২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিরোনাম
মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই শিক্ষার মান নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন পাঠ করলো ৭’শ শিক্ষার্থী

দেশে প্রবীণদের ৫ জনে ৪ জন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন : আইসিডিডিআর,বি

আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট:
বাংলাদেশের প্রবীণদের (৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব) প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং বিষণ্ণতার মতো অসংক্রামক রোগে ভুগছেন।

‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি অনলাইন ওয়েবিনারে প্রবীণদের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণার এমন ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী এবং ইনিশিয়েটিভ ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস-এর প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ। ওয়েবিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল—‘লিঙ্কিং ইউথ টু দ্য ওয়াইজ ফর ডিজিটাল ইকুইটি অ্যান্ড কেয়ার’।

অনলাইন ওয়েবিনারে গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সেবাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা জোরদার করার সুপারিশ করেছেন।

দেশব্যাপী পরিচালিত আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবীণদের প্রতি দুজনের মধ্যে এক জন দুই বা ততোধিক অসংক্রামক রোগে ভুগছেন।

এ ছাড়া প্রবীণ পুরুষের তুলনায় (৩৭ শতাংশ) প্রবীণ নারীর (৫৪ শতাংশ) অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি।

এ ছাড়া দেখা যায়, গত ছয় মাসে প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রতি তিন জনের এক জন (৩৫ শতাংশ) নিকটস্থ ওষুধ বিক্রেতার কাছে গেছেন চিকিৎসা সেবার জন্য, ৩৬ শতাংশ গেছেন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে, আর ১৭ শতাংশ সেবা নিয়েছেন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে।

প্রবীণদের সর্বশেষ ছয় মাসের স্বাস্থ্যসেবার গড় খরচ ছিল দুই হাজার ৪২৯ টাকা। এই প্রবীণদের ৩০ শতাংশ এখনও নিজেরা আয় করেন, যা থেকে তাঁরা চিকিৎসার খরচ চালান। যাঁরা নিজেরা আয় করেন না, তাঁদের মধ্যে প্রতি পাঁচ জনের চার জন চিকিৎসা খরচের জন্য সন্তানের আয় কিংবা নিজস্ব সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল।

উল্লেখ্য, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রবীণদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সরকারি সামাজিক সুরক্ষার ভাতা (বয়স্ক/বিধবা) পেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা দলের প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী দুই হাজার ৭৯৫ জন প্রবীণের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের একটা চিত্র পাই, যা বেশ উদ্‌বেগজনক। সর্বশেষ আদমশুমারি (২০১১) অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ ছিল প্রবীণ, যা ২০৪১ সালে দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্য প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাকে তাদের দোরগোড়ায় নেওয়া উচিত এবং সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাকে জোরদার করার জন্য নতুন উদ্‌ভাবনী ব্যবস্থার মাধ্যমে যুবকদের প্রবীণদের সেবায় সম্পৃক্ত করার ওপর ড. নাহিদ জোর দিয়েছেন।

ওয়েবিনারে এক ভিডিও বার্তায় আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ প্রবীণদের মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ, এবং যেসব রোগ প্রবীণদের মধ্যে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সেসব মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা ও সহযোগিতামূলক কাজ করতে হবে।’

ওয়েবিনারে প্রবীণদের সেবাকে আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-ইপিডিমিওলজি ও গ্লোবালএইজিং-এর অধ্যাপক ড. ব্লোসম স্টেফান। প্রবীণদের সেবা আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা প্রমাণ ভিত্তিক জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রবীণ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে অংশীদারত্ব তৈরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার জন্য তিনি সুপারিশ করেন।

নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাকে আরও কিভাবে উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও যুক্তরাজ্য থেকে গবেষক, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্যানেল আলোচনায় তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। এই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কার্যক্রম এবং এই সেবাকে আরও কীভাবে সাধারণ জনগনের কাছে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ কাজ করছে বলে তিনি জানান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) এবং রেসপাইরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত প্রবীণদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, সে বিষয়টি উল্লেখ করেন।

প্যানেল আলোচনায় আরও অংশ নেন নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. লোচনা শ্রেষ্ঠা, নেপালের পাটান একাডেমির ইমার্জেন্সি মেডিসিনের প্রভাষক ডা. সুনীল অধিকারী, এবং ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্কের ডিরেক্টর অধ্যাপক ট্রুডি লাং।

এ ছাড়া বক্তব্য দেন নেপালের পাটান একাডেমির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক রাজেশ নাথ গোঙ্গল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো জাহিদ হোসেন এবং নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ডা. মহেশ মাস্কি ।

ওয়েবিনারে অসংক্রামক রোগের গবেষণা ও সমাধানে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত ‘গ্লোবাল ইনোভেশন হাব ফর মাল্টিমর্বিডিটি’ নামের একটি বৈশ্বিক প্লাটফর্মের উদ্‌বোধন করেন আইসিডিডিআর,বি’র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডি. রিডপ্যাথ। উল্লেখ্য ‘গ্লোবাল ইনোভেশন হাব ফর মাল্টিমর্বিডিটি’ শীর্ষক প্লাটফর্মটি বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়, নেপালের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন এবং পাটান একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডি. রিডপ্যাথ। ওয়েবিনারে দেশ-বিদেশের গবেষক, চিকিৎসক, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, টেলি-স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, যুব সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা প্রবীণদের মাল্টিমর্বিডিটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি অন্যান্য খাতও সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন।

‘দ্যা গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্ক এশিয়া’ এবং ‘ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ’ এই ওয়েবিনারের মূল আয়োজক।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network