১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

শিরোনাম
হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই শিক্ষার মান নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন পাঠ করলো ৭’শ শিক্ষার্থী “আইএইচসিসিসি কতৃক বিসিএস ক্যাডারদের সংবর্ধনা প্রদান” নিখোঁজের দুই দিন পর পুকুরে শিশু হাবিবার মরদেহ উদ্ধার “ছাত্রলীগ নেতাকে হল থেকে বহিষ্কার”

গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধা সেজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলণের অভিযোগ

আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

গৌরনদী প্রতিনিধি
নামের সাথে মিল থাকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারীর যোগসাজসে অবসরপ্রাপ্ত এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সেজে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা উত্তোলন করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল গ্রামের।
ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরুল ইসলামের পুত্র মোঃ নাছির জানান, আমার পিতা নুরুল ইসলাম একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২০০৪ সালে উপজেলা ভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই সভায় চুড়ান্তভাবে তালিকাভূক্ত হয়। যাহার বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৩৪৯৩, লাল বই মুক্তিবার্তা নং-০৬০১১০০৬৮২, সাময়িক সনদ নং ম-১২৬১৯২, এমআইএস নং-০১০৬০০৩৯৪৮। সোনালী ব্যাংক গৌরনদী শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং-০৩১২১০০১৪০৫৯ এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন।
নাছির বলেন, ২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশিত হলে আমার পিতা নুরুল ইসলামের পিতার নাম মৃত আমজেদ আলী হাওলাদারের স্থানে ভুলক্রমে মৃত মোসলেম উদ্দিন ছাপা হয়। যা পরবর্তীতে ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়। ২০২০ সালের ৮ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মৃত্যুবরন করার পর ২৪ আগস্ট পিতার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে কাগজপত্র জমা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আমার পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা আমার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-০৩১২৯০১০১৯৬৬৬ এর মাধ্যমে উত্তোলন করে আসছি।
নাছির আরও বলেন, এরইমধ্যে এমআইএস ফরমের ভুলক্রটি সংশোধনের জন্য অনলাইন থেকে পূনরায় ফরম উত্তোলন করতে গিয়ে এমআইএস ফরমে অপরিচিত লোকের ছবি দেখতে পাই। এর কিছুদিন পর আমার পিতা নুরুল ইসলামের নামধারী সরিকল নিজামউদ্দিন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক ও মুলাদী উপজেলার গাছুয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম আমার পিতার গেজেট নম্বর দিয়ে সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন।
মুক্তিযোদ্ধার পুত্র দিনমজুর নাছির অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী নুরুজ্জামানের যোগসাজসে ইতোমধ্যে ওই ভূয়া ব্যক্তি আমার পিতার আট মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে নিয়েছে। বর্তমানে আমার (নাছির) পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ থাকায় চলতি বছরের ১৭ আগস্ট বিষয়টি সমাধানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বরাবরে আবেদন করা হয়। মন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন।
নাছির আরও বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উভয়পক্ষকে শুনানীতে অংশগ্রহনের নির্দেশ প্রদান করলে অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক নুরুল ইসলাম ভূয়া হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। এরপর সে (নুরুল ইসলাম) স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় তাকে (নাছির) বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে নাছির বলেন, দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সম্মানি ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন আমি চরমভাবে মানববেতর জীবনযাপন করছি।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের সহযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন, আবুল কাসেম ও মতিউর রহমানসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা জানান, নুরুল ইসলাম একজন প্রকৃত ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা। শুধু নামের মিল ও এমআইএস ফরমে ভুল থাকায় মুলাদী থেকে অন্য একজন নুরুল ইসলাম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে সরিকলের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়ে তার পরিবারকে হয়রানি করছে। তারা আরও জানান, মুলাদী থেকে এসে মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার নুরুল ইসলাম সরিকল এলাকায় যুদ্ধ করেননি। সে কিভাবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তারা ওই ভূয়া ব্যক্তির শাস্তির দাবী করেন।
সরিকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, নাছিরের পিতা নুরুল ইসলাম একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। প্রতারনার কারণে দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ থাকায় অসহায় ওই পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কখনো কোনদিন শুনিনি নিজামউদ্দিন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক নুরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখন তিনি কিভাবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবী করছেন তা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি (ইউপি চেয়ারম্যান) সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হয়রানীসহ অন্যান্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক ও মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেন। গৌরনদী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী নুরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে নাছিরের আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। উভয়ের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network