১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

নাসরীন স্মৃতি পদক পেলেন যুব সংগঠক সোহানুর

আপডেট: মার্চ ৫, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

যৌন হয়রানি ও নারীদের প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় নাসরীন স্মৃতিপদক পেলেন যুব সংগঠক সোহানুর রহমান। নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারী নাসরীন পারভীন হক স্মরণে ২০০৬ সাল থেকে ‘নাসরীন স্মৃতি পদক’ দিয়ে আসছে একশনএইড। ৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এক অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় প্রতীকি যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুরকে এই পদক প্রদান করা হয়। বরিশালে পদক হস্তান্তর করেন একশনএইড বাংলাদেশ’র জেনারেল অ্যাসেম্বিলির সদস্য ও আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল। সোহানুরের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে সমাজ পরিবর্তনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতি বছরের মতো এবারও চারটি বিভাগে অন্য পদকপ্রাপ্তরা হলেন চট্টগ্রামের তরুণ নেত্রী সুস্মিতা সুলতানা স্বর্ণালী, গাইবান্ধার নারী কৃষক মোছা: হাছনা বেগম এবং মোছা: রাণী বেগম। এ সময় অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ইউবিকো এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এসএম আকবর, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বদেশ সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক মধাব দত্ত এবং নাসরীন পারভীন হকের বড় বোন শিরিন হক প্রমুখ।

সোহানুর ইয়ুথ এডভোকেট হিসেবে কাজ করছেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটিভ সিটিজেনস, গার্লস নট ব্রাইডস, মেনএনগেজ এলাইয়েন্স, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অন ডিজিস্টার রিডাকশনসহ জাতিসংঘের বেশ কিছু মেজর গ্রুপে। ক্লাইমেট একশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়ার বাংলাদেশ শাখার জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সোহানুর ২০১৭ সালে গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ আন্তর্জাতিক জোট থেকে ইয়ুথ ফর ওয়াটার এন্ড ক্লাইমেট পুরুষ্কার অর্জন করেন।

এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক বাল্যবিবাহ বিরোধী বৈশ্বিক সভায় অংশ নিতে ২০১৫ সালে মরোক্কো, ২০১৮ সালে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সভার যুব ফোরামে যোগ দিতে লন্ডন, ২০১৯ সালে ইথিওপিয়া, নেপাল, ভারতের কলকাতায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু ও সুন্দরবন বিষয়ক সম্মেলন এবং কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আইসিপিডি২৫ সম্মেলনে অংশ নেন।

একশনএইড বাংলাদেশ সূত্র জানায়, ২০০৬ সাল থেকে অ্যাকশনএইড যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন, ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা (যিনি অন্য নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন), স্থানীয় সরকার ব্যাবস্থায় নারী নেতৃত্ব এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সোচ্চার নারীদের এই সম্মাননা প্রদান করে আসছে।

১৯৫৮ সালের ১৮ নভেম্বর নাসরীন পারভীন হক জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল হক ও কবি জায়েদা খাতুনের ছোট সন্তান তিনি। বিশিষ্ট কলাম লেখক ও সাংবাদিক নুরুল ইসলাম ভুূঁইয়া তার জীবনসঙ্গী, তাঁদের একমাত্র কন্যা জামিলা।

নাসরীন হক ছিলেন একাধারে একজন নিবেদিতপ্রাণ উন্নয়নকর্মী, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম কান্ডারি, পরিবেশ আন্দোলনের সাহসী সৈনিক, বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের পথিকৃৎ, এসিড সহিংসতার শিকার নারীর অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করার সংগ্রামে অগ্রদূত, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী। তার উদ্যোগের সূত্রে পরবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছে ‘এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন’।

এসিড আক্রমণের শিকার নারীকে আলোয় আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন নাসরীন হক। তিনিই প্রথম এসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীদের জনসম্মুখে নিয়ে আসেন এবং তাদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত যান। এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রথম স্বতন্ত্র আইন যা ২০০১ সালে প্রণীত হয়, তার পেছনে যিনি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন, তিনি হলেন নাসরীন হক। এসিড সারভাইভারদের তিনি নিয়ে গড়ে তোলেন পঞ্চম সুর নামের একটি সংগঠন।

প্রতিবন্ধী নারীর জন্যে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টিতে তার নিরলস প্রচেষ্টা ও অবদানও কম নয়। ২০০৩ সালে তিনি অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। তিনিই অ্যাকশনএইডে প্রথম অধিকারভিত্তিক প্রয়াসের মাধম্যে উন্নয়ন ইস্যুকে দেখার কাজ শুরু করেন। আদিবাসী ইস্যুতেও তার কাজ ও অবদান ছিল ব্যাপক। যেকোন ইস্যু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নারীকে রাখতেন কেন্দ্রবিন্দুতে। গোলাপী ফিতা বেঁধে অক্টোবর মাসে স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো ছিল নাসরীন হকের আরেকটি প্রয়াস।

এ ছাড়া তামাক বিরোধী আন্দোলন, টানবাজার থেকে যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন, এইচআইভি পজেটিভদের নিয়ে কাজ, নারী ও শিশু পাচার নিয়ে সংসদীয় পর্যায়ে কাজ করা, নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ, কর্মজীবী নারীদের শিশু রক্ষণাবেক্ষণ সবই ছিল তার আন্দোলনের বিষয়। দত্তক ও নাগরিকত্ব নিয়ে আইন সংস্কারের জন্যেও নাসরীন হক কাজ করেছিলেন।

২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল গাড়ি দুঘর্টনায় তিনি মারা যান।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network