২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

শিশুর মুখে শুদ্ধ ভাষা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

‘আরে মামু কইয়েন না! এমনিতেই চিপ্পা গলি, তার ওপর রিকশাওয়ালাডা ফাউলের ফাউল। আব্বার নতুন গাড়ি লাগায় দিসে….।’

এটি একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রের সংলাপ। কয়েক বছর আগে বিজ্ঞাপনচিত্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ঘটনাটি এমন- বাড়িতে অতিথি এসেছেন, ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে মা-বাবা কত কী করছেন, এ নিয়ে আলাপ হচ্ছে। এমন সময় বাড়ির ছোট্ট সদস্য স্কুল থেকে বাসায় এলো। অতিথি শিশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বাবু, কেমন আছ?’ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিশুটির এ সংলাপের অবতারণা। নেপথ্য কণ্ঠে বিজ্ঞাপনটিতে বলা হয়েছিল, ‘ওর আর কী দোষ! আশপাশে যা দেখবে, তাই তো শিখবে।’ বিজ্ঞাপনটি আমাদের হাসির খোরাক জোগালেও অত্যন্ত বাস্তব একটি বিষয় এতে উঠে এসেছে। আর তা হলো- শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে। বিশেষ করে, পরিবারের সদস্যদের ভাষা শিশুরা সবচেয়ে বেশি অনুকরণ করে।

মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে- ভাষা। জন্মের পর যখন শিশুর মুখে ভাষা ফোটে, তখনই শব্দের খোঁজে থাকে শিশুরা। মা-বাবা হিসাবে এ সময় আপনার দায়িত্ব, সন্তানকে ভাষা শেখানো। তবে তা অবশ্যই মাতৃভাষা এবং স্পষ্ট ও চলতি ভাষা হতে হবে। আর এক্ষেত্রে পরিবারই প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কারণ পরিবার থেকেই শিশুর সামাজিকতার শিক্ষা শুরু হয়। তাই বাবা-মা হিসাবে সন্তানকে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক বলয়ে মানুষ করা এবং ভাষার ব্যাপারে সঠিক চর্চার সুযোগ করে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর এ কারণে পরিবারে যদি শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা না হয়, তবে শিশুর উচ্চারণে শুদ্ধ বাংলা বিকশিত হয় না।

বিশেষ করে, শিশুর মুখে যেহেতু প্রথম ভাষা ফোটে মায়ের মাধ্যমেই। তাই মায়েদেরই দায়িত্ব বেশি, শিশুকে শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা শেখানো। অনেকেই মনে করেন, বাংলায় কথা বলা আবার শেখানোর কী আছে- তা ঠিক। তবে সেটি শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ কিনা বা বানান কিনা, সেটি কি লক্ষ করছেন? বাংলায় কথা বলতে পারা আর শুদ্ধ বাংলাচর্চা- এক নয়। শিশুকে শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা শেখাতে মায়েরা পত্র-পত্রিকা বা টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচারিত প্রমিত বা শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ একটু মনোযোগসহকারে পড়ে বা শুনে নিজেও চর্চা করতে পারেন। মা যদি শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করেন, তবে শিশুও অনায়াসে তা রপ্ত করবে।

আমরা প্রায়ই অনেককে ‘কফি’কে ‘কপি’ বা ‘ভাত’কে ‘বাত’- এ ধরনের ভুল উচ্চারণ করতে শুনি। এটি মূলত বাংলাভাষা শুদ্ধ চর্চা না করার কারণেই হয়। শুদ্ধ উচ্চারণ না করলে, লিখতে সেই বানানটি ভুল হয়। সঠিক বানান না জানার কারণে শিশুদের যে বানান ভুল হয়, সেটি কাটিয়ে ওঠা যায়। কিন্তু শুদ্ধ বাংলাচর্চার অভাবে উচ্চারণগত যে ভুল হয় এবং তা থেকে যে বানান ভুল হয়, তা বড় হলেও কাটিয়ে ওঠা কঠিন। ছোটবেলা থেকেই যদি মুখগহ্বরের যে প্রত্যঙ্গগুলো দিয়ে উচ্চারণ করা হয়, সেগুলোর সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে শিশুর শুদ্ধ উচ্চারণ এবং বানান শেখার কাজটি সহজ হবে।

সংস্কৃতিচর্চার জন্যও শিশুর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ বা বাচনভঙ্গি সঠিক হওয়া একান্ত দরকার। শিশুকে শুদ্ধ বাংলাচর্চা শেখাতে মায়ের পাশাপাশি পরিবারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবারের সদস্যরা শিশুর সঙ্গে প্রমিত বাংলাভাষায় কথা বললে, তা শিশুকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করবে। গৃহপরিবেশ ছাড়াও শিশুকে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রে শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, শুদ্ধ বাংলা গান বা কবিতা আবৃত্তি শেখাতে পারেন। বাজারে বর্ণমালা শেখার জন্য ও লিখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই ও সিডি পাওয়া যায়। শিশুকে তা কিনে দিতে পারেন; দেখতে দিতে পারেন সিসিমপুর-এর মতো শিশু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। এতে বিকশিত হবে শিশুর ভাষার জ্ঞান। শিশুদের বয়স উপযোগী শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের গল্পের বইও কিনে দিতে পারেন। খুব বড় নয়, ৩-৫টি শব্দ দিয়ে তৈরি বাক্যের গল্পের বই তাদের জন্য নির্বাচন করুন। এতে শিশুরা বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং শুদ্ধ বাংলা শব্দ শিখবে। শুধু বই কিনে দিলে হবে না। মা-বাবাদেরও বাড়িতে বই পড়ার চর্চা করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের বই পড়তে দেখলে, শিশুরা বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে। বাচ্চাকে হিন্দি বা ইংরেজি কার্টুন না দেখিয়ে বাংলায় ডাবিং করা কার্টুন দেখতে দিন। বাংলাদেশে সিসিমপুরের মতো আরও অনেক ভালোমানের শিশু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হয়, সেগুলো দেখতে শিশুকে উৎসাহ দিন।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে, চলনে-বলনে বাংলা মিশে থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় মাতৃভাষা বাংলা উপেক্ষিত হচ্ছে। আজও নাটক-সিনেমার নাম, বিজ্ঞাপন, ব্যানার ও সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসহ নানা জায়গায় নানাভাবে ব্যবহার হচ্ছে ইংরেজি।

‘হ্যালো ফ্রেন্ডস, কেমন আছ তোমরা? হোপ দিস উইকে তোমরা ম্যানি ম্যানি ফান করছ, উইথ লটস অফ মিউজিক’- এটি একটি বেসরকারি এফএম রেডিওর একজন আরজের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ব্যবহৃত কথা। এফএম রেডিও এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এ জনপ্রিয় এফএম রেডিওর আরজেদের আমরা অধিকাংশ সময়ই ইংরেজির মতো করে বাংলা উচ্চারণ, ভুল উচ্চারণ, বাংলা-ইংরেজির মিশেলে বিকৃতভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখি। যা বাংলার মাধুর্যতাকে নষ্ট করছে।

শুধু এফএম রেডিওগুলোতেই নয়- বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাটক ও সিনেমা অর্থাৎ গণমাধ্যমগুলোয়ও ভাষা বিকৃতির মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে নাটকগুলোয় এখন আমরা ‘খাইছ’, ‘তাইলে’ বা ‘জিগা’ ইত্যাদি ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে দেখি। যা দেখে সাধারণ মানুষ এ ধরনের ভুল বাংলা উচ্চারণে উৎসাহী হচ্ছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে- ‘খাইলেই দিল খোশ’, ‘এক্সট্রা খাতির’ বা ‘আবার জিগায়’ ব্যবহৃত সংলাপ এখন তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে। এ অপসংস্কৃতি থেকে যতদ্রুত সম্ভব আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি শুধু শিশু বা তরুণ প্রজন্মই নয়, বড়দেরও শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ ও ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে ইংরেজির ব্যবহার কমিয়ে বাংলা ব্যবহার বাড়াতে হবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network