২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই শিক্ষার মান নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন পাঠ করলো ৭’শ শিক্ষার্থী

কমরেড শান্তি দাস – তুমি রবে নীরবে

আপডেট: এপ্রিল ১৪, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ফিরোজ আহমেদ বাবলু

বরিশালের সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিকাশের চলমান কর্মকান্ডে সেই ৭০ দশক থেকে তিনি আমৃত্যূ নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয় সংগ্রামী সংগঠক, শিক্ষানুরাগী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শান্তি দাস।
শান্তি দাস কিশোর বয়স থেকে আজ অবধি একটি সুখী সুন্দর, শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যূ সংগ্রাম করে গেছেন ..
আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী,
আমরা এই মহান সহকর্মীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি
১৯৪৮ সালে ১২ই জানুয়ারী বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের বদপুর নামে গ্রামে এক কৃষক পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি তাঁর পিতা আয়ুর্বেদিক ও কাকা এ্যালেপ্যাথিক ডাক্তার হিসেবে গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতেন।


৬ ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শান্তি দাস ও তাঁর পরিবার ভাগ্যক্রমে ৫০ এর দাঙ্গায় বেঁচে যান। কিন্তু সেই সময় তার পরিবার আর্থিক ও সামাজিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে তাদের বসতঘরসহ ওই গ্রামটিই মেঘনায় তলিয়ে যায়।
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সময়ে তিনি বিডি হাবিবুল্লাহ পল্লীমঙ্গল নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যুক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সময় বিদ্যালয় ও এলাকার কাবের মাধ্যমে নাটক, আবৃত্তি ও খেলাধুলার কার্যক্রম চালিয়ে যান। তাঁকে এসব কার্যক্রম প্রথম অবস্থায় সহায়তা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী আনোয়ার হোসেন, কাজী ইদ্রিস, আবুল বাশার প্রমুখ।

১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তিনি এলাকায় শিক্ষকতা পেশায় নেমে পড়েন। শিক্ষকতার পেশায় সততা, স্বচ্ছতা ও আদর্শ শিক্ষকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
চাকুরীরত অবস্থায় এম এ-বিএড-সি এন এড ডিগ্রী অর্জন করেন। শান্তি দাস গ্রামে ছাত্রাবস্থায় কমরেড সোলায়মানের অনুপ্রেরণায় বাম রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হন।

তাঁর এলাকায় তিনি প্রগতিশীল বামধারায় কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষকে সংঘঠিত করেন। তিনি পরবর্তীতে এলাকার যুবসমাজের সাথে একত্রিত হয়ে স্বাধীকার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে নিয়োজিত হন। ৬৯ এর গণ অভ্যূথনে শান্তি তার নিজ এলাকায় আন্দোলনে যুক্ত হন।
১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে এলাকায় আব্দুল বারেক’র (সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে যুব সমাজ স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। এদের সাথে শান্তি দাস এলাকায় এলাকায় জনসচেতনতাসহ মানুষকে সংঘঠিত করার কাজে ভূমিকা রাখেন। তবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার জন্য শান্তি দাস কখনও চেষ্টা করেননি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি এলাকার রিলিফ কমিটি সদস্য হিসেবে আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ’৭৩ সালে শান্তি দাস বরিশালে বদলী হয়ে আসেন।

মহাবাজের সরকারি উলালঘুনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকুরীকালীন তিনি শিশু সংগঠন খেলাঘর’র শাখা ছায়াবিথী খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীকালে তিনি শিশু সংগঠন চাঁদেরহাট জেলা সাংগঠনিক কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন।

সামাজিক সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি তিনি পরিচ্ছন্ন বাম রাজনীতির সাথেও সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখেন। তারই সুবাধে একই ধারার কিছু ব্যক্তি নিয়ে ’৮০ দশকের শুরুতে গড়ে ওঠে সৃজনী নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন। তিনি এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
পরবর্তীকালে ৮২ সালে সৃজনী বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা বরিশাল শাখা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আমৃত্যূ তিনি এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সৃজনী ও গণশিল্পী সংস্থার মাধ্যমে প্রগতিশীল অনেক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। তিনি এতে কখনো সংগঠক, কখনো অভিনেতা, কখনো প্রম্পটার হিসেবে কাজ করেছেন। নাট্যজীবনের শুরুতে তিনি নারী চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। ৯০ দশকের পর গণশিল্পী সংস্থা নাটকের চেয়ে গণসঙ্গীতকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।
এক্ষেত্রে শান্তি দাসকে বিশেষভাবে সহায়তা করেন প্রয়াত সয়ম্ভু সরকার। তিনি গণশিল্পী নামে একটি লিটেল ম্যাগাজিন বিভিন্ন সময় সম্পাদনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নতুন নতুন লেখক সৃষ্টি করতে কাজ করেছেন।

একজন দক্ষ সংগঠক, গণশিল্পী, স্পষ্টভাষী, পরিচ্ছন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক । আমৃত্যু যিনি প্রগতিশীল গণসাংস্কৃতিক দর্শনে পথ চলেছেন,
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ’৮০র দশকের শুরুতেই শিল্প-সংস্কৃতি-সংগ্রামকে নিপীড়িত বাঙালী জাতির মুক্তির লড়াইয়ে হাতিয়ার হিসাবে গ্রহন করে সমাজ পরিবর্তনের দৃপ্ত আকাংখ্যা নিয়ে দেশব্যাপী বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার যে অবিরাম পথচলা – সেখানে বৃহত্তর বরিশাল থেকে তিনি সুচনা লগ্নেই যুক্ত হয়েছিলেন একজন সংগঠক হিসাবে-যুক্ত করেছিলেন সমমনা হাজারো সহযোদ্ধাকে । সময়ের দীর্ঘ পরিক্রমায় পথ থেকে পথে আয়োজন করেছেন লোক ও গণসঙ্গীত-পথনাটক, সাহসী উচ্চারণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জিবিত করেছেন জীবনানন্দ-সুকান্তসহ নানা কবিতায় …

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষত গণশিল্পী সংস্থায় কাজ করার সুবাদে শান্তি দাস এর সাথে পরিচয় নব্বই দশকের গোড়ার দিকে । সম্পর্কটা একটু অম্ল মধুর ছিল । সাংগঠনিক কারণে মাঝে মাঝে একটু আধটু মত বিরোধও হতো । সেটা আবার খুব বিস্তার লাভ করতো না, আদর্শিক কারনে যার পরিসমাপ্তি হয়ে যেত খুব দ্রুত ।

শান্তি দাস স্পষ্টভাষী-সুবক্তা ছিলেন এটা নির্দিধায় বলা যায় । গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি চেতনার বিকাশে তিনি ছিলেন অবিচল । কেন্দ্রীয় গণশিল্পীর কর্মসূচি ও নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে খুব সক্রিয় ছিলেন একসময়, কিন্তু কখনো নিজে নেতৃত্ব নেয়ার বাসনা দেখিনি তারমাঝে, তিনি নিজ অঞ্চলে আমৃত্যূ ছিলেন একনিষ্ঠ গণশিল্পী-গণসংস্কৃতির সারথী,
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি শান্তি দাস একজন শিক্ষক নেতা হিসেবেও সমধিক পরিচিত। তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সঙ্কটকালীন অবস্থায় বরিশালে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। । ০৫ সালে চাকুরী থেকে অবসরের সময় তিনি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি ছিলেন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি অধিকাংশ সময় নেপথ্যে থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ করেছেন। অবসরের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বের সাথে কাজ করছেন।
তিনি ’৭১এর ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক; সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র বিভাগীয় কমিটির অন্যতম সদস্য। শান্তি দাস নজরুল সাংস্কৃতিক জোট বরিশাল এর সভাপতি এবং বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান অন্যতম সদস্য। সমন্বয় পরিষদের তিন দশকের আন্দোরন সংগ্রামে তিনি ব্যপক অবদান রেখেছেন।
তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা
কেন্দ্রীয় কমিটি।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network