২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই শিক্ষার মান নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন পাঠ করলো ৭’শ শিক্ষার্থী

নলছিটিতে দলিল জালিয়াতির অভিযোগ সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে

আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

কায়কোবাদ তুফান : নলছিটিতে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র। বাবার নাম, মায়ের নাম, এমনকি নিজের নামেও ভুল। আইডি নম্বর ও জন্ম তারিখও সঠিক নয়। এসব দেখেও প্রিজাইড গ্রীণ সিটি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানীর কাছে দুটি দলিলে এক একর ৮২ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এমন দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন ঝালকাঠির নলছিটি সাব রেজিস্ট্রার নুরুল আফসার। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও করেছেন জমির প্রকৃত মালিক পক্ষ।

অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া জালিয়াতির সকল কাগজপত্র এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার পূর্বচর দপদপিয়া মৌজার ১৬১ ও ১৬৬ খতিয়ানের ৯৫.৫০ (সাড়ে ৯৫ শতাংশ) শতাংশ জমির রেকর্ডিয় মালিক মোকতার আলী ফকির। তিনি ও স্ত্রী মালেকা বেগমের মৃত্যুতে ওয়ারিশ সুত্রে মালিক তাঁর ছেলে মো. হাসমত আলী। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৪৫ সালের ৭ এপ্রিল। আইডি নম্বর ৪২১৭৩১৫৩৭৮০৭৭। গত ৩০ মে নলছিটি সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে ১৪৬৪ নম্বর সাব কবলা দলিল রেজিস্ট্রি হয়। দলিলে হাসমত আলীর সাড়ে ৯৫ শতাংশ জমি ভুয়া একজন বিক্রেতা জাতীয় পরিচয়পত্র জাল তৈরি করে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় বিক্রির একটি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের নামে। জাল জাতীয় পরিচয়পত্রে জমির বিক্রেতার নাম লেখা রয়েছে হাসমত ফকির। তাঁর বাবার নাম মোক্তার আলী, মায়ের নাম ফুল বানু লেখা। জন্ম তারিখ ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি। আইডি নম্বর ৪২১৭৩১৫৩৯০২১৭। এসব দেখেও যাচাই বাছাই না করেই নলছিটির সাবরেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন।

জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রটি নলছিটি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যাচাই করা হলে কাঞ্চন হাওলাদার নামে এক ব্যক্তির বলে জানানো হয়। মূলত এই কাঞ্চন হাওলাদারের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ঠিক রেখে হাসমত ফকির নিজের ছবি, বাবা মায়ের নাম ও জন্ম তারিখ বসিয়ে জালিয়াতি করেন। সেই জাল জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই নলছিটি সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাছাকাছি ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে সাড়ে ৯৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করা হয় প্রিজাইড গ্রীণ সিটি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানীর নামে। শুধু মো. হাসমত আলীর জমিই নয়, তাঁর বড় ভাই আবুদর রশিদ ফকিরের একই মৌজায় সাড়ে ৮৬ শতাংশ জমি মিনারা বেগম ও মাহামুদ ফকির নামে দুই বিক্রেতা জাতীয় পরিচয়পত্র জাল তৈরি করে ২১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রির একটি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের নামে। গত ১২ এপ্রিল ১৩০৩ নম্বর দলিলটি রেজিস্ট্রি করেন সাবরেজিষ্ট্রার নুরুল আফসার। ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়, উপজেলার পূর্বচর দপদপিয়া মৌজার রশিদ ফকির মৃত্যুবরণ করলে তাঁর সম্পত্তির ওয়ারিশ সূত্রে মালিকহন ছেলে মো. আল মামুন ও মেয়ে সুমনা বেগম। কিন্তু ভুয়া ওয়ারিশ সনদপত্র তৈরি করে মো. মাহামুদ ফকির ও মিনারা বেগম নামে দুই ব্যক্তি এ সম্পত্তির মালিক দাবি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জমি বিক্রি করে দেন। প্রকৃত পক্ষে এই দুইজন ওই জমির মালিক নন। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম রশিদ ফকির ও মাতার নাম ছকিনা বেগম লেখা আছে। দুটি দলিলই লিখে দেন নলছিটির দলিল লেখক মিজানুর রহমান পাপ্পু। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলিল লেখক ও সাবরেজিস্ট্রার মিলে এক একর ৮২ শতাংশ জমি প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জমি দখলে নিয়ে কয়েকটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। জালিয়াতির এ ঘটনা জানাজানি হলে দলিলের বিরুদ্ধে ঝালকাঠির আমলী আদালতে (সি,আর ১৩২/২০২১) গত ২০ জুন একটি মামলা করেন প্রকৃত মালিক সুমনা বেগম। মামলায় সরাসরি সাবরেজিস্ট্রার নুরুল আফসারকে আসামি করা না হলেও বিবরণে তাঁর মাধ্যমে জালিয়াতির বিষয়টি লেখা রয়েছে। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়। এরা হলেন, প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মঞ্জু ফরাজী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহেদুর রহমান প্রিন্স, ম্যানেজার মো. কামরুল ও দলিল লেখক মিজানুর রহমান পাপ্পু। আদালত মামলাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নলছিটি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

জমির সাড়ে ৯৫ শতাংশের মালিক হাসমত আলীর ছেলে মেহেদি হাসান অভিযোগ করেন, আমার বাবার জমি। তাঁর আইডিকার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) জাল করে অন্য লোক সাজিয়ে দলিল করে বিক্রি করে নেয়। আমার চাচার জমিও জালিয়াতি করে নিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে দলিল লেখক, সাবরেজিস্ট্রার ও যারা কিনেছেন সবাই জড়িত। আমাদের জমি আমাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ও দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এই জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে। আবুদর রশিদ ফকিরের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার ছেলে ও মেয়ের নামের জমিও পাপ্পু ভেন্ডার ও সাবরেজিস্টার দলিল করে প্রিজাইড গ্রীণ সিটি লিমিটেডকে দিয়ে দিছে। আমরা তাদের সাথে গোযাগোগ করলে বলে মিমাংসা করে ফেলবো। কিন্তু তা করছেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলিল লেখক মিজানুর রহমান পাপ্পু বলেন, বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। জাল জালিয়াতির বিষয়টি আদালতই ফয়সালা করবেন। এখানে আমার কোন বক্তব্য নেই। প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের ম্যানেজা মো. কামরুল বলেন, দপদপিয়া এলাকার সাইদুল ডাক্তার (পল্লী চিকিৎসক) প্রতারণা করে এই জমি বিক্রি করেছেন। বিষয়টি আমরা জানার পরে প্রকৃত মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিষয়টি অচিরেই মিমাংসা হয়ে যাবে।
নলছিটির সাবরেজিস্ট্রার নুরুল আফসার বলেন, আমি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে পারি না। এটা যেহেতু কোর্ট পর্যন্ত চলে গেছে, এখানে আমার নাক গলানোর কিছুই নাই। আমি এখন এজলাসে আছি, বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলবো। জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুল বারী বলেন, সাবরেজিস্টারের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, আদালতের আদেশ আমরা পেয়েছি। জাল জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত চলছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network