১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা ঘোষণার এখনই সময়

আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ডেস্ক নিউজ ঃ
গত শুক্রবার রাতে শরীরে হালকা ব্যথা অনুভূত হয় আবু হাসানের। পরদিনই মনে হয় হালকা জ্বর, সঙ্গে একটু অস্বস্তি। আবু হাসান প্রথমে এটাকে আবহাওয়ার বদলের প্রভাব বলে মনে করেন। কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে চাইলে কোথায় করাবেন সে ভাবনায় পড়েন। বেসরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ফি ৩ হাজার টাকা, আর সরকারিভাবে পরীক্ষায় ভোগান্তির ‘শেষ নেই’। ‘লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার মতো’ বিষয় উল্লেখ করে আবু হাসান বলেন, ‘ওই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানেইতো করোনায় সংক্রমিত হওয়া!’

আবু হাসানের মতো অনেকেই এ সময়ে সর্দি, কাঁশি ও জ্বরে আক্রান্ত হলেও করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। নমুনা পরীক্ষায় অনীহার কারণ বেসরকারি হাসপাতালের উচ্চ ফি আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি।
এরপর সে বছরই ২০ আগস্ট পরীক্ষার হার ফের কমায় মন্ত্রালয়। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে জানানো হয়, বুথ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী থেকে সংগ্রহ করা নমুনার জন্য ১০০ টাকা এবং বাসা থেকে সংগ্রহ করা নমুনার জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে উল্লেখ করে পরিপত্রে আরও বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও গরিব রোগীদের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত সরকারি আদেশ বলবৎ থাকবে।

এরপর গত বছরের ১৯ জানুয়ারি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১০০ টাকা ফি-এর পরিবর্তে পুনরায় বিনামূল্যে টেস্ট করানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার সুপারিশ একাধিকবার দিয়েছে কমিটি। কিন্তু সেটা করা হয়নি।

এদিকে, গতকাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) বর্তমানে রোগী শনাক্তের ঊর্ধ্বগতির হার জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন অধিদফতরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, ‘ধারায় বৃদ্ধি হচ্ছে তা না, প্রোগ্রেসিভলি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেটা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং।’

পুরো ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৫৮৮ রোগী শনাক্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে জানুয়ারির মাত্র ১১ দিনে ১২ হাজার ৮৫০ জন শনাক্ত হয়েছেন। অনেকেই টেস্ট করাচ্ছেন না। সবাই যদি টেস্ট করতেন এবং সংক্রমিত সিম্পটোমিক যেসব রোগী আছেন, তাদের সবাইকে টেস্ট করলে হয়তো সংখ্যাটা আরও অনেক বাড়তে পারতো।’

দেশের নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর যেখানে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা, সেখানে টাকা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাবে তারা—এ চিন্তা করাও অকল্পনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের জন্য সরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা ফ্রি করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ঢাকা শহরসহ বড় বড় শহরগুলোর বস্তি এলাকায় সরকারিভাবে টেস্ট করানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রকৃত সংক্রমণের চিত্র আমাদের সামনে আসবে না।’

একাধিকবার করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করা উচিত বলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হলেও সেটা হয়নি এবং এটা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন, ‘দেশের বেশিরভাগ মানুষই নিম্নবিত্ত। এই নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীকে বিনা পয়সায় পরীক্ষা করোনার সুবিধা প্রদানের পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া প্রয়োজন। নয়তো করোনায় সংক্রমিত মূল চিত্র আমরা কখনোই পাবো না, আর সংক্রমণের মূল চিত্র না পাওয়া গেলে ব্যবস্থাপনাতেও তার প্রভাব পড়বে। জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবে সরকারের কাছে ফের আবেদন করছি, পরীক্ষার ফি না রেখে বিনামূল্যে করার জন্য।’

জাতীয় কমিটি বেশ আগেই বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা করা জন্য সুপারিশ করেছিল এবং সেটা একাধিকবার জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বর্তমান উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশেষ করে যেখানে ঘনবসতি এলাকা। সংক্রমণের বর্তমান যে ঊর্ধ্বগতি চলছে, তাতে বিনামূল্যে সবাইকে করোনার পরীক্ষা করানোর জন্য সাধারণ নির্দেশ দিয়ে দেওয়া উচিত, এখন সে সময় এসেছে। তবে যদি কেউ মূল্য দিতে চায়, সেটা অপশনাল হিসেবে রাখা হবে, তবে সেটাও ১০০ টাকার বেশি না।’মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোর লাইনগুলোতে একটু ব্যবস্থাপনার দরকার রয়েছে এখানে। আমি সবসময়ই বলি, হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে করোনার সংক্রমণ ছড়ানো প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিসম্পন্ন স্থান। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নিয়মিত দেখভাল করা দরকার, প্রয়োজনে সহযোগিতা করার দরকার। মানুষ যেন উৎসাহ নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসে—সে ব্যবস্থা এখনই করতে হবে।’

অথচ দেশে করোনার ঊর্ধ্বগতি চলছে। এই সময়ে যতো মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা যাবে ততোই বেশি রোগী শনাক্ত হবেন। তাতে করে রোগী ব্যবস্থাপনার আওতায় আসবে। নয়তো সংক্রমিত হয়েও কেবল শনাক্ত না হওয়ার কারণে ‘আক্রান্ত নন’ ভেবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন। আর তাতে করোনার অতিসংক্রমণশীল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবেন হাজার থেকে লাখো মানুষ। যেটা দেশের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চরম প্রভাব ফেলবে, সংকটে পড়বে দেশ ও দেশের মানুষ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা কঠিন হবে। তাই করোনার নমুনা পরীক্ষা যেন মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো সামনে চরম বিপর্যয়।

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের তাণ্ডবের মধ্যে দেশে প্রতিদিনই শনাক্ত রোগী এবং হার আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত ১২ জানুয়ারি নতুন করে করোনা শনাক্ত হন ২ হাজার ৯১৬ জন। আর এ সময়ে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন শনাক্ত হওয়া ২ হাজার ৯১৬ জনকে নিয়ে মহামারির দুই বছরের মাথায় এসে দেশে করোনায় শনাক্ত হওয়া রোগী সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেলো।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর ঠিক ১০ দিন পর করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। সে সময় করোনার পরীক্ষা হচ্ছিল বিনামূল্যেই। পরে সে বছরের ২৯ জুন পরীক্ষা করার জন্য ফি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘সরকারের অনেক খরচ হচ্ছে। একটা টেস্ট করতে বেসরকারিভাবে আমরা বেঁধে দিয়েছি ৩ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু আসলে ল্যাব বসানোর খরচ, যন্ত্রপাতির খরচ, এগুলো যদি ধরা হয় আরও বেশি পড়ে। এখন তো টেস্টের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজারের কাছে চলে গিয়েছে, প্রতিদিন অনেক টাকা খরচ হয়।’

আর ২৮ জুন ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) টেস্ট বিনামূল্যে হওয়ার ফলে অধিকাংশ মানুষ উপসর্গ ছাড়াই পরীক্ষার সুযোগ গ্রহণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় টেস্ট পরিহার করার লক্ষ্যে ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। তাতে হাসপাতালে গিয়ে নমুনা জমা দিলে ২০০ আর বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network