আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১
বরিশাল ব্যুরো
কৃষি ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার টাকার কৃষি ঋণ নিয়ে যাত্রা। এখন কোটি টাকার ফার্ম। বরিশালের নদী ঘেরা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক ইউনিয়নে এই কৃষি ফার্ম গড়ে তুলেছেন একজন স্কুল শিক্ষক। গত এক দশকে এই ফার্মে আবাদ করেছেন দেশি-বিদেশী শাক-সবজি, ফলমূল। পাশাপাশি ৫টি পুকুরে করেছেন সমন্বিত মাছ চাষ। ৫ একর জমির ওপর লতা নদীর তীরে এই ফার্মটি তৈরি। চলতি বছর এই ফার্মের মূল অর্থকারি ফসল তরমুজ। এখানে বিদেশী বিভিন্ন জাতের বারোমাসি তরমুজ উৎপাদন করা হয়। নতুন প্রজাতির তরমুজ চাষ করে ফলন ভালো হওয়ায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন মধ্য আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিধ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাঈদ।
সরেজমিনে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামে লতা নদীর তীরে গিয়ে দেখা গেছে, দেড় মাস আগে রোপণ করা প্রতিটি গাছে তিন-চারটা করে তরমুজ ঝুলছে। এর মধ্যে কোনোটা এক কেজি, কোনোটা সোয়া কেজি, কোনটা আবার আধা কেজির। কয়েকটি খণ্ডে ভাগ করে আগে পরে করে তরমুজের চারা রোপণ করেছেন। বারোমাসি তরমুজের ভেতরের অংশ হলুদ রঙের। তরমুজ পরিপক্ক হয়ে বিক্রি উপযোগী হতে সময় লাগে ৫৫ থেকে ৬০ দিন। এ ধরনের তরমুজ বাজারে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫টি পুকুরের বাঁধের দুই পাশে মাচা পদ্দতিতে এই তরমুজ চাষ করা হয়েছে। রোপণ থেকে শুরু করে দুই মাসের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়। ফলে দুই মাস পর পর তরমুজ বিক্রি করে স্কুল শিক্ষক সাঈদের কমপক্ষে ৫-৬ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এই জাতের তরমুজের ওজন সাধারণত ২ কেজি থেকে ৪ কেজি হয়ে থাকে।
ফার্মটিতে ঘুরতে আসা নুসরাত জাহান নামে ঢাকা লালমাটিয়া কলেজের ছাত্রী জানান, ‘আমার শশুর বাড়ি এই আজিমপুর গ্রামে। আমি আগেই এই ফার্মটির কথা শুনেছি, তাই আজ দেখতে এসেছি। এখানে দেশি ও বিদেশী নানা ধরনের তরমুজ রয়েছে। এই ফার্মেকে দেখে অন্যরাও চাকুরীর পিছে না ঘুরে নিজেরাই গড়ে তুলুক এই ধরনের ফার্ম এটাই আমার প্রত্যাশা। তরমুজ বাগানে কাজ করা শ্রমিক আবদুল কাদের বলেন, এই র্ফামে আমি ৩ বছর ধরে কাজ করি। নতুন জাতের এই তরমুজ এই এলাকায় প্রথম চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়েছে।
স্কুলশিক্ষক হাসান মাহমুদ সাঈদ বলেন, ‘করোনা আমার জন্য আশির্বাদ, আমার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক মহামরি করোনার সময় টানা দেড়বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে আমি আমার ফার্ম সাজিয়ে ফেলেছি। সারিবদ্ধ মাচায় সৌদি আরবের স্বুস্বাদু ফল সাম্মাম এর আবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত তিন জাতের সাম্মাম যথাক্রমে রিয়া, রকমেলান ও অ্যারোশ সুইট। এছাড়া বিদেশি তরমুজ বেঙ্গল টাইগার, সুইট ব্লাক ও কাণিয়া ফলেছে এই খামারে। এগুলোর বাহ্যিক রূপ দেশী ফলের মতো হলেও স্বাদে আছে ভিন্নতা। সাঈদ গত বছর ২৪ শতাংস জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ আবাদ করে বিক্রিতে আড়াইলাখ টাকা লাভ করেছেন। এবছর ১ একর জমিতে আবাদ করে ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। বীজ বপনের ১৫ দিনের মধ্যে ফুল ধরে এবং ২/৩ মাসের মধ্যে বিক্রযযোগ্য এ ফলগুলো ১২ মাসই আবাদ করা যায়। এছাড়াও তার ফার্মে আবাদ হয়েছে বিদেশী জাতের ব্রোকলি (ফুলকপি), মিষ্টি মরিচ, লেটুস পাতা, রেডবিট (শালগম জাতীয়), টমেটো, আলুবোকরা, লবঙ্গ, ডুবিয়ান (মালয়েশিয়ান ফল) সাদা জাম, আপেল, কমলাসহ দুপ্রাপ্য বিভিন্ন জাতের বিদেশী ফলের চারা। ৫টি মাছের ঘেরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আন্ধারমানিক ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন সরদার খামারটি এলাকার কৃষি ও মৎস্যচাষের জন্য রোল মডেল বলে মন্তব্য করেন। সাঈদের দেখা দেখি আজিমপুর গ্রামের আরেক প্রধান শিক্ষক মো: জাকির হোসেনও একটি ফার্ম করেছেন। জাকির হোসেন জানান, সহকর্মী হাসান মাহমুদ সাঈদ’র কৃষি ও মাছ চাষে লাভ দেখে তিনিও নিজ বাড়িতে আধা একর জমিতে খামার করেছেন। জাকির হোসেন বলেন, ‘চাকরীর আয়ে চেয়ে মাছ চাষ ও কৃষি কাজে আয় অনেক বেশী। শিক্ষিত তরুনরা চাকুরীর আশায় না থেকে এ কাজ তারা যেমন আত্মনির্ভরশীল হবে, দেশও সমৃদ্ধ হবে’।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাইদ এলাকাতে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তার দেখাদেখি আরও অনেক শিক্ষিত তরুনরা এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এটা দেশের বেকারত্ব লাঘবে অনুকরনীয় একটা দৃষ্টান্ত। এব্যাপারে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের খামার বাড়ির অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাওফিকুল আলম বলেন, শিক্ষক সাঈদ গত বছরও অমৌসুমে তরমুজ চাষ করেছেন। এবছরও আরো বড় আকারে এই প্রযেক নিয়েছেন। এই ধরনের চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এদের সার্বিক কল্যানে আমরা কাজ করে থাকি। কৃষকদের পাশে বরিশাল খামার বাড়ি রয়েছে বলে তিনি জানান। ##