২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

নারী দিবস: একজন মনীষার গল্প

আপডেট: মার্চ ৮, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

আপাদমস্তক রাজনীতিক হলেও প্রচলিত রাজনীতিতে গা ভাসাননি বরিশালের ডা. মনীষা চক্রবর্তী। নারী অধিকার আদায়ে তিনি যেমন সোচ্চার, তেমনি দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত। আসছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নগরের বস্তিবাসী নারী ও কিশোরীদের ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার জন্য বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ‘মুক্তি’ নামে এই স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদনও করবেন মনীষা ও তাঁর দল।

করোনাকালের শুরুতে মনীষা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পাশাপাশি শুরু করেন চিকিৎসা, সচেতনতা, খাদ্যসহায়তা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহায়তাসহ বহুমুখী কাজ। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রথমে ১০টি ইজিবাইককে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করেন। ৭ জুলাই থেকে পূর্ণাঙ্গ একটি অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করে রোগী পরিবহন করেন। এ কর্মসূচির নাম দেন ‘ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’। ‘নির্ভয়’, ‘আস্থা’, ‘নির্ভীক’ ইত্যাদি নামে বরিশালজুড়ে গরিব রোগীদের, বিশেষ করে নারীদের সেবা দেয় মনীষাদের অ্যাম্বুলেন্স। এখন পর্যন্ত ৪৮৫ জন রোগীকে বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন তাঁরা।

আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের দুর্যোগের সময় যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে। এ রাজনীতিরও কোনো মূল্য থাকবে না। তাই আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকতে। আমাদের নারীরা সামাজিক অবস্থানে এখনো পিছিয়ে। সামাজিক, পারিবারিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। কাজের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে কোথাও নিরাপদ নয়। আমরা এসব অসংগতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে প্রতিকার অসম্ভব।
মনীষা চক্রবর্তী
বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সহায়তা দেওয়ার জন্য গত বছরের ২৮ জুন থেকে একটি অক্সিজেন ব্যাংকও চালু করেন মনীষারা। ১১৫ জন রোগীর বাড়িতে বিনা মূল্যে পৌঁছে দিয়েছেন অক্সিজেন সেবা। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় লিফলেট বিতরণ, জীবাণুনাশক তৈরি, ‘এক মুঠো চাল’ সংগ্রহ কার্যক্রমসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন তাঁরা।

নারী অধিকার নিয়ে মনীষা লড়ছেন ছাত্রজীবন থেকেই। ২০১১ সালে তিনি তখন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর, চর করমজিসহ বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ নারীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিনা মূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন শুরু করেন। ২০১৫ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক হওয়ার পর রসুলপুর, চাঁদমারি, পলাশপুর, কেডিসিসহ বিভিন্ন বস্তিতে এবং বরিশালের বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বহু মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করেছেন। এখনো প্রতি মাসে নগরের বস্তি এলাকায় দুটি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা-পথ্য সেবা দিচ্ছেন। নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারেও প্রতি মাসে পাঁচ শতাধিক দুস্থ নারী-পুরুষকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেন তিনি।

মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের দুর্যোগের সময় যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে। এ রাজনীতিরও কোনো মূল্য থাকবে না। তাই আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকতে। আমাদের নারীরা সামাজিক অবস্থানে এখনো পিছিয়ে। সামাজিক, পারিবারিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। কাজের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে কোথাও নিরাপদ নয়। আমরা এসব অসংগতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে প্রতিকার অসম্ভব।’

মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ৩৪তম বিসিএসে সহকারী সার্জন হিসেবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন মনীষা চক্রবর্তী। কিন্তু চাকরিতে না গিয়ে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুধু চিকিৎসক বা রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, সমাজসেবার কারণেও বরিশালের মানুষের কাছে তাঁর একটা ভিন্ন অবস্থান আছে।

প্রগতিশীল পরিবারে জন্ম নেওয়া মনীষার পিতামহ আইনজীবী শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রাজাকাররা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। মনীষার বাবা আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। শৈশবে তাঁর ফুপা, প্রকৃতিবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মার সংস্পর্শও তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে। মনীষা এখন বাসদের বরিশাল জেলার সদস্যসচিব।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ, মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা, সব মানবিক বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে এখন চিরায়ত সেই চরিত্র নেই। রাজনীতির এই আকালের মধ্যেও মনীষার মতো একজন রাজনৈতিক কর্মী সীমিত সামর্থ্য নিয়ে রাজপথের সংগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা অভাবনীয়। অনেক হতাশার মধ্যেও এসব উদ্যোগ আমাদের মনে আশা জাগায়।’

প্রথম আলো থেকে নেয়া

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network