১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

ঢাবির ছাত্র সোহানের উদ্যোগে যাত্রা শুরু শশীভূষণ গ্রন্থাগারের

আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই ভোলার সাথে দেশের অন্য কোন জেলার সরাসরি স্থলসংযোগ নেই। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা এই জেলার একটি উপজেলার নাম চরফ্যাশন। এই চরফ্যাশনের ভেতর দিয়েই মেঘনা নদী মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের একটি জায়গার নাম শশীভূষণ যা ২০১২ সালে থানায় উন্নীত হয়।জেলা সদর থেকে শশীভূষণের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটারেরও বেশি। এই শশীভূষণেরই একজন স্বপ্নবাজ তরুণ হলেন সোহানুর রহমান। পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন সাধনে। শিক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এলাকার কিছু স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি গ্রন্থাগার। নাম দিয়েছেন শশীভূষণ গ্রন্থাগার। মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। তাই সবাইকে বই পড়ায় উৎসাহ দিতে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এবছরের ১ লা জুলাই যাত্রা শুরু করে শশীভূষণ গ্রন্থাগার। এলাকার সচেতন মহল তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
সোহানের এই স্বপ্নের কথা শুনতে আমরা কথা বলেছিলাম তার সাথে। কথা হয়েছে কিভাবে এই লাইব্রেরির চিন্তা মাথায় আসলো এবং কিভাবে তিনি তা প্রতিষ্ঠা করলেন। সোহান বলেন,’ শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রায় সবদিক দিয়েই পিছিয়ে রয়েছে এই শশীভূষণ। এখানকার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা মোকাবেলা করে। বিশেষ করে মেধাবীরা পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এখানের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। আমার স্বপ্ন একদিন প্রতিটি ঘরে ঘরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী থাকবে। আর সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি দুঃখ পাই যখন দেখি শিক্ষার্থীরা দিন দিন পড়ালেখাবিমূখ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্মে, হারিয়ে যাচ্ছে মাদকের আসরে। করোনার এই সময়ে এই অবস্থা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই শিক্ষার্থীদেরকে বইয়ের প্রতি ফিরিয়ে আনতে একটি লাইব্রেরির চিন্তা মাথায় আসে যা এখানে কখনোই ছিল না। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য,জ্ঞান বিজ্ঞানের বই শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। বইপ্রেমীরাই আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।”
সোহানের সাথে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করলে সে জানায়, ” শুরুতেই আমি আমার চিন্তাটি আমার কিছু বন্ধুর সাথে শেয়ার করি যারা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুয়েটে পড়ে। ওরা রাজি হলেই আমি এলাকার কিছু স্কুল কলেজপড়ুয়া আগ্রহী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করে দেই। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অল্পকিছু টাকা দিয়ে ফান্ডগঠনের কাজ শুরু করি। সবাই মিলে লিফলেট বিলি করে মানুষদের লাইব্রেরির গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে থাকি। বন্ধুবান্ধব এবং নিজের সংগ্রহে থাকা নতুন পুরাতন বইগুলো লাইব্রেরির জন্য সংগ্রহ করতে থাকি। এলাকার সচেতন ও বিত্তবান মানুষদেরকে লাইব্রেরির গুরত্ব বুঝিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বলি। অনেকেই আমাদেরকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এভাবে আমাদের অল্প কিছু ফান্ড গঠন হয় এবং তা দিয়ে আমরা লাইব্রেরিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করি। স্বল্পকিছু টাকার মধ্যে একটি ঘড়ভাড়া নেই এবং সেখানে তিনটি বইয়ের তাক এবং তিনটি চেয়ার স্থাপন করি। নিজের বাসা থেকে একটি টেবিল, একটি চেয়ার এনে লাইব্রেরিতে বসাই।এভাবেই ৫-৬ জন পাঠক দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এখনো লাইব্রেরিতে বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার টেবিল নেই। তাই সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”
বর্তমানে লাইব্রেরি কিভাবে চলছে সে-সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহান বলেন,” বর্তমানে আমাদের লাইব্রেরিতে আর্থিক এবং পর্যাপ্ত আসবাবপত্র সংকট রয়েছে। নেই কোন লাইব্রেরিয়ান। তারপরও আমরা ভলান্টিয়াররা একটা মাসিক চাঁদা দিয়ে ঘরভাড়া এবং যাবতীয় খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। লাইব্রেরিতে সদস্য ফরম পূরণ করে সদস্য হওয়ার মাধ্যমে বই পড়া যায় এবং বই বাসায় নিয়ে পড়া যায়। বর্তমানে লাইব্রেরিতে সাহিত্য,বঙ্গবন্ধু,মুক্তিযুদ্ধ,ইসলামিক,অনুবাদ সহ নানা ক্যাটাগরির প্রায় ২৫০টির অধিক বই আছে।প্রতিদিন লাইব্রেরি খোলা থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।”

সোহানের স্বপ্ন এই লাইব্রেরি এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে। লাইব্রেরির প্রতিষ্টায় একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন সোহানের বন্ধু নাঈম। পড়াশোনা করছেন কুয়েটে। লাইব্রেরি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,” এমন একটি উদ্যোগে কাজ করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। শশীভূষণ গ্রন্থাগার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার মানসিকতা জাগিয়ে তুলতে সহায়ক হবে। ফলে তাদের শিক্ষাগ্রহণ হবে মানসম্মত ও আনন্দপূর্ণ। সুস্থ মস্কিষ্কের ধারার বিকাশ ঘটবে।”
লাইব্রেরি সম্পর্কে আমরা কথা বলেছিলাম স্থানীয় রসুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব জহিরুল ইসলাম পন্ডিতের সাথে। তিনি জানান,” শশীভূষণ গ্রন্থাগার আমাদের এলাকায় একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।এরফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবে। আমি সর্বদা এই গ্রন্থাগারের যেকোন প্রয়োজনে পাশে আছি।” সচেতন মহলের প্রতিক্রিয়া জানতে আমরা কথা বলেছিলাম শশীভূষণ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জনাব মামুন পন্ডিতের সাথে। তিনি শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,” নিঃসন্দেহে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীরা বর্তমানে পড়ালেখা থেকে দূরে সরে গিয়ে মাদকাসক্তি সহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। লাইব্রেরিতে বই পড়ার মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারবে। আমি গ্রন্থাগারের সার্বিক সহযোগিতায় পাশে আছি ইনশাআল্লাহ। ”
স্থানীয় বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ জনাব শরিফুল আলম শোয়েব জানান,” একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সোহানের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের এই এলাকায় পূর্বে কোন গ্রন্থাগার ছিল না। আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেই যাতে তারা লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ে। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের অগ্রযাত্রায় লাইব্রেরির ভূমিকা অপরিসীম। ”
পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে আমরা কথা বলেছিলাম লাইব্রেরির একজন নিয়মিত পাঠক জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান,” শশীভূষণে এরকম একটি গ্রন্থাগার হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। এখানে সহজেই বই পড়া যায় যা আগে সম্ভব ছিল না। আমি নিয়মিত এখানে বই পড়তে আসি। এর মাধ্যমে আমি অনেক কিছু জানতে পারি। বই পড়া শিক্ষার্থীদের কে বিভিন্ন খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস।”
সোহানের এই উদ্যোগের মশাল ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের এলাকায়ও। সোহান জানায় অনেকেই তার কাছে আসে কিভাবে তাদের এলাকায় তারা লাইব্রেরি তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে। তখন গর্বে তার বুকটা ভরে উঠে। সমাজের জন্য কিছু করতে পারা সত্যি ভালো লাগার। সে জানায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণে সহায়তা করতে তার আরো পরিকল্পনা আছে। এমন একজন স্বপ্নবাজ তরুণের উদ্যোগ পথ দেখাচ্ছে শশীভূষণের হাজারো ছেলেমেয়েকে। নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এই তরুণ চায় একটি সুন্দর সমাজ গড়তে। আর সেজন্যই তো শশীভূষণ গ্রন্থাগারের স্লোগান হলো,” এসো সবাই বই পড়ি, সুন্দর এক সমাজ গড়ি।”

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network