড়া লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যায়।

তারা জানেন না কখন লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। তাদের কোনো তথ্যও কেউ দিতে পারেননি। ঘাটে বসে থাকবেন না ফিরে যাবেন বুঝতে পারেননি। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীদের সদরঘাটে অসহায়ের মতো বসে থাকতে দেখা যায়। ঠান্ডায় দিনভর অপেক্ষা শেষে সন্ধ্যায় ফিরে গেছেন অনেকেই। নৌযান শ্রমিকদের এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সদরঘাটে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা।

শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ভুল বুঝাবুঝির কারণে শ্রমিকেরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা তাদের লঞ্চ চলাচল শুরুর অনুরোধ জানালে তাতে তারা রাজি হন। এর পরই সদরঘাটে বরিশালসহ বিভিন্ন রুটের লঞ্চ চলাছল শুরু হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই চালকের জামিনের বিষয়ে শ্রমিক নেতারা আদালতে আবেদন করলে আমরা সহযোগিতা করব বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বৈঠক শেষে বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শ্রমিকেরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। ওই বৈঠকে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মঙ্গলবারই দুই শ্রমিকের জামিনের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। তার সম্মানার্থে শ্রমিকদের লঞ্চ চলাচল শুরুর অনুরোধ করেছি। তবে বিকালে মো. শাহ আলম বলেছিলেন, যেই ঘটনায় দুজন মাস্টারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তা জামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে শ্রমিকেরা লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। কাজ না করার অধিকার তাদের রয়েছে। শ্রমিকেরা বলেছে, তাদের সহকর্মীর মুক্তি হলেই লঞ্চ চলাচল শুরু করবে।

জানা গেছে, অ্যাডভেঞ্চার-১ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ নামের দুই লঞ্চের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তদন্তে দুই লঞ্চের চালক জামাল ও রুহুল আমিনকে দায়ী করা হয়। এ নিয়ে নৌ আদালতে মামলা হলে তারা জামিনে ছিলেন।

সোমবার জামিনের মেয়াদ বাড়াতে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে অবস্থিত নৌ আদালতে গেলে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান বিচারক। এ ঘটনায় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কয়েকজন শীর্ষ শ্রমিক নেতা তাদের জামিনের জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপ দেন। এতেও কাজ না হলে সোমবার দুপুর থেকে লঞ্চ সরিয়ে নিতে শুরু করেন। সদরঘাট থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, শরীয়তপুরসহ অন্যান্য জেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিন সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, শত শত মানুষ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সদরঘাটে ভিড় জমান। লঞ্চ চলাচল না করায় তারা আটকা পড়েন সেখানে। অনেক ছোট ব্যবসায়ীও ভোগান্তির শিকার হন। তাদের কেউ কেউ পন্টুনেই মালামাল রেখে দেন। আবার কেউ ফেরত নিয়ে যান।

আগাম ঘোষণা ছাড়া লঞ্চ ধর্মঘটে বিপাকে পড়েন সব যাত্রী। এদের একজন ডা. আশিকুর রহমান। উত্তরা থেকে আসা বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আশিকুর রহমান জানান, চাকরির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজে এসেছিলেন। উত্তরায় এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করেন।

বরিশাল ফিরে যাওয়ার জন্য সোমবার উত্তরা থেকে সদরঘাট আসেন। কিন্তু লঞ্চ না চলায় আটকে পড়েছেন তিনি। ডা. আশিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাল (মঙ্গলবার) হাসপাতালে রোগী দেখতে হবে, ডিউটি আছে। লঞ্চ না চলায় আমি বরিশাল যেতে পারছি না। তিনি বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া লঞ্চ বন্ধের এ ধরনের সিদ্ধান্ত যাত্রীদের প্রতি নির্দয় আচরণ ও এক ধরনের অপরাধ। যেসব শ্রমিক নেতা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে যাত্রী জিম্মি করে এ ধরনের কর্মসূচি আর না দেয়।

পটুয়াখালীতে ছোট ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সদরঘাট আসেন গৃহবধূ তারা বেগম ও তার সন্তানেরা। কিন্তু লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি তিনি। তারা বেগম বলেন, তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে বাসায় ফিরে যাচ্ছি। কাল পটুয়াখালীতে ছোট ভাইয়ের বিয়েতে অংশ নিতে পারলাম না। আমাদের সব আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। এখন আবার কষ্ট করে বাসায় ফিরতে হবে। সপরিবারে বরগুনার উদ্দেশে আসা আইনজীবী নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের ধর্মঘট আদালত অবমাননার সমান। যারা কর্মবিরতি পালন করছে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হওয়া উচিত।

ভোলার যাত্রী মইদুল, ফজল, আমিনুল ইসলাম, মাসুদ, কালাম ও আমেনা বেগম বলেন, বাড়ি যাওয়ার জন্য গাজীপুর থেকে বিকাল ৩টায় সদরঘাট এসেছি। সব লঞ্চ বন্ধ থাকায় কিভাবে বাড়ি পৌঁছাব বুঝতে পারছি না। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। প্রচণ্ড ঠান্ডায় খোলা জায়গায় বাচ্চাদের নিয়ে বসে থাকা যাচ্ছে না। ফিরেও যেতে পারছি না। রইছ মিয়া নামের এক যাত্রী জানান, তিনি বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে বরিশাল যাওয়ার জন্য উত্তরা থেকে সদর ঘাট এসেছেন দুপুরে। তিনি বলেন, এসেই দেখি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেন বন্ধ, কখন চালু হবে।

কেউ কিছু বলতেও পারছিল না। অন্য সবার মতো সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এরপর বাসায় ফিরে যাচ্ছি। মাঝখানে সারা দিন ঠান্ডায় বৃদ্ধ বাবা মা কষ্ট পেলেন। বিশেষ করে মা’র কষ্টই বেশি হয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network