বরিশাল ব্যুরো
মাঝে মাঝে ত্যাগী ও সৎ মানুষের জন্ম হয়। এসব মানুষ প্রজ্ঞাবান, প্রেমবান। আর এসব মানুষের মধ্যে যিনি অনন্যÑ যার মহিমা গগন চুম্বী, চিন্তা-চেতনায়, মননে মানসিকতায়, সত্য-সাধনায়, প্রেম-কল্যাণে, যিনি মানুষের জন্য অনুপম আদর্শ, তিনি অমৃত লাল দে। সত্য, শ্রেয়, পূর্ণতা জয়ী ব্যক্তিত্ব অমৃত লাল দে। সংকীর্ণতা বিবর্জিত মানবহিতৈষী জনহিতকর কাজের জন্য তিনি প্রশংসনীয় এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে সমাদৃত।
খুব ছোট থেকে নিজেকে বড় করে ভুলে যাননি তাঁর অতীত। দক্ষিণ বাংলায় কর্মসংস্থানমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে হাজার হাজার বেকার, দুঃস্থ নর-নারীর কাজের সংস্থান করে দিয়েছেন। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় এবং শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণের জন্য তিনি সবার কাছে পরিচিত হন বড় কাকু হিসেবে। সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য তাঁর নিঃস্বার্থ কর্মকাণ্ড দুস্থজনকে উৎসাহিত করেছে। লোকহিতৈষী, সত্যপরায়ণ অমৃত লাল দে মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মসজিদ-মন্দির-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদানে কার্পণ্য করেননি। অমৃতভাষী, সদানন্দময়, অমায়িক ব্যক্তি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন কারণে কেউ বিপদগ্রস্ত হলে তার সাহায্যে কুণ্ঠাবোধ করেননি। অনাথ অবিবাহিতা মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য দিয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত অসংখ্য পিতা-মাতাকে মুক্ত করেছেন। মানুষের মঝে ঈশ্বর অধিষ্ঠিত একথা তিনি বুঝিয়েছেন সমাজসেবামূলক কাজ দিয়ে।
অমৃত লাল দে ছিলেন প্রত্যয়দীপ্ত সার্থক কর্মবীর। কষ্টার্জিত অর্থে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে সহযোগিতা করেছেন অকাতরে। তাঁর কর্মজীবনে স্থানীয় সরকার ও জন প্রতিনিধিত্ব মূলক বহু সংস্থায় তিনি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনকল্যাণমূলক সেবা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে তিনি আসীন ছিলেন। অমৃত লাল দে তাঁর কর্ম জীবনে যে অসাধারণ নিষ্ঠা, আত্মপ্রত্যয় ও কর্মদক্ষতা দেখিয়েছেনÑ শূন্য থেকে পূর্ণের যে নজির তিনি সৃষ্টি করেছেন কর্মের মধ্য দিয়ে তার তুলনা মেলা ভার। স্বল্পভাষী, সদাপ্রফুল্ল এই অসাধারণ মানুষটি বরিশালবাসীর মনে যে সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত তার মূলে রয়েছে কর্মযোগ।
মহৎপ্রাণ অমৃত লাল দে-এর জীবন মানবিক আদর্শ। তাঁর কর্ম সৎজীবন গঠনের অনুপ্রেরণা। মানব প্রেমের বন্ধনে মানুষে মানুষে সম্মিলন তাঁর ভাবনা। দুস্থ মানবতার সেবা তাঁর অভ্যাস। সর্বজীবের প্রতি দয়া তাঁর অলংকার। শিক্ষা তাঁর একাগ্র ইচ্ছা। ধর্ম তাঁর কাছে মানবাত্মার সাথে ঈশ্বরাত্মার মিলন। ত্যাগ তাঁর ভূষণ। লোভ-মোহ-হিংসায় তাঁর ঘৃণা। বৈরাগ্য-সরলতা ছিল তাঁর অহংকার।
১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১৩ আষাঢ়/ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চণ্ডীপুরের পাঁচগাঁও গ্রামে অমৃত লাল দে-এর জন্ম। পিতার নাম রাসমোহন দে। মা সারদা সুন্দরী দে। তাঁর সহধর্মিনী ছিলেন শ্রীমতি যোগমায়া দে। ১৪০০ বঙ্গাব্দের ৩০ জৈষ্ঠ্য/ ১৯৯৩ সালের ১৪ জুন ঊনসত্তর বছরে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
তাঁর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৪ জুন সোমবার অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অবস্থিত সমাধি মন্দিরে পারিবারিকভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহৎপ্রাণ অমৃত লাল দে-এর প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।