২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই শিক্ষার মান নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন পাঠ করলো ৭’শ শিক্ষার্থী

আমতলীতে ভারী বর্ষণে সাড়ে ৩ কোটি টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি

আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

আমতলী প্রতিবেদন
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা ৬ দিনের ভারী বর্ষণে আমতলী উপজেলায় ৩ কোটি ৪১ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসল ও মাছের ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা চাষীরা। ক্ষতি পোষাতে সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগীদার দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। সোমবার কুষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ তাওফিকুল আলম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জানাগেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত ৬ দিনের বিরামহীন ভারী বর্ষণে আমতলী উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তর পানিতে তলিয়ে যায়। তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমতলীতে ২৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি পাত রেকর্ড করা হয়। যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে উপজেলার ১২ হাজার পুকুর ও ১৫০ টি বড় মাছের ঘের, ১০ হাজার ৫’শ হেক্টর আউশ ধান ও এক হাজার ৯’শ ২৯ হেক্টর আমনের বীজতলা, ১৫৬ টি পানের বরজ ও ১১০ হেক্টর সবজির ক্ষেত তলিয়ে যায়। জলকপাটগুলোর বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতায় কারনে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সোমবার উপজেলা মৎস্য অফিস ও কৃষি অফিস ক্ষতিগস্থদের তালিকা নিরুপন করেছে। উপজেলায় ৫৮ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৩১৮ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, ৪৫ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন শাক সবজি ও পৌনে ৭ হেক্টর জমির পানের বরজ সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ফসলে ২ কোটি ৬১ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ২ হাজার ৮শ’ ২৫টি পুকুর এবং ১৪টি ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষীদের ৮০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। দুই দফতরে ৩ কোটি ৪১ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৌসুমের মধ্যভাগে এসে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় চাষীরা দিশেহারা হয়ে পরেছেন। সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগীতার দাবী জানিয়েছেন তারা। সোমবার কুষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ তাওফিকুল আলম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
আমতলীর পুঁজাখোলা গ্রামের মাছ চাষী আমির হোসেন বলেন, তিন একর জমির মাঝের ঘেরে অন্তত ৫ লক্ষ টাকার মাছ ফেসে গেছে। তিনি আরো বলেন, এই এলাকা ২৫ টি ঘেরের মধ্যে ১০ টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ওই ঘেরে ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার আর্থিকভাবে আমাদের সহযোগীতা না করলে আমরা ঘুরে দাড়াতে পারবো না।
গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালিবাড়ী গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির পানিতে মাছের ঘের তুলিয়ে গেছে। এতে আমার তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, পুকুর তুলিয়ে মাছ ফেসে গেছে। আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে পঁচে গেছে।
কুকুয়া ইউনিয়নের কালিপুরা গ্রামের মাছ চাষী মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘লাখ লাখ টাহা খরচ হইর‌্যা মাছের ঘের হরছি। দেওইর পানতে মোর সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। এই রহম অইবে মুই বোজতে পারি নাই। চোহের সামনে ঘেরের সব মাছ ভাইস্যা গ্যাছে। এহন কি হরমু দিশা পাইনা। মোর রাস্তায় নামা ছাড়া কোন উপায় নাই।’
আমতলী পৌরসভার মাছ চাষী হানিফ বলেন, কিছু বুইজ্যা ওডার আগেই দেওইর পানিতে মোর ঘেরের মাছ ভাইস্যা গ্যাছে। ঘরে যে জাল আছিল হেইয়্যা দিয়া মুই মাছ আটকাইয়া রাহার চেষ্টা হরছি কিন্তু পারি নাই। তিনি আরো বলেন, দেওইতে এত পানি মোর বাহের বষ্যেও মুই দেহি নাই।’
চাওড়া ইউনিয়নের কালিবাড়ি গ্রামের সবজি চাষী ফারুক ডাক্তার বলেন, ‘ব্যামালা টাহা খরচ হইর‌্যা ২শ’ লাউ, ১শ’ উশসির চারা লাগাইল্লাম। গোড়ায় পানি জইম্যা সব পইচ্চা গ্যাছে।’
হলদিয়া গ্রামের শানু মোল্লা বলেন, ‘ধান লাগাইন্যার লইগ্যা বীজ হরছিলাম হেইয়া এহন এক দেড় আত পানির নীচে। সব পইচ্যা গ্যাছে। এহন কি কইর‌্যা আমন ধান লাগামু হেই চিন্তায় আছি।’
হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের চাষী আল-আমিন মিয়া বলেন,‘৪০ শ্যার ধানের বীজ হরছিলাম পানিতে পইচ্যা হ্যা ব্যাবাক নষ্ট অইয়া গ্যাছে।’
আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের আউষ চাষী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আউশ ধানে ফুল ধরছিল। ধান পানিতে তলিয়ে থাকায় এখন ধান বের হচ্ছে না। মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে। ’
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার বলেন, ৬ দিনের টানা ভারী বর্ষণে আমতলী উপজেলায় ২৮ শ’ ২৫টি পুকুর এবং ১৪ টি ঘের ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষীদের ৮০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে । ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিরুপন কওে বরগুনা জেলা মৎস্য অফিসে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আর্থিক অনুদান পেলে মৎস্য চাষীদের সহায়তা দেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, বিরামহীন ভারীবর্ষণে উপজেলায় ৪শ’ ২৭ দশমিক ৬৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে আমনের বীজতলা, সবজি, পানের বরজ ও আউশ ধান রয়েছে। টাকায় ক্ষতির পরিমান ২ কোটি ৬১ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। আমরা ক্ষতির তালিকা করে জেলা অফিসে পাঠিয়েছি। অনদান পেয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বিরামহীন বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং মৎস্যচাষীদের তালিকা তৈরী করে মৎস্য এবং কৃষি মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। আশা করি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং মৎস্যচাষীদের সহায়তা করা যাবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network