আপডেট: মে ১১, ২০২১
সৈয়দ নূর-ই আলম শোভন:
বরগুনার বিষখালী নদিতে ফেরি কিংবা ব্রিজ না থাকার কারনে বেতাগী উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের নদি পারপারের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। দিনে দিনে বেতাগী-কচুয়া খোয়াঘাটটি অতিরিক্ত ভাড়া আর যাত্রী হয়রানীর জন্য অন্যতম হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনের নজরদারীতা না থাকার কারনে ইজারাদার তাদের মনগড়া ভাড়া আদায় করে যাত্রী হয়রানী করে আসছে।কেউ কেউ বলছে রাজনৈতিক নেতারা এই খেয়াঘাট থেকে উৎকোচ নেয় বলেই ইজারাদার এত সাহস পায়।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা প্রতিবেদক যখন খেয়াঘাটে উপস্থিত এক অন্ধ ভিখারীর উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে দেখে কাছে যায়, তখ তিনি বলেন, মগের মুল্লুক পাইছে ওরা। মুই ভিক্ষা কইরা পাইছি ৬০ ট্যাহা, হের ৪০ ট্যাহাই দেওয়া লাগছে খেওয়ায়। তোগো উপার আল্লাহ’র গজব পড়বে। আল্লাহ সইবো না। বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাট থেকে পারাপারের সময় অতি দুঃখে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলো ষাটোর্দ্ধ অন্ধ ভিখারী। তিনি আরো বলেন, বাবা মোগো কথা লেইক্কা কি অইবো? মোগো নাম লেইখো না।
এদিকে অন্য যাত্রীদের সাথে কথা বললে জানা যায়, বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে বিষখালী নদী পারাপারে জনপ্রতি ৫ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা আদায় করছেন খেয়াঘাটে থাকা ইজারাদারের লোকজন। এ ছাড়াও যাত্রী হয়রানি, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচারণ, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক, অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিযুক্ত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপারসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে যাত্রীরা।সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজারাদার সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে কোন নির্দিষ্ট ভাড়ার চার্ট ছাড়াই ইচ্ছামতো খেয়া পরিচালনা করছেন। খেয়া পারাপারের জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে টোল আদায়কারীরা খারাপ ব্যবহার করছেন এবং লাঞ্ছিত করছেন। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, খেয়াঘাটের ইজারাদার রুস্তম আলী ও নুরুল হক কচুয়ার স্থানীয় লোক হওয়ায় যাত্রীদের জিম্মি করে, রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ও প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে এমনটা করে আসছেন এ ছাড়াও বিষখালী নদীর কচুয়ার পাড় থেকে ভাড়া আদায় করছেন।প্রতিদিন ভাড়া আদায় নিয়ে আদায়কারীরা সাধারণ যাত্রীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, সাধারণ যাত্রী পারাপারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাঁচ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ঈদের সময় ৪০ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের ফ্রি পারাপারের নিয়ম থাকলেও একই পরিমাণে টাকা আদায় করা হয়। সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা থাকলেও তা মানছে না আদায়কারীরা। ঈদের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, বাইসাইকেল ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, গরু মহিষ, ছাগল, ভেড়া পাঁচ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা, আসবাবপত্র ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা ও হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়।ভোর ৫ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পারাপারের নিয়ম, কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরেই ওই বিষখালী নদী থেকে পার হতে চাইলে তাঁর কাছ থেকে রিজার্ভ ৫০০-৮০০ টাকা আদায় করা হয়। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, মাত্র দুইটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার যাত্রী পারাপার করে। এতে বেশির ভাগ সময় চাকরিজীবী অফিসে আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা বলেন, এই খেয়াঘাটে অনিয়মের কোন শেষ নেই,প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। এ বিষয় জানতে চাইলে টোল আদায়কারী মো. রুস্তম আলী জানান, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় এবং অনেকে ভাড়াও দেয় না। মোটরসাইকেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আদায়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকারের জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি করেছি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন,’সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা না হলে অতিশিগ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রণন করা হবে।