১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের দাবী দেশজুড়ে চলছে প্রবিধানমালা চূড়ান্তকরণ এর কাজ

আপডেট: জুলাই ২৪, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

“খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১” দ্রুত চূড়ান্ত করার দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন, শ্রেণি, পেশা ও বয়সের প্রায় শতাধিক মানুষ দেশের সকল বিভাগ থেকে একযোগে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও পোস্টারসহ নিজেদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে একটি ভার্চুয়াল মানববন্ধন করেছে। গত জুন মাসে এই ভার্চুয়াল মানববন্ধনের আয়োজন করে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ট্রান্সফ্যাট সম্পর্কে সচেতনতা ও জনমত বৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রান্সফ্যাট মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে Heart Health Alert BD শীর্ষক সুসংগঠিত একটি ক্যাম্পেইনও চলমান রয়েছে।

ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিষাক্ত এবং অযাচিত খাদ্য উপাদান। ট্রান্সফ্যাট এক ধরণের ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান যা রক্তের এলডিএল বা “খারাপ কোলেস্টেরল” বৃদ্ধি করে, অপরদিকে এইচডিএল বা “ভালো কোলেস্টেরল”-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ফলস্বরূপ রক্তবাহী ধমনিতে খারাপ কোলেস্টেরল জমা হয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ উচ্চহারে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যু, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) এবং স্বল্প স্মৃতিহানি (কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট) জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে হৃদরোগীরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ও মৃত্যু ঝূঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও, যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেই সুপরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার, ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও বা ডালডা ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ ২% মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্স ফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পাওয়া গিয়েছে এবং ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় সর্বোচ্চ ১০ গুণেরও বেশি পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গিয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি জার্নালে বলা হয়েছে যে ঢাকা শহর থেকে তিনটি শ্রেনিতে মোট ১৫টি ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরির জন্য যে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয় তার ৮০%-তে ট্রান্স ফ্যাট রয়েছে। জার্নালটিতে আরও বলা হয়েছে যে নমুনাকৃত তেলের ৪০ শতাংশ নমুনাতেই ২% শতাংশের বেশী ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া গিয়েছে, অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশকৃত ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশী। এরই সাথে প্রতিবেদনটিতে আশংকা প্রকাশ করা হয় যে যে সকল ভোক্তারা নিয়মিতভাবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই গ্রহণ করেন তাঁরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭৭৬ জন এবং সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিরোধযোগ্য এই অকাল মৃত্যুসহ হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আহ্বান করেছে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ থেকে শিল্প উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট সম্পূর্ণরুপে নির্মূল করতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য তাদের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সকল তেল, চর্বি এবং খাদ্যে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট এর সীমা বেঁধে দিয়ে তা সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। এই প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে ইতিমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২০ মে তারিখে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে। আবার ৩০ মে তারিখে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিনিধিদের সাথে একটি মত বিনিময় সভা আয়োজন করে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্র বলেছে যে খুব শীঘ্রই প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মারফত আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এর জন্য পাঠানো হবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network